ঢাকা : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে অস্বস্তি থাকলেও তাকে সরিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান জানিয়ে বিএনপি বলেছে, যে প্রক্রিয়ায় তাকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তাতে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে। এতে করে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে। যেটা বিএনপি চাচ্ছে না।
কারণ দলটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে দেশে অনুষ্ঠিত হয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে। এ কারণে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে হুট করে কিংবা তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে নয় বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্য রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দেননি।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কোনো সাংবিধানিক সংকট নয়, দেশে এখন একটি নির্বাচন প্রয়োজন।’
বিএনপি সূত্র বলছে, বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়াই উত্তম। তবে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিতে হলে জাতীয় ঐকমত্যের দরকার বলেও মনে করে বিএনপি। তবে দলটির প্রশ্ন, রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়ার পর কে হবেন নতুন রাষ্ট্রপতি?
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার এই ইস্যুতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একই ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করেছে বিএনপি। এ বৈঠক ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের একাধিক সূত্র বলছে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের প্রতি বিএনপির বিশেষ কোনো সহানুভূতি নেই। তবে এ ইস্যুতে এই মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হোক, এটা বিএনপি চায় না।
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও বুধবার বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকবেন কী থাকবেন না, এ প্রশ্নটি এই মুহূর্তে কোনো আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়। এটি একেবারেই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’ তিনি বেশ পরিষ্কার করেই বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে একটি গণমাধ্যমে দেওয়া মন্তব্যের পর রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ওঠে। মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাঁচ দফা দাবি জানায়। ইনকিলাব মঞ্চসহ অন্য সংগঠনগুলো বঙ্গভবন ঘেরাও করে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলে যায় বুধবার সকালে। ওইদিন বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।
সেখান থেকে বেরিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, দেশে এই মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরি হোক, তা চায় না বিএনপি।
বিএনপি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতারা গত দুদিনে দুই দফা জরুরি বৈঠক করেন।
ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো রোডম্যাপ দিচ্ছে না কিংবা দিতে পারছে না। তাদের পরিকল্পনা আসলে কী? তারা কি এক বছর থাকবে, নাকি পাঁচ বছর থাকবে?
যে কারণে বিতর্কগুলো সামনে আসছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গত কয়েক দিনের ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করেছে দলটি। এতে যেভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেটি নিয়েই তাদের সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
এর পরপরই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি, বঙ্গভবন ঘেরাওসহ হঠাৎ ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় সেই সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে।
দলের নেতারা মনে করছেন, পুরো প্রক্রিয়া নিয়েই দুরভিসন্ধি আছে। যে প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতিকে সরানোর কথা বলা হচ্ছে, তাতে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হতে পারে। রাষ্ট্রপতিকে সরানোর পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার প্রক্রিয়া কি না দলটি এমন সন্দেহও করছে।
এর আগে বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির পদটা সাংবিধানিক পদ। এ পদে হঠাৎ করে শূন্যতা রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যদি গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত হয়, তা জাতির জন্য কাম্য নয়।’
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে বৈঠকে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু।
জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘বৈঠকে রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া রাষ্ট্রপতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে প্রধান উপদেষ্টাকে পরামর্শ দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। সেটি হলে জোরালো প্রতিবাদ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
পর্যালোচনা করছে জামায়াত : জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি অপসারণের বিষয়ে যে উদ্যোগ চলছে, তা আমরা পর্যালোচনা করছি। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাব।’
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে গত এপ্রিলে শপথ নিয়েছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। তখনকার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। তবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর তালিকায় তার নাম ছিল।
এমটিআই