ঢাকা : ক্রিকেট ভদ্র খেলা। আর ভদ্র খেলায় এমন এমন অনেক ভদ্র ক্রিকেটাররা আছেন যারা বিশ্বব্যাপী সম্মানিত। বলতে গেলে ক্রিকেটবিশ্বে এদের কোনো হেটার্স নেই। আর এই তালিকায় ২য় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম আইডল এবং ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
তবে অনেকসময় মাঠে এমন কিছু পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যা আসলেই কাম্য নয়। কিন্তু তার মাঝে কিছু খেলোয়াড় তাদের ব্যবহারের চূড়ান্ত পরিচয় দেয় এবং ক্রিকেট যে ভদ্র লোকের খেলা তা প্রমাণ করে দেয়।
আর শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা। এই সকল ক্রিকেটাররা তাদের ভদ্রতার জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয় ও সম্মানিত। ফেসবুকে একটি প্রতিষ্ঠান ক্রিকেটবিশ্বে সম্মানিত এমন ১০ জন ক্রিকেটারের তালিকা প্রকাশ করেছেন।
চলুন একনজরে দেখে আসি তালিকায় আছেন যারা:
হাশিম আমলা : নাম- হাশিম মোহাম্মদ আমলা। জন্ম: ৩১ মার্চ ১৯৮৩। নাটাল প্রদেশে জন্মগ্রহণকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি প্রথমদিকে ব্যাটিং করেন এবং মাঝে মাঝে মিডিয়াম পেস বোলিং করে থাকেন। টেস্ট খেলায় ৩নং ব্যাটসম্যান ও একদিনের খেলায় শুরুতেই ব্যাটিং অর্ডারে নামেন আমলা।
আইসিসি প্লেয়ার র্যাঙ্কিংয়ে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উভয় বিভাগে বিশ্বের ১নং ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি স্বীকৃত ছিলেন। তার পূর্বপুরুষেরা অনেক বছর পূর্বে অভিবাসিত হয়ে গুজরাট থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাসস্থান গড়েন। ডারবান হাইস্কুল থেকে ডিগ্রী গ্রহণ করেন আমলা।
তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ২৮ নভেম্বর, ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হন। আর ভারতের বিপক্ষেই শেষ টেস্ট ২ জানুয়ারি ২০১১ সালেই। ৯ মার্চ ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে তার ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ২৫ মার্চ ২০১১ সালে নিউজিল্যান্ড বিপক্ষে তার শেষ ওডিআই।
আর টি-২০ তে অভিষেক ১৩ জানুয়ারি ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। শেষ টি-২০ খেলেন ৯ জানুয়ারি ২০১১ সালে ভারতের বিপক্ষে।
মাশরাফি বিন মর্তুজা : নাম- মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। জন্ম ৫ অক্টোবর ১৯৮৩। তিনি মাশরাফি বিন মর্তুজা নামেও পরিচিত। ডাকনাম কৌশিক, ম্যাশ, নড়াইল এক্সপ্রেস। বর্তমানে তিনি হলেন একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ। যিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক টেস্ট, ওয়ানডেতে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক ছিলেন এবং বর্তমানে নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। ইএসপিএন কর্তৃক পরিচালিত "ওয়ার্ল্ড ফেইম ১০০" এ বিশ্বের সেরা ১০০ জন ক্রীড়াবিদের মধ্যে অন্যতম। অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০টি উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে তিনি ৫ম বোলার।
টেস্ট অভিষেক ৮ নভেম্বর ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে। আর শেষ টেস্ট ৯ জুলাই ২০০৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ওডিআই অভিষেক ২৩ নভেম্বর ২০০১ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। শেষ ওডিআই ৬ মার্চ ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টি-২০তে তার অভিষেক ২৮ নভেম্বর ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। শেষ টি-২০ খেলেন ৬ এপ্রিল ২০১৭ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
শচিন টেন্ডুলকার : নাম-শচীন রমেশ তেন্ডুলকর। এছাড়া শচীন তেন্দুলকার, শচিন টেন্ডুলকার নামেও পরিচিত। ডাকনাম মাস্টার ব্লাস্টার, তেন্ডলয়া, লিটল মাস্টার। জন্ম এপ্রিল ২৪, ১৯৭৩। তিনিই ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চমানের ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। শচীনের মাত্র ষোলো বছর বয়সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় এবং এরপর থেকে প্রায় চব্বিশ বছর তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেন।
তিনি টেস্ট ক্রিকেট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় সর্বোচ্চসংখ্যক শতকের অধিকারীসহ বেশ কিছু বিশ্বরেকর্ড ধারণ করে আছেন। তিনি প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা ও টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ মিলিয়ে শততম শতক করেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১২ সালের এশিয়া কাপ চারদেশীয় ক্রিকেট ম্যাচে তিনি এই রেকর্ড করেন।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার ইতিহাসে প্রথম দ্বি-শতরানের মালিক তিনি। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর, তিনি সমস্ত ধরনের স্বীকৃত ক্রিকেট খেলায় প্রথম ভারতীয় হিসেবে মোট ৫০,০০০ রানের মালিক হন।
তার টেস্ট অভিষেক ১৫ নভেম্বর ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। শেষ টেস্ট ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ওডিআই অভিষেক ১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৯ বিপক্ষ পাকিস্তান। শেষ ওডিআই ১৮ মার্চ ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষেই। একমাত্র টি-২০ ১ ডিসেম্বর ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
কুমার সাঙ্গাকারা : নাম- কুমার চোকশানাদা সাঙ্গাকারা জন্ম: ২৭ অক্টোবর, ১৯৭৭। মাতালে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী পেশাদার সাবেক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার। তাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ‘সাঙ্গা’ ডাকনামে পরিচিত কুমার সাঙ্গাকারা শ্রীলঙ্কা জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন বামহাতি ও শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান। শুরুতে উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় বৃদ্ধিকল্পে এ দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেন। মে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত রান সংগ্রহের দিক দিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিকে দ্বিতীয় ও টেস্ট ক্রিকেটে ৫ম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। এছাড়াও উইকেট-রক্ষক হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ডিসমিসাল তার দখলে।
তার টেস্ট অভিষেক ২০ জুলাই ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিপক্ষে। শেষ টেস্ট ৩-৭ জানুয়ারি ২০১৫ নিউজিল্যান্ড বিপক্ষে। ওডিআই অভিষেক ৫ জুলাই ২০০০ পাকিস্তান। শেষ ওডিআই ১৮ মার্চ ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
ড্যারেন স্যামি : ড্যারেন জুলিয়াস গার্ভে স্যামি (ইংরেজি: Darren Julius Garvey Sammy; জন্ম: ২০ ডিসেম্বর, ১৯৮৩) সেন্ট লুসিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষ হয়ে নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করছেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবং ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে তার দলে অবস্থান। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক ঘটে।
এর মাধ্যমেই তিনি সেন্ট লুসিয়া দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছেন। অক্টোবর, ২০১০ সাল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট, একদিনের আন্তর্জাতিক ও টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে নেতৃত্ব দিলেও পরবর্তীতে তিনি টুয়েন্টি ২০ আন্তর্জাতিকের অধিনায়কত্ব করেছিলেন।
এছাড়া আরও আছেন মহেলা জয়বর্ধানে, পাকিস্তানের শোয়েব মালিক, দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স ও জ্যাক ক্যালিস।নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কে কেন উইলিয়ামসন।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলে বর্তমান পেসার মোস্তাফিজকেও একজন ভদ্র ক্রিকেটার হিসেবে বলা যায়।
উল্লেখ্য, এই তালিকাটিতে আপনাদের পছন্দের ক্রিকেটারের নাম নাও থাকতে পারে। আপনার পছন্দের ক্রিকেটারের নাম আমাদের জানান কমেন্ট করে।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :