• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ জানুয়ারি, ২০২৫,
ফিরে দেখা-২০২৪

বিদায়ী বছরে আলোচিত যেসব ঘটনা দেখল ফুটবল বিশ্ব, ব্রাজিলের কান্না


মো. আতিকুর রহমান ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম
বিদায়ী বছরে আলোচিত যেসব ঘটনা দেখল ফুটবল বিশ্ব, ব্রাজিলের কান্না

ঢাকা: দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল আরো একটি বছর। পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার অপেক্ষায় বিশ্ব।

বছরের শেষ ভাগে এসে প্রায় সব বিভাগ নিয়েই শুরু হয়েছে সালতামামির প্রস্তুতি। এরই মধ্যে ফুটবল মঞ্চে বছরের সেরা খেলোয়াড় ও আলোচিত ঘটনাগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আয়োজনও। সবমিলিয়ে বিশ্ব ফুটবলে বিদায়ী বছর কেমন কাটল, সেটি তুলে ধরা হলো সোনালীনিউজের পাঠকদের সামনে।

প্রতি বছর, প্যারিসের দুটি থিয়েটারের আলোর নীচের রাত আন্তর্জাতিক ফুটবল ইতিহাসের সারাংশ। স্প্যানিশ তারকা ও ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার রদ্রি ক্রাচে উঠে ইউরোপের সর্বোচ্চ পুরস্কার ব্যালন ডি'অর গ্রহণ করেন। রোদ্রির জন্য আনন্দের রাত হলেও ভিনিসিয়ুসের জন্য সেই রাত ছিল বিষাদের।

রিয়াল মাদ্রিদের এই ব্রাজিলিয়ান তারকা আগের রাত পর্যন্ত জানতেন যে জয়ের মুকুট মাথার ওপরে উঠছে। কিন্তু কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল। ফুটবলের সবচেয়ে সম্মানের পুরস্কারটি পাওয়া হয়নি তার। পরে অবশ্য ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কার হাতে নিয়ে হয়তো একটু ভুলেছেন সেই বেদনা। ফুটবল তো এ রকমই-আনন্দের ভৈরবীর পাশেই বেদনার বেহাগ। কোপা আমেরিকা জিতে আর্জেন্টিনা আর ইউরোর ট্রফি পেয়ে স্পেন মেতেছে আনন্দে।

অন্যদিকে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বছরটি কেটেছে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খেয়ে। টানা দ্বিতীয় ফাইনাল খেলেও ইংল্যান্ডের জন্য অধরাই থেকে গেছে ইউরোর ট্রফি। এছাড়া এই বছরই গিনিতে ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে প্রাণ হারান শতাধিক মানুষ।

হিসাব তো এমনই-কারওটা মিলবে, কারওটা মিলবে না। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যেমন ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৯০০ গোলের রেকর্ড গড়ে এক হাজারের হিসাব মেলানোর চেষ্টায়। সব হিসাব মিলিয়ে ফুটবলের পাট চুকিয়েছেন টনি ক্রুস, আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন আনহেল ডি মারিয়া। হিসাবে অমিল রেখেই আবার জাতীয় দলকে বিদায় বলে দিয়েছেন জার্মানির টমাস মুলার ও ম্যানুয়েল নয়্যার।

হিসাব কি মেলাতে পারছেন পেপ গার্দিওলাও? সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সর্বশেষ ১২ ম্যাচের ৯টিতে হেরে গত মৌসুমের লিগ চ্যাম্পিয়ন কোচ ভাবছেন-এ কী হলো! চোখ বুলিয়ে নিন বিশ্ব ফুটবলের আলোচিত সব ঘটনার দিকে। 

Caption

১. আর্জেন্টিনার  কোপা জয়
চলতি বছরই কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা ধরে রাখে আর্জেন্টিনা। প্রথম ও দ্বিতীয়ার্ধে গোল শূন্য থাকায় অতিরিক্ত সময়ে খেলা গড়ালে ১১২ মিনিটের গোলের মুখ দেখে আর্জেন্টিনা। এই জয়ে টানা দুইবার শিরোপা জেতাসহ মোট ১৬ বার কোপার শিরোপা ঘরে তুললো লা আলবিসেলেস্তেরা। এর আগে আর্জেন্টিনার সমান ১৫টি শিরোপা জিতেছিল উরুগুয়ে।

Caption

২. স্পেনের ইউরো জয় 
স্পেন তাদের স্বপ্নের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ পূরণ করেছে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে। একই সময়ে, কেনরা পরপর দুটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হেরে যায়। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত ফুটবল খেলা স্পেন বার্লিনে ফাইনালেও দুর্দান্ত পারফর্ম করেছিল। ফলশ্রুতিতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ শিরোপা ঘরে তোলে তারা।

Caption

৩. ব্রাজিলের ব্যর্থতার গল্পের আরো এক বছর
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্যারাগুয়ের কাছেও হারতে হয়েছে ব্রাজিলকে। এই হার কোনো অঘটন নয়, দরিভাল জুনিয়র দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর থেকেই ব্রাজিলের এই তথৈবচ অবস্থা। ২০০৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৭১ ম্যাচ খেলে মাত্র ৫ ম্যাচে হেরেছিল ব্রাজিল। কিন্তু এবার একটি আসরের (২০২৬ বিশ্বকাপ) বাছাইয়ে ৮ ম্যাচের ৪টিতেই হেরে গেছে  পাঁচবারের বিশ্বজয়ীদের!

Caption

৪. গিনিতে ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে মৃত্যু 
ফুটবল, যেই খেলাটি গোটা বিশ্বকে এক সুতোয় গাঁথার কথা। বিশ্বজুড়ে সম্প্রতি ও শান্তির বার্তা ছড়ানোর কথা। সেই খেলাকে কেন্দ্র করেই এবার ঘটে গেল মর্মান্তিক এক ঘটনা। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনির দ্বিতীয় বৃত্ততম শহর এন’জেরকোরে এক ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে ১০০ জনের বেশি নিহতের ঘটনা ঘটে।

Caption

৫. ৯০০ গোলের মাইলফলক রোনালদোর 
আল নাসরের হয়ে সৌদি প্রো লিগের ম্যাচেই ৮৯৯ গোলে পৌঁছে গিয়েছিলেন পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মঞ্চটা তাই প্রস্তুতই ছিল। উয়েফা নেশনস লিগের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩৪ মিনিটে গোল করে রোনালদো পৌঁছে যান কাঙ্ক্ষিত সেই মাইলফলকে। পতুর্গালের ২-১ গোলে জেতা ম্যাচ দিয়েই 'সিআর সেভেন' হয়ে যান ৯০০ গোলের মালিক।

Caption

৬. তারকাদের অবসর 
এই বছরই ফুটবলের অনবদ্য ক্যারিয়ারকে বিদায় জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন তারকা। তারা হলেন, জার্মান গোলপোস্টের দেয়ালখ্যাত নয়্যার, জার্মান স্ট্রাইকার থমাস মুলার, বর্তমান ফুটবল বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার খ্যাত টনি ক্রুস, আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রাণভোমরা আনহেল ডি মারিয়া, উরুগুয়ের তারকা ‍লুইস সুয়ারেজ, ইতিহাসের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার স্প্যানিশ তারকা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, আরেক সেরা মিডফিল্ডার জার্মানির ইলকায় গুন্দোয়ান, ফ্রান্সের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলকরা অলিভিয়ের জিরুদ, সুইজারল্যান্ডের জেরদান শাকিরি, ভারতীয় ফুটবলের পোস্টারবয় সুনীল ছেত্রী, উরুগুয়ে ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা এডিনসন কাভানি, ফরাসি ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানে ও পর্তুগালের কিংবদন্তী ডিফেন্ডার পেপে’।

Caption

৭. রদ্রির ব্যালন ডি’অর
এবারের ব্যালন ডি’অরকে ঘিরে আয়োজনের কমতি ছিল না। উয়েফার সঙ্গে মিলে ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা ছিল ফ্রেঞ্চ ফুটবলের। এক দশক আগেও ব্যালন ডি’অরকে ঘিরে যে পরিমাণ উত্তেজনা আর আলোচনা ছিল, সেটা কমে গেছে অনেকটাই। প্রথমবারের মতো মেসি-রোনালদো ছাড়া ব্যালন ডি’অর, তাতে সেই পুরোনো আলোচনা–উত্তেজনা সবটাই যেন ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল তারা। কয়েক বছর ধরে ব্যালন ডি’অর উত্তেজনায় একটু ভাটা পড়েছিল বটে। আগে থেকেই বিজয়ীদের জানিয়ে দেওয়া, সাক্ষাৎ নেওয়া। যতই গোপনীয়তা রক্ষা করার চেষ্টা করা হোক না কেন, জানাজানি হয়েই যেত। তাই এবারের আয়োজন ছিল নিশ্ছিদ্র, খাম খোলার আগে জানার উপায়ই ছিল না কে হতে যাচ্ছেন গত মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়।

সবার নজর ছিল রিয়াল তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের দিকে। গত মৌসুমে সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন ২৪ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান। কার্যত একাই রিয়াল মাদ্রিদকে এনে দিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। গোলের দেখা পেয়েছেন ফাইনালে, হয়েছেন প্লেয়ার অব দ্য ফাইনাল ও টুর্নামেন্ট। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে জিতেছেন লা লিগা, স্প্যানিশ সুপারকোপা। দর্শক-সমর্থক থেকে শুরু করে ফুটবল-পণ্ডিত-সবার পছন্দ ছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। এমনকি খোদ ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলাও ধরে নিয়েছিলেন, ট্রফি উঠতে যাচ্ছে ভিনিসিয়ুসের হাতেই। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে ব্যালন ডি’অর নিজের করে নেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রিগো হার্নান্দেস কাসকান্তে।

Caption

৮. ভিনির ‘ফিফা দ্য বেস্ট’ পুরস্কার 
ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার ‘ফিফা দ্য বেস্ট’ ট্রফি জিতে নেন ব্রাজিল ও রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। কাতারের দোহায় জমকালো অনুষ্ঠানে তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনো। নানা বিতর্কের পর ফুটবলের সবচেয়ে সম্মানের পুরস্কার ব্যালন ডি' অর পাওয়া হয়নি তার। তবে এই পুরস্কার হাতে নিয়ে হয়তো কিছুটা হলেও ভুলেছেন সেই বেদনা।  

Caption

৯. ফুটবলকে কাঁদিয়ে জাগালো, বেকেনবাওয়ারের চিরবিদায়
বছরের শুরুটা ছিল বিশ্ব ফুটবলের জন্য বেদনার। ভক্ত সমর্থকদের কাঁদিয়ে দুই দিনের মধ্যে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান দুই কিংবদন্তি মারিও জাগালো ও ফ্রানৎস বেকেনবাউয়ার।

১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন জাগালো। ফাইনালে নিজে গোল করার পাশাপাশি বানিয়ে দেন পেলের গোল। পরের বিশ্বকাপে শিরোপা ধরে রাখা দলেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন এই লেফট উইঙ্গার। এরপর, ১৯৭০ সালে ডাগআউটে থেকে ব্রাজিলকে আরেকটি শিরোপা জিতিয়ে রচনা করেন ফুটবলার ও কোচ, দুই ভূমিকায় বিশ্বকাপ জয়ের প্রথম ইতিহাস।

পরে ২৪ বছরের খরা ঘুচিয়ে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে শিরোপাজয়ী ব্রাজিল দলের সহকারী কোচও ছিলেন জাগালো। ফুটবলের অনেক অনেক গল্পে জড়িয়ে থাকা এই গ্রেট গত ৬ জানুয়ারি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

জাগালোকে হারানোর কষ্ট ভোলার আগেই আসে বেকেনবাউয়ারের প্রস্থানের খবর। তিনি জার্মানির হয়ে খেলোয়াড় ও কোচের ভূমিকায় জিতেছিলেন দুটি বিশ্বকাপ।

১৯৭৪ সালে সেই সময়ের পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বেকেনবাউয়ার। পরে কোচ হিসেবে ১৯৯০ সালে জেতেন শিরোপা। অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা প্রথম ফুটবল ব্যক্তিত্ব তিনি।

এআর

Wordbridge School
Link copied!