ঢাকা : রাত ১২টার পর থেকে আস্তে আস্তে গ্যাস আসা শুরু করে। এরপর গ্যাস থাকে সকাল ৬টা, বড়জোর ৭টা পর্যন্ত। বাকি সময় চুলায় কোনো গ্যাস থাকে না। গভীর রাতে কিংবা ভোরে উঠে রান্না করতে হয়। প্রায় সময়ই তা সম্ভব না হওয়ায় রান্না করতে হয় বৈদ্যুতিক চুলায়।
গ্যাসসংকটের এমন চিত্র তুলে ধরে রাজধানীর দনিয়া এলাকার বাসিন্দা দিলরুবা সুমি বলেন, ‘শীতে গরম খাওয়া তো দূরের কথা, ঠিকমতো রান্না করাও মুশকিল হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক চুলার পাশাপাশি ওভেনও ব্যবহার করতে হয়। গ্যাস না পেয়েও প্রতি মাসে গ্যাসের বিল দেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুতেরও বাড়তি বিল দিতে হচ্ছে। এই ভোগান্তির শেষ কোথায়?’
সুমির মতো এমন প্রশ্ন বহু মানুষের, যারা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসসংকটে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিকার মিলছে না কোনো। সহসা কি এর প্রতিকার মিলবে? গতকাল পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও সংকট বলছে, এ থেকে সহসা মুক্ত মিলছে না।
রাজধানীর মনসুরাবাদ এলাকার কর্মজীবী নারী মাহনুর ইসলাম লিজা বলেন, ‘সাত-আট মাস ধরে গ্যাসসংকট অনেক বেড়েছে। একটা চুলা কোনোমতে জ্বালালেও, আরেকটা আর জ্বলে না। প্রতিদিন অফিসের কাজের পাশাপাশি বাসায় রান্না করার সময় ঠিকমতো গ্যাস না পাওয়ায় ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে মাঝেমধ্যেই হোটেল থেকে খাবার কিনতে হয়।’
বনশ্রী, ভাসানটেক, মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বাসাবো ও আজিমপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন এলাকাতেই চলছে গ্যাসসংকট। বাধ্য হয়ে অনেকে বিকল্প উপায় হিসেবে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন। এতে পাইপলাইনের মাসিক বিলের পাশাপাশি চড়ামূল্যে সিলিন্ডার গ্যাসও কিনতে হচ্ছে। যাদের বাড়তি ব্যয় করার সামর্থ্য নেই, তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।
বাসাবাড়ির পাশাপাশি শিল্প কারখানাতেও চরম গ্যাসসংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। তারপরও কারখানা চালু রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকশ কারখানা বন্ধ হয়েছে।
অবশ্য এ সংকট শুধু এখনই নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে এটি চলে আসছে এবং দিনে দিনে তা প্রকট হচ্ছে। তবে এ অবস্থা থেকে সহসা উত্তরণের কোনো উপায় দেখছেন না জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা। কারণ একদিকে দেশীয় গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু চাহিদা বাড়ছে। বিপরীতে গ্যাস অনুসন্ধানে জোর নেই। বিদেশ থেকে চড়ামূল্যের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে যে ডলার দরকার, তাতেও দেখা দিয়েছে সংকট।
বিশেষজ্ঞ ও খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সরকারের অতিমাত্রায় আমদানিপ্রীতির কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস অনুসন্ধানে চরম অবহেলার কারণে দেশি গ্যাসের উৎপাদন কমছে। উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি করতে বিপুল পরিমাণ যে ডলারের প্রয়োজন, তাও সরকারের হাতে নেই। ফলে সংকট আরও বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি জোড়াতালি দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব হলেও আসন্ন গ্রীষ্মে সেই সংকট আরও বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে চাহিদামতো গ্যাসের জোগান নিশ্চিত করা জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কয়েক মাস ধরেই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দারা ভয়াবহ গ্যাসসংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বুধবার থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। কারণ তখন মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি পরিচালিত একটি এলএনজি টার্মিনাল মেরামতের কাজ চলছিল।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, একটি ভাসমান এলএনজি স্টেশনের (এফএসআরইউ) কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১ থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা গ্যাসের চাপ কম থাকবে।
দেশের সর্ববৃহৎ গ্যাস সরবরাহকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ নেওয়াজ পারভেজ বলেন, ‘তিতাসের গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দরকার। কিন্তু তারা কখনোই এ পরিমাণ গ্যাস পান না।
এলএনজি সরবরাহ ৮০০ থেকে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হলে তারা ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের চাহিদা দিলে দেওয়া হয় ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর এলএনজি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণ বা অন্য কোনো সমস্যা হলে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ আরও কমে যায়। ফলে গ্রাহকদের গ্যাসের জোগান দেওয়া তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে।’
জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটির রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বন্ধ থাকায় ৫৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল। রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শেষে শনিবার (গতকাল) থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আশা করছি আগামীকাল (আজ) থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
গ্যাসসংকটে ধুঁকছে শিল্প : শিল্প-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালের শুরুতে গ্যাসের দাম রেকর্ড পরিমাণ ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হলেও সংকট দূর হয়নি। উল্টো ভয়াবহ গ্যাসসংকটে কারখানার উৎপাদন কমেছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। আর সিএনজি স্টেশনের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাসসংকটের কারণে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৩০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে সংকট চললে আরও কারখানা বন্ধ হতে পারে।
শিল্প-কারখানায় প্রয়োজনীয় চাপে এবং চাহিদামতো গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিকল্প উপায়ে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে দুই থেকে তিন গুণ।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘চার দিন ধরে নারায়ণগঞ্জের কারখানায় কোনো গ্যাস নেই। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়ার কথা বলে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল। ১২ টাকার গ্যাস ৩০ টাকা করা হলো। আমরা সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু এরপরও গ্যাস পাচ্ছি না। বরং গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে, গত এক-দেড় বছরে এ সংকট চরমে পৌঁছেছে।’
তিনি আরও বলেন, কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। শিপমেন্ট শিডিউল ফেইল করার কারণে ক্রেতারা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে অর্ডার বাতিলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। গ্যাসসংকটের কারণে বিকল্প জ্বালানি নিয়ে কারখানার উৎপাদন ঠিক রাখতে গিয়ে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। আবার ছোট ও মাঝারি কারখানার অনেক মালিকের এই বাড়তি অর্থ জোগাড় করাও অসম্ভব।
এদিকে ডায়িং, টেক্সটাইল, সিরামিকসহ গ্যাসনির্ভর বিভিন্ন শিল্পেও গ্যাসসংকট চরমে। উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে কিছু ইউনিটের। বাকিগুলোও চলছে কম সক্ষমতায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কারখানায় উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সময়মতো রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।
অন্যদিকে গ্যাসসংকটের কারণে সরকারি সিদ্ধান্তে দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনগুলোয় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধ রাখার এই সময়সীমা দুই ঘণ্টা কমিয়েছে। কিন্তু ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না।
সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারশন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, সরকার ঘোষিত বন্ধের সময়ের বাইরেও গ্যাসের অভাবে সকাল ৭টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বেশিরভাগ স্টেশন বন্ধ থাকে। দুপুরের দিকে আর গভীর রাতে কিছুটা গ্যাস পাওয়া গেলেও কাক্সিক্ষত চাপ থাকে না। ফলে মেশিন চালানো যায় না। আবার চাপ কম থাকার কারণে ক্রেতারও লোকসান হয়। আবার গভীর রাতে যখন গ্যাস থাকে, তখন পরিবহনে গ্যাস নেওয়ার ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই কমে যায়।
তবে শিল্পে যেসব স্টেশন গ্যাস দিচ্ছে, তাদের কিছুটা চাপ থাকে। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের এ সংকট বেশ পুরনো। অন্তর্বর্তী সরকারের রাতারাতি এই পরিস্থিতির উন্নতি করার সুযোগ নেই। সেজন্য আমরা অন্যদের মতো দাবি না তুলে কিছুটা ধৈর্য ধারণ করছি।’
বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সার-কারখানাতেও সংকট : গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য প্রতিদিন ২ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দরকার। কিন্তু চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ না করায় প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গ্যাসের চাহিদাও বেড়ে যায়।
পিডিবি ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা দিলেও, গড়ে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হলে লোডশেডিংও বেড়ে যাবে।
অন্যদিকে বিভিন্ন সার-খানাগুলোয় গ্যাসের অভাবে অনেক সময় উৎপাদন বন্ধ রাখা হয় অথবা কমিয়ে দেওয়া হয়। কৃষক সময়মতো সার ও বিদ্যুৎ না পাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে।
সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে : দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলার কারণে নতুন গ্যাসক্ষেত্র বা গ্যাসকূপের সন্ধান মিলেছে খুবই কম।
অন্যদিকে স্বাভাবিক কারণেই পুরনো ক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন দিন দিন কমছে। বিপরীতে শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্যান্য গ্রাহকপর্যায়ে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে।
উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করে কোনোমতে সংকট কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও, আগের সরকারের রেখে যাওয়া রুগ্ণ অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় ডলার জোগাড় এবং টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার ডলারের ব্যবস্থা হলেও ইচ্ছামতো এলএনজি আমদানির সুযোগ নেই। কারণ দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার দুটি এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। এর চেয়ে বেশি এলএনজি আমদানি করতে নতুন করে টার্মিনাল করতে হবে। সেজন্য অর্থের পাশাপাশি সময়েরও প্রয়োজন।
বর্তমানে প্রতিদিন অন্তত ৪ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। যার মধ্যে ৮০০ থেকে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যায় উচ্চমূল্যের আমদানি করা এলএনজি থেকে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রমতে, আপাতত গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো উপায় তাদের হাতে নেই। ২০২৬ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খনন ও সংস্কারের যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তাতে সফল হলে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাস পাওয়া যেতে পারে।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা কূপে গ্যাসের সন্ধানও মিলেছে। পাশাপাশি আরও এলএনজি আমদানির জন্য সরকার যে পরিকল্পনা করছে, তাতেও ২০২৬ সালের আগে নতুন গ্যাস আমদানির কোনো সুযোগ নেই। এ কারণেই কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০২৬ সালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।
জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী কূপ খনন ও সংস্কার করে কাক্সিক্ষত গ্যাস পাওয়া যাবে কি না সেটা এখনই বলা মুশকিল। তাছাড়া নতুন করে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি করতে যে বিপুল পরিমাণ ডলার দরকার, সেটি জোগাড় করা না গেলে আমদানি ব্যাহত হবে।
এ সময় দেশের পুরনো কূপ থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে চাহিদাও বেড়ে যেতে পারে। ফলে চলমান সংকট কতটা দূর হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
পেট্রোবাংলার সূত্রমতে, দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রের পাশাপাশি চলতি বছর ১১৫টি এলএনজি কার্গো আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসে দুটো এলএনজি টার্মিনালের জন্য অন্তত ১০টি কার্গো দরকার। কিন্তু সরবরাহের জন্য এ পর্যন্ত সাতটি কার্গো নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি কার্গো আমদানি করতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা দরকার। অবশ্য ডলারের দামের কারণে এটি কমবেশি হতে পারে।
চড়ামূল্যের এলএনজি আমদানির চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন কমে যাওয়া আরেকটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস সরবরাহকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান শেভরনের মৌলভীবাজার-সিলেট অঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে আগে যেখানে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত, এখন তা প্রায় ১ হাজার ১০০ মিলিয়নে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) থেকে প্রতিদিন ৬১১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা গেলেও, এখন তা কমে ৫৩০ মিলিয়ন ঘনফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। এসব গ্যাসক্ষেত্রের পাশাপাশি পুরনো অন্য গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদনও কমছে ধীরে ধীরে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, গ্যাসসংকটের পুরনো এই সমস্যা রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়। তবে আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদামতো কয়লার নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর চাপ কমবে। তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করবে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও ডলারের ওপর।
এর পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়া এবং দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। সূত্র : দেশ রূপান্তর
এমটিআই