ঢাকা : লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ শেষ হলো। প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসছে বাংলাদেশ। যদিও শেষ ম্যাচটা হেরে শেষটা মলিন হয়েছে স্বাগতিকদের। অন্যদিকে অধিনায়ক তামিম ইকবাল তো বলেই দিয়েছেন, সিরিজ জিতলেও ওভারঅল পারফরম্যান্স তিনি খুশি নন। তারপরও সামনে তাকাতে চাচ্ছেন তিনি।
আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকায় বাংলাদেশ এখন এক নম্বর দল। কিন্তু সরাসরি বিশ্বকাপে খেলতে গেলে বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে কঠিন সব বৈতরণি। অপেক্ষায় সুপার লিগের আরো পাঁচটি সিরিজ। সেখানে কেমন করবে বাংলাদেশ?
১৩ দলের এই সুপার লিগ চালু হয়েছে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব হিসেবে। স্বাগতিক ভারত ও সুপার লিগের অন্য শীর্ষ সাত দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে। সুপার লিগের তলানির পাঁচ দলের সুযোগ শেষ হয়ে যাবে না। আইসিসি সহযোগী পাঁচটি দেশের সঙ্গে বাছাইপর্ব খেলতে হবে তাদেরকে। সেই ১০ দলের বাছাই থেকে উঠে আসবে বিশ্বকাপের বাকি দুটি দল। চ্যালেঞ্জ তাই সেখানেও বেশ কঠিন। সেই অনিশ্চিত ও বিব্রতকর অভিযানে না নামতে হলে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতেই হবে।
সুপার লিগে সব দল পরস্পরের সঙ্গে খেলবে না। তবে প্রতিটি দলকেই খেলতে হবে আটটি করে সিরিজ। দেশে ও বিদেশে সমান চারটি করে সিরিজ। প্রতি সিরিজে ম্যাচ তিনটি করে। ২৪টি ম্যাচের ফলাফল থেকে নির্ধারিত হবে দলগুলির ভাগ্য। প্রতিটি জয়ের জন্য পয়েন্ট ১০, টাই বা পরিত্যক্ত ম্যাচে পয়েন্ট দুই দলের সামান ৫ করে।
আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচির সময় দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হয়েছে সে কার বিপক্ষে কোথায় খেলবে। বাংলাদেশের যেমন সুপার লিগের খেলা নেই ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে।
তবে চ্যালেঞ্জের কমতি নেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশের তিনটি সিরিজ শেষ হলো। গত জানুয়ারিতে দেশের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ থেকে মিলেছে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট। মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে পেতে হয়েছে উল্টো স্বাদ। সেখানে সঙ্গী হয়েছে সব ম্যাচে হারার তেতো অভিজ্ঞতা।
এরপর সদ্য সমাপ্ত এই শ্রীলঙ্কা সিরিজ। যেখানে সম্ভাব্য ৩০ পয়েন্ট থেকে পাওয়া গেল ২০ পয়েন্ট। ৯ ম্যাচে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগে আপাতত শীর্ষে বাংলাদেশ। সমান ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ইংল্যান্ড। ৬ ম্যাচ খেলেই ৪০ পয়েন্ট করে আছে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার। রান রেটে তারা ইংলিশদের চেয়ে পেছনে।
এ ছাড়া আরো বেশি কিছু দল এখনো খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি। নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তান যেমন কেবল তিনটি করে ম্যাচ খেলেছে, জিতেছে সব কটি। দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েও খেলেছে কেবল ৩ ম্যাচ।
পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে বাংলাদেশের অবস্থান তাই আপাতত সাময়িক বলেই ধরে নেওয়া যায়। এই অবস্থান সংহত করার লড়াইয়ে বাংলাদেশের পরের চ্যালেঞ্জ জিম্বাবুয়ে। আগামী জুলাইয়ে সেই সিরিজ। এমনিতে জিম্বাবুয়ে খুব কঠিন প্রতিপক্ষ নয়। তবে এই সিরিজ যে জিম্বাবুয়েতে!
দেশের মাঠে বাংলাদেশ সবশেষ ১৬ ওয়ানডেতেই জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে। কিন্তু জিম্বাবুয়েতে গিয়ে হেরে এসেছে সবশেষ দুই সিরিজে! যদিও সেই সিরিজ দুটি হয়েছে ২০১১ ও ২০১৩ সালে, এখনকার বাস্তবতা বদলে গেছে অনেক। তবে জিম্বাবুয়ের আবহাওয়া-কন্ডিশন খুব একটা বদলায়নি, বাংলাদেশের জন্য যা বড় চ্যালেঞ্জ।র্যাংকিং অবস্থান ও দলীয় শক্তি-সামর্থ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও তাই পূর্ণ পয়েন্ট পাওয়া সহজ হবে না জিম্বাবুয়ে সফরে।
সুপার লিগে এরপর বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সেই সিরিজটি দেশের মাঠে। তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পূর্ণ পয়েন্ট তো বটেই, এমনকি ২০ বা ১০ পয়েন্ট পাওয়াও হবে খুব কঠিন। ইংলিশদের বিপক্ষে কখনোই ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ।
আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচি অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এটিও দেশের মাঠে। কিন্তু যথারীতি, আরেকটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই কন্ডিশনে আফগানিস্তান বরাবরই দারুণ এক দল। দ্রুতই উন্নতি করছে তারা এবং তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ডও খুব একটা ভালো নয়।
সুপার লিগে দেশের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজই বাংলাদেশের শেষ। এরপর সফর দক্ষিণ আফ্রিকায় ও আয়ারল্যান্ডে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পরপরই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। যেটি বাংলাদেশের জন্য বরাবরই দুঃস্বপ্নের ভূমি। দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের বিপক্ষে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৯ ম্যাচ খেলে কখনোই জয় পায়নি বাংলাদেশ। এই সিরিজ থেকে ১০ পয়েন্ট আশা করাও তাই কঠিন।
আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজটি হওয়ার কথা ছিল গতবছর। কোভিডের প্রকোপে স্থগিত হয়ে গেছে তা। নতুন সূচিতে হবে আগামী বছরের কোনো একটা সময়ে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত একমাত্র ওয়ানডে টুর্নামেন্ট জয় করেছে আয়ারল্যান্ডেই। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না, কন্ডিশন সেখানেও খুব চ্যালেঞ্জিং।
বাংলাদেশ যেমন সিরিজ ধরে ধরে সম্ভাব্য পয়েন্টের কিছু লক্ষ্য ঠিক করেছে, প্রতিপক্ষরাও একই রকম ছক সাজাচ্ছে। সব দলই যতটা সম্ভব সর্বোচ্চ পয়েন্টের জন্য বাংলাদেশকে কাজে লাগাতে চাইবে। সেভাবেই তারা প্রস্তুতি নেবে।
শ্রীলঙ্কাকে নিজেদের আঙিনায় বাগে পেয়েও পূর্ণ পয়েন্ট না পাওয়াটা তাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আক্ষেপের কারণ হতেও পারে! সিরিজ শেষে সম্ভাব্য সেই শঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন অধিনায়ক তামিম ইকবালও। সঙ্গে বলেছেন, সামনের চ্যালেঞ্জগুলো জয়ে দলকের কতটা উন্নতি জরুরি।
তিনি বলেন, ‘এটা ওয়ানডে সুপার লিগ, দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মতো নয় যে দুই ম্যাচে সিরিজ জিতে গেলে অর্জনের কিছু আর নেই। এই ১০ পয়েন্ট ভবিষ্যতে আমাদের কষ্ট দিতেও পারে, কে জানে! সুযোগটা যখন আমাদের ছিল, পুরোটা শেষ করা উচিত ছিল।’
‘ব্যাটিং ইউনিটের সম্ভাবনা আমাদের আরো বেশি। বোলিংয়ে হয়তো বলতে পারি যে ভালো করেছি (শ্রীলঙ্কা সিরিজে)। ফিল্ডিং প্রথম দুই ম্যাচে ভালো ছিল, আজকে সেই পুরনো ভুল হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ পড়েছে। সব মিলিয়ে সিরিজ হারার পর যখন বলি যে অনেক কিছু করার আছে, এবার সিরিজ জয়ের পরও বলছি অনেক উন্নতি করতে হবে, অনেক কাজ করার আছে।’
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :