• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩০
হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়

১৪ বছর ধরে বাংলাদেশে আছে এইচএমপিভি ভাইরাস, নেই আতঙ্ক


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ৭, ২০২৫, ০১:৫৭ পিএম
১৪ বছর ধরে বাংলাদেশে আছে এইচএমপিভি ভাইরাস, নেই আতঙ্ক

ঢাকা : চীন, জাপান ও মালয়েশিয়ার পর এবার ভারতেও এইচএমপিভি ভাইরাস (হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাস) রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটির বেঙ্গালুরুয় তিন ও আট মাস বয়সী দুই শিশুর দেহে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে।

এর ফলে এই ভাইরাস নিয়ে পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে। ভাইরাসটি সম্পর্কে জানতে চাইছে মানুষ। দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

বাংলাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা অবশ্য এই ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে বারণ করেছেন।

তারা বলেছেন, এটি বাংলাদেশের অন্যান্য ভাইরাসের মতোই পুরনো একটি ভাইরাস। ২০১১ ও ২০১২ সালের দিকেও এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল। তখন ভাইরাসটির মারাত্মক কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। ২০ বছরে ধরে এই ভাইরাসের ওপর তারা নজর রাখছেন ও সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত তাদের কাছে রয়েছে। বর্তমানে এই ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোনো মিউটেশন বা ধরনের পরিবর্তন হয়নি।

এমনকি এই ভাইরাসটি শনাক্ত করার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

তারা বলছেন, এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে জিনোম সিকোয়েন্স করে ভাইরাসটির সর্বশেষ ধরন জানার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

গত সপ্তাহে প্রথম চীনে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত হয়। পরে সেটি জাপান ও মালয়েশিয়াতেও দেখা দেয়। সর্বশেষ ভারতে রোগটি শনাক্তের খবর জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডু রাও এ নিয়ে সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। রাজ্যবাসীকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন কর্ণাটকের স্বাস্থ্যসচিব হর্ষ গুপ্তা।

আক্রান্ত তিন মাস বয়সী শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং আট মাস বয়সী শিশুটি কর্ণাটকের রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।

দরকার জিনোম সিকোয়েন্স : এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা এবং সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এটা পুরনো ভাইরাস। বাংলাদেশেও আছে, ভারতেও ছিল। এটা চীনে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে।

চীনসহ যেসব দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভালো, সেখানে যদি ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টে ক্যাপাসিটির বাইরে কোনো রোগী আসে, তারা তখন সেটা নিয়ে পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অ্যালার্ট জারি করে। এর ফলে এটা এতটা আলোচনায় এসেছে।

তবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, যেকোনো শ্বাসতন্ত্রজনিত ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি জানা দরকার। ইনফ্লুয়েঞ্জা দ্রুত ছড়ায় এবং যেসব ভাইরাস দ্রুত ছড়ায়, তারা বদলে যেতে পারে। বদলে যাওয়ার পর ভাইরাসগুলো মারাত্মক সংক্রমণের ক্ষমতা পেতে পারে অথবা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

এই ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করার পরামর্শ দিয়ে এই রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ বলেন, এটা যেহেতু বেশি সংখ্যায় দেখা গেছে, কাজেই ভাইরাসটার জেনেটিক বৈশিষ্ট্য বদল হয়ে যাচ্ছে কি না, সেটা দেখার জন্য জিনোম সার্ভিল্যান্স করতে হবে।

বদল হয়ে গেলে সেটার নতুন লক্ষণ কী, কাদের মধ্যে হচ্ছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থাৎ ভাইরাসটির রোগতাত্ত্বিক ও ভাইরোলজিক্যাল গুরুত্ব তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, এটাতে নতুন করে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এটা অন্য ভাইরাসের মতোই ভাইরাসবাহিত রোগ। যাদের বয়স খুব বেশি বা বয়স খুব কম, গর্ভবর্তী, যারা আগে থেকেই দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন ডায়াবেটিস, ক্যানসার, কিডনি রোগ, অ্যাজমা তাদের ঝুঁকি বেশি। তাদের জ্বর হলেই তারা বিশ্রাম নেবেন। যেকোনো জ¦র যদি তিন দিনের মধ্যে ভালো না হয়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

বাংলাদেশে আগে থেকেই আছে : এইচএমপিভি বাংলাদেশে পুরনো ভাইরাস বলে জানিয়েছেন ডা. মুশতাক হোসেন।

তিনি বলেন, ২০১১ ও ২০১২ সালে আইসিডিডিআর,বি ও আইইডিসিআরের বিজ্ঞানীরা এই রোগ শনাক্ত করেছেন। তখন সারা বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা করে ১০-১২ শতাংশ রোগীর শরীরে এইচএমপিভি পেয়েছে।

এখনো যেহেতু রোগটি ছড়াচ্ছে, তাই যাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে, তাদের থেকে নমুনা নিয়ে জিনোম সিকোয়েন্স করে দেখতে হবে এই ভাইরাস আছে কি না ও সেটার কোনো ধরন পরিবর্তন হয়েছে কি না।

হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় : এই ভাইরাস শনাক্ত করার ব্যবস্থা বাংলাদেশে আছে বলে জানিয়েছেন ডা. মুশতাক হোসেন।

তিনি বলেন, যদি আগে থেকেই রোগী কোনো জটিল অবস্থায় না থাকে, তাহলে এতে মৃত্যু হওয়ার কথা না। এটা ছোঁয়াচে রোগ। হাঁচি-কাশি ও স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। আন্তর্জাতিকভাবে সতর্কতার কিছু নেই। তবে সতর্ক থাকতে হবে।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুনশি বলেন, এটা নতুন কোনো ভাইরাস না। এটাতে মূলত যারা সুস্থ, সবল ও পূর্ণবয়স্ক মানুষ তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর আক্রান্ত হলেও ক্ষতিকর কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই ভাইরাস এ নামেই আগে থেকেই বাংলাদেশে আছে।

ভয়ের কিছু নেই : আইইডিসিআরের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আইসিডিডিআর,বি ২০ বছর ধরে এটা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছে ও ভাইরাসের সব ধরনের তথ্য তাদের কাছে আছে।

প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটার যদি সুনির্দিষ্ট মিউটেশন না হয়, তাহলে ভয়ের কিছু নেই। খুব বড় ধরনের কোনো মিউটেশন হয়েছে বলেও মনে হয় না। এটা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। এটি বাংলাদেশের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত সাধারণ রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাসের (আরএসভি) মতোই একটি ভাইরাস। বাংলাদেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই এই ভাইরাসের সঙ্গে পরিচিত।

সতর্ক অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকেই আমাদের দেশে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়ে আসছিল।

আমরা আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা বলেছে, এ বছর এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। চীন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গেও আমরা আলাপ করেছি।

চীন জানিয়েছে, তারা এই রোগের কারণে কোনো জরুরি অবস্থা জারি করেনি। অনেক ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে।

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আমরা এ বিষয়ে আলোচনায় বসেছি। আমরা আবারও এই রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসব।’ সূত্র : দেশ রূপান্তর

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!