ঢাকা : সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের এই ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় মাসুরা পারভীনের বাড়ি সাতক্ষীরায় বইছে আনন্দের জোয়ার। কিন্তু তাদের থাকার বসতি ভাঙা হবে বলে দুশ্চিন্তায় ছিল মাসুরার পরিবার। অবশেষে জানা গেল আপাতত ভাঙা হচ্ছে না বাড়িটি।
ইতোমধ্যে মাসুরার ঘরের দেয়ালে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের দেওয়া ক্রস চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে। ফলে নতুন বাড়ি না পাওয়া পর্যন্ত বাড়িটি আর উচ্ছেদ করা হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে সওজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া এই লাল ক্রস চিহ্ন মুছে ফেলা হয়।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সদর উপজেলার ১৩নং লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো আব্দুল আলিম এটি মুছে দেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘যতদিন না পর্যন্ত মাসুরার পরিবার নিজেদের বাড়ি বাংলাদেশ সড়ক বিভাগের নির্ধারিত জায়গা থেকে সরিয়ে নতুন বাড়ি করবেন ততদিন পর্যন্ত তাদের (সওজ) কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ করা গেল।’
সাতক্ষীরা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বেতনা নদীর তীরে বিনেরপোতা এলাকায় মাসুরাদের বাড়ি। সেখানে তার মা-বাবা ও দুই বোন থাকেন। তাদের বাড়ি গিয়ে কথা হয় মাসুরার বাবা রজব আলী ও মা ফাতেমা বেগমের সঙ্গে।
এ বিষয়ে মাসুরার বাবা রজব আলী বলেন, ‘২০১৮ সালে অনুর্ধ্ব-১৮ সাফে আমার মেয়ের একমাত্র গোলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। আমাদের থাকার জায়গা না থাকার বিষয়টি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর নজরে আসে। তখন তিনি আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু আমাকে যে জমি দেওয়া হয় সেখানে ১৫ ফুট পানি জমে ছিল। বিভিন্ন দপ্তরে অনেকদিন ছোটাছুটির পর সহায়তা পাইনি। বাধ্য হয়ে মাসুরার বঙ্গমাতা গোল্ড কাপের তিন লাখ টাকা দিয়ে মাটি ভরাট করি। তখন মাসুরা ২৮ দিন বাড়িতে ছিল। তার ইচ্ছা ছিল দুই দিন বাড়িতে থেকে ঢাকায় যাবে। ২৬ দিনের মাথায় মেয়ের খেলার পুরস্কারের টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরি করি। এরপর মাত্র দুদিন নতুন ঘরে থেকে ঢাকায় খেলতে চলে যান মাসুরা।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাগাছা পূর্বপাড়ায় একটি জরাজীর্ণ ভাঙাচোরা দোচালা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। চাল ও দেয়াল খসে পড়ছিল। মাসুরা বাধ্য হয়ে তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে এই ঘর করেছে। আগে ভ্যানে করে এলাকায় ফল-মূল বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অসুস্থতার কারণে এখন আর সেটাও করতে পারি না।’
রজব আলী আরও বলেন, ‘এত টাকা খরচ করে বাড়ি বানিয়ে এখন আমরা প্রায় নিঃস্ব। এদিকে আমার শরীরটাও ভালো না। কাজ করতে পারি না। মেয়ের খেলার টাকায় সংসার চলে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। সেই হিসেবে আমাদের বাড়িতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে গেছে। সরকারিভাবে পাওয়া আট শতক জমিতে ঘর করেছি। এটা ভেঙে দিলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় থাকব?’
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলতে দুবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু ইউএনওর দেখা পাইনি। পরে ইউএনওর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন মাসুরা। তখন ইউএনও বলেন, ‘সড়ক বিভাগের সীমানার মধ্যে আপনার বাড়ি পড়লে আমাদের করার কিছু নেই।’
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘মাসুরাদের ঘরে ক্রস চিহ্ন দেওয়ার বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি।’
মাসুরার মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরেছে। দেশের মানুষ আনন্দ করছে। কিন্তু আমরা তো দুশ্চিন্তাই আছি। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সরকারি জায়গায় থাকায় সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। আমাদের ঘরের পেছনে ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। ঘর ভেঙে দিলে থাকবো কোথায়?’
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘সরকারিভাবে জমি পাওয়ার প্রমাণপত্র নিয়ে উচ্ছেদের দিন উপস্থিত থাকলে ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত নেবেন। ভুল করেও ক্রস দিতে পারে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :