• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩০
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র 

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৮:৩২ পিএম
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

ঢাকা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আগামীকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে, তা নিয়ে বিএনপিসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো এখনই পরিষ্কার কোনো মন্তব্য করতে চাইছে না। এ বিষয়ে দলগুলোর কারও কারও মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। 

তারা মনে করছে, ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। তা না করে হঠাৎ কোনো ঘোষণা বিভাজন তৈরি করবে। তবে কোনো কোনো দল ছাত্রদের ওই উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থন করছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, তারা আগামীকাল বিকেলে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেবে। সংগঠনের নেতারা ঘোষণাপত্রে দুটি মৌলিক বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। 

তাতে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর ‘কবর’ রচনা করা এবং ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করার কথা থাকবে।

বিষয়টি নিয়ে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার আগে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, সংবিধান হোক, আর যা–ই হোক, সিদ্ধান্ত হতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবং জনগণের মাধ্যমে।

এ প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, এরশাদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, শেখ হাসিনারা বিরুদ্ধে বিগত ১৫ থেকে ১৬ বছর মানুষ জীবন দিয়েছে, গুম হয়েছে, খুন হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য, মানুষ তার মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। 

সুতরাং সাংবিধান হোক, আর যেটাই হোক, সিদ্ধান্ত হবে জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ও সংসদের মাধ্যমে। এর বাইরে কোনো গোষ্ঠী, দল বা কোনো গ্রুপের কিছু করার সুযোগ নেই।’

অবশ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এ উদ্যোগকে স্বাধীন মতপ্রকাশের জায়গা থেকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের পর বিস্তারিত জেনে দলীয়ভাবে অবস্থান পরিষ্কার করার কথা জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। 

তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ছাত্র নেতৃত্ব তাদের বক্তব্য তুলে ধরার কথা বলেছে। যে কেউ তাদের বক্তব্য দিতে পারে। 

যেমন জামায়াতে ইসলামী ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে, বিএনপি ৩১ দফা দিয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।’

যদিও এ ধরনের উদ্যোগ ‘অনাস্থা ও বিভেদ’ বাড়াবে বলেই মনে করছেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যখন বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন, তখন বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করাসহ বিভিন্ন বক্তব্য এবং এ ধরনের উদ্যোগ অনাস্থা–বিভেদ বাড়াবে।

বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের মতো কিছু করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। 

তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান কবর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এ ধরনের বক্তব্য সাধারণত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দিয়ে থাকে। সে ধরনের যদি কিছু করা হয়, তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

বিষয়টি নিয়ে আজ সোমবার দলীয় নীতিনির্ধারণী পর্ষদে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। তবে তিনি ছাত্রদের এ ঘোষণাকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে দেখছেন।

গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘যেহেতু ছাত্ররা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের দাবি তো থাকবেই, এটা স্বাভাবিক। তারা যে লক্ষ্যে বিপ্লব করেছে, সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তারা উদ্যোগ নেবে। দেশ মেরামতে তারা ভূমিকা অব্যাহত রাখুক। লক্ষ্য পূরণে তারা মাঠে থাকুক, এটা আমাদেরও প্রত্যাশা। কারণ আমরা দেখছি, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নেয়নি, তাদের আচরণে কোনো পরিবর্তন হয়নি। দলগুলোর চরিত্র সংশোধনের জন্য তারা একটা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে থাকুক।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এই উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থন করেন বলে জানান আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্যসচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আরও আগেই দেওয়া উচিত ছিল। 

এ ছাড়া তা সবাই মিলে করা উচিত। তারা (ছাত্ররা) যেন সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করেই এটি করে। যদিও একেবারে শেষ সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; তারপরেও বলব, চূড়ান্ত ডকুমেন্টেশন সবাইকে নিয়ে করা উচিত।’

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ছাত্ররা তাদের নিজের বক্তব্য তুলে ধরছেন। তবে পরে সব দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে। আর এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতা করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। 

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটে থাকা দলগুলো বাদে বাকি সব দলের নেতাদের শহীদ মিনারের এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে মঞ্চে রাজনৈতিক কোনো দলের নেতারা থাকবেন না। মঞ্চে থাকবেন জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিরা। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন গত ৩ আগস্ট ঘোষিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক টিমের সদস্যরা। 

এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টাও অনুষ্ঠানে থাকতে পারেন।

তবে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম। 

তিনি বলেন, ‘আমরা এটিকে প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ (বেসরকারি উদ্যোগ) হিসেবেই দেখছি। সরকারের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যাঁরা এটিকে সাপোর্ট করছেন, একটা প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভকে সাপোর্ট করছেন।’ সূত্র : প্রথম আলো

এমটিআই
 

Wordbridge School
Link copied!