ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় বাড়ি তৈরির নকশায় সংস্থাটির অনুমোদন নিতে হয়। নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের দেখভাল, ভূমি ছাড়পত্র, প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রি, হস্তান্তর, নামজারি, আমমোক্তারনামা, মালিকানা জালিয়াতি সব ক্ষেত্রেই চলে দুর্নীতি। টাকা ছাড়া কোনও সেবাই পাওয়া যায় না। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা মিলে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত অর্ন্তবর্তী সরকার গঠনের পর শাস্তির আওতায় আসছে দুর্নীতিবাজ এসকল কর্মচারীরা। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৩ মাসে ৬ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সংস্থাটি। ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে দুর্নীতিবাজ এই সিন্ডিকেটের ৪ সদস্যকে। যাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন সময়ে বিভাগীয় মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। রাজউক সূত্রে এসকল তথ্য জানা গেছে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আদিলুর রহমান খান। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজউকের দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যেগ নেন। এরই মধ্যে একজন কর্মকর্তাকে রাজউকের সদস্য (প্রশাসন) পদে পদায়ন করা হয়। অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ৩ মাসের মধ্যে দুর্নীতিবাজ ও অনিয়মের অভিযোগে ৬ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে ২৩ জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় ঢাকার বাইরে বদলি করা হয় ৪ জন প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে।
ঢাকার বাইরে বদলি করা কর্মচারীদের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৪ নভেম্বর রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্র-১) দপ্তরের ইমরাত পরিদর্শক কাজী মো: আমীর খসরুকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়। ২০০৮ সালে একটি বিভাগীয় মামলায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। একই অর্ডারে নির্বাহী প্রকৌশলী (বৈদ্যুতিক-২) এর দপ্তরের পাম্প চালক জাহাঙ্গীর আলমকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়। গত বছর এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ২৭ অক্টোবর প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে রাজউকের উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) এর দপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নুরুল আলম হেলালকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়। এই কর্মকর্তা গত ২০২০ সালে এক নারীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করলে তাকে গ্রেফতার করে খিলগাও থানা পুলিশ। পরিচালক (আইন) এর দপ্তরের সাটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর শরিফ উদ্দিনকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়।
এছাড়াও গত তিন মাসে আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জনৈক শামছুদ্দিন এর নিকট থেকে ১ লক্ষ টাকা দাবী করার অভিযোগে গত ৫ নভেম্বর প্রশাসন শাখার অফিস সহায়ক সামচুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ করেও সেল পারমিশনের কাজ করে না দেওয়ার অভিযোগে গত মাসের ২৮ তারিখে প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের অফিস সহায়ক মো: আমিনুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা রজু করা হয়। হাজী মো: গিয়াস উদ্দীন ঢালীর প্লটে নকশা অনুমোদনের চুক্তিবদ্ধ ৭০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করার অভিযোগে সহকারী অথরাইজড অফিসার সুরোত আলীকে গত ৫ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জোন-৬ এর পরিচালক কামরুজ্জামান বিভাগীয় মামলাটির তদন্ত করছেন। একই মামলায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পরিচালক (জোন-৩) এর নক্সাকার আলমগীর কবীরকে। নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিনা আফরিন বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন করতে অস্বীকৃতি জানালে অসংলগ্ন আচরণ, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গত ২১ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) আক্তারুজ্জামান খানকে। রাজউক চেয়ারম্যানের সাথে অশোভন আচরণ ও সমন্বয় সভায় অনুপস্থিতির অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে জোন-৭ এর পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) ড. মো: আলম মোস্তফা বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজউককে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা বদ্ধ পরিকর। আমরা আশা করছি খুব শীগগিরই রাজউক দুর্নীতিমুক্ত এবং জন সেবামুলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
এসআই/আইএ