• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
চলতি মাসে সব কাজ শেষের পরিকল্পনা

সংসদ ধোয়া-মোছায় তোড়জোড়


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ৩, ২০২৪, ১১:১৫ এএম
সংসদ ধোয়া-মোছায় তোড়জোড়

ঢাকা : সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যরা কেউ জেলে আবার কেউ আত্মগোপনে। নেই নির্বাচন কমিশনও (ইসি)। শিগগিরই নতুন নির্বাচন আয়োজনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এরপরও সংসদ ভবন ও সদস্যদের বাসস্থান ধোয়া-মোছা এবং সংস্কারে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

চলতি মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ করতে চায় গণপূর্ত অধিদপ্তর। তবে এত আগে এসব সংস্কার নতুন সংসদ গঠন ও অধিবেশন বসার পর তেমন কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, যদি সংসদ ভবনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অবকাঠামোর কোনোকিছু ক্ষতিগ্রস্ত থাকে তাহলে তা মেরামত করা যেতে পারে। কিন্তু এখনো যেহেতু নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হয়নি, তাই ধোয়া-মোছাসহ সংস্কারের বিভিন্ন খাতে অর্থ খরচ কোনো সুফল বয়ে আনবে না। নির্বাচন বিলম্বিত হলে, তখন ফের এসব কাজ করতে হবে। এমনকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও এই কাজগুলো করা যেতে পারে। কেননা তফসিল ঘোষণার পরও ভোটগ্রহণের জন্য তিন মাস সময় থাকে। আর দরপত্র অনুযায়ী ধোয়া-মোছা ও সংস্কারকাজের সময় মাত্র এক মাস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগ-১ শাখা থেকে সংসদ ভবনের পানির লাইন, দরজা-জানালা থেকে শুরু করে এমপি হোস্টেলের স্যুয়ারেজ লাইনের বিশেষ মেরামত এবং ‘হাইজেনিক ওয়াশ’-এর জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, সংসদ কার্যকর না থাকার সুযোগে ‘আওয়ামী প্রকৌশলীদের’ পুরনো সিন্ডিকেট সংস্কার ও ধোয়া-মোছার নামে নিজেদের পকেট ভারী করার আয়োজন করেছে। নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ করে পছন্দের ঠিকাদারদের মাধ্যমে জনগণের টাকা নয়ছয় করার চেষ্টা চলছে। দেশের অর্থনীতি যখন চাপে রয়েছে তখন এমন লুটপাট ও অপচয় বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এ খবর জানাজানি হতেই দ্বাদশ সংসদের বেশিরভাগ সদস্য আত্মগোপনে চলে যান। রাষ্ট্রপতি সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। কিছুদিন পর দায়িত্ব ছেড়ে দেন চার নির্বাচন কমিশনারও। এখনো নির্বাচন কমিশন গঠন হয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেশ কয়েক দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করলেও এখনো নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঠিক করতে পারেননি। তবে মাসখানেক আগে আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ১৮ মাস পর নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন। সেই হিসাব করলেও নির্বাচনের এখনো দেড় বছরের মতো বাকি।

অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কাঠামোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সংস্কারেও একটি কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে নির্বাচন কমিশনেও প্রয়োজনীয় সংস্কার হবে বলে জানা গেছে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিকে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সবমিলিয়ে দ্রুতই যে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না তা অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

এমন পরিস্থিতিতে সংস্কার ও ধোয়া-মোছার নামে সরকারি টাকা অপচয় না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হলেও সংসদ ধোয়া-মোছার কাজ করা যাবে। কেননা ভোটের অন্তত ৩ মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ এবং সরকারের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সংসদ ভবন সংস্কার ও ধোয়া-মোছা করতে পারে। কিন্তু লক্ষ রাখতে হবে মেইনটেন্যান্সের নামে যাতে অপচয় বা চুরি না হয়।’

সংসদ ভবনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অবকাঠামোর সংস্কার ও ধোয়া-মোছা সংক্রান্ত গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা-১ বিভাগের (শেরেবাংলা নগর) আহ্বান করা বেশকিছু দরপত্রের অনুলিপি হাতে এসেছে।

এসব দরপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেগুলো গত মাসের শুরু এবং মাঝামাঝি সময়ে আহ্বান করা হয়েছে। আর এসব কাজ গত ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।

সংসদ সদস্যদের থাকার ১/২০২, ১/৪০২, ১/৮০২, ৩/৮০৪, ৪/২০২, ৪০৩, ৭০১, ৮০৩, ৯০৩, ৫ /১০১, ৩০১,৮০৩, ১ /১০১,১ /৭০১, ১ /৩০২,১ /৫০২, ১ /৮০৩, ১ / ৩০৪, ১ /৪০৪,১ / ৫০৪, ১ / ৮০৪, ৩ / ৭০২, ৩ /৪০২ এবং ৩ /৫০৩ নম্বর ফ্ল্যাটসহ ২৪টি ফ্ল্যাটের হাইজেনিক ওয়াশিং এবং বিশেষ মেরামতকাজের জন্য ২৮ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। অন্য আরেকটি দরপত্রে ধোয়া-মোছার জন্য আরও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদের পানির লাইন ও স্যুয়ারেজ লাইনের বিশেষ মেরামতে ৫ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

সংসদ ভবনের ভেতরের বিভিন্ন ব্লক হালকা কোট মেরামত, পয়েন্টিং পরিষ্কার, দরজা-জানালা মেরামত এবং বিভিন্ন মেঝে পলিশিংসহ অন্যান্য সংস্কার কাজে ৬ লাখ টাকা এবং পাইপলাইন মেরামত ও বিভিন্ন সময়ে ফুটো হওয়ার কারণে পাইপ প্রতিস্থাপনের কাজে ৭ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

পলিশিং, স্যানিটারি ফিটিং পরিবর্তন, এমপি হোস্টেলে তালা দেওয়া, পেইন্টিংসহ আনুষঙ্গিক কাজ ৫ লাখ টাকা এবং এমপি হোস্টেলে টাইলিং, স্যানিটারি ফিটিংস পরিবর্তন, পেইন্টিং, কাঠের কাজসহ আনুষঙ্গিক মেরামতে আরও ১৮ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

সংসদের দক্ষিণ-পূর্ব ব্লকে প্যান্টি রুমের টাইলস ও সিঙ্ক পরিবর্তন, দরজা পরিবর্তন এবং আনুষঙ্গিক মেরামতসহ জিআই পাইপ পরিবর্তনে ৮ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তা ছাড়া গণপূর্তের ঢাকা বিভাগ-১-এর অধীনে ওটিএম পদ্ধতিতে আরও প্রায় ৪ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান সবুজকে গত ১ অক্টোবর সিলেটে বদলি করা হয়েছে। বদলির আদেশ হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে সংস্কার ও ধোয়া-মোছার কাজের দরপত্র আহ্বানকে সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেকেই।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ওটিএম পদ্ধতিতে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে প্রায় ৮ কোটি টাকার কাজ করিয়েছেন এই প্রকৌশলী। যেখান থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলেন, জাতীয় সংসদ ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অবশ্যই ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে ‘অপ্রয়োজনীয়’ এই সংস্কার বেশি দিন টিকবে না এবং ধোয়া-মোছাও কোনো সুফল দেবে না। এসব খাতে কোটি টাকা খরচ করার কোনো প্রয়োজন নেই।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার দেশের বাইরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ বলেন, ‘এখানে (সংসদে) একটি অফিস হওয়ার কথা ছিল। তা ছাড়া একটি ভবনে সেনাবাহিনী উঠেছে, আরেকটি ভবন অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে।’ সূত্র : দেশ রূপান্তর

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!