ঢাকা: কোচদের কাছে দলের সব খেলোয়াড়ই প্রিয় হন না। যারা প্রিয় হতে পারেন তাদের আবার দলে থাকার সুযোগ একটু বেশিই থাকে। আবার যে ক্রিকেটার পছন্দীয় নয় তারা বারবার সুযোগ পান না। একটু খারাপ করলেই দল থেকে বাদ পড়েন। ক্রিকেটে এটা নিয়মিত্র চিত্র।
এ চিত্রটা বাংলাদেশ দলেও আছে। বিশেষ করে হাথুরুসিংহে যখন প্রথম ধাপে বাংলাদেশের কোচ ছিলেন। বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরও সৌম্য সরকার ও লিটন দাসের একাদশে সুযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ক্রিকেট ভক্তরা।
একটা সময় ভালো করলেও ফর্ম হারানোর পর এ দুজনের দলে থাকা নিয়ে হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, তাদের সময় দিতে হবে। দুজনেই সম্ভাবনাময়ী ক্রিকেটার।
তবে দ্বিতীয় ধাপে হাথুরুসিংহে যখন বাংলাদেশ দলের কোচ হয়ে এলেন তখন প্রিয় ছাত্র সৌম্য তখন বাংলাদেশ দল থেকে অনেক দূরে। লিটন দাস পারফর্ম করে দলে জায়গা পাকা করলেও সৌম্য সেটা পারেননি। আর তাই তো পছন্দের ক্রিকেটারকে কোনোভাবেই দলে আনতে পারছেন না টাইগারদের কোচ। তবে হাথুরুসিংহেও বসে নেই, প্রিয় ছাত্রকে দলে টানতে মরিয়া এই শ্রীলঙ্কান। বিশ্বকাপের আগে সেই ছকই কষছেন তিনি।
বিসিবির উচ্চ পর্যায়ের অতি নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল সূত্র নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানিয়েছেন, মোহামেডানের হয়ে খেলা সৌম্য সরকারকে বিশ্বকাপ দলে রাখতে চান হেড কোচ হাথুরুসিংহে। শুধু চানই না, সৌম্যর কথা হাথুরুর মাথায় সারাক্ষণ কাজ করে।
জানা গেছে, তিনি এরই মধ্যে নির্বাচকদের কাছে সৌম্যর নামও প্রস্তাব করেছেন। বলেছেন, ‘কি ব্যাপার তোমরা সৌম্যকে ডাকছো না কেন? কোচের সে আহ্বানে সাড়া দেননি নির্বাচকরা। বরং তা নাকচ করে দিয়েছেন।
রাউন্ড রবিন লিগ আর সুপার লিগ মিলিয়ে ১৪ খেলার তিনটিতে জায়গা হয়নি একাদশে। সর্বশেষ রোববারও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে একাদশে রাখা হয়নি তাকে।
১১ ম্যাচে ১০ ইনিংসে করেছেন মোটে ১৯১। তার ইনিংসগুলো হল, ১৬, ১, ১৭, ৪১, ৮, ৫৬, ১৩, ৯, ৮, ২২। যাতে আছে একটি মাত্র ফিফটি অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে ৫৬, তাও ৯১ বলে। আর এক ম্যাচে করেছেন ৪১। বাকি ৮ ম্যাচে সৌম্যর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৯৪ রান।
সৌম্য ফর্মে নেই। তার ব্যাটে রান খরা। রান করতে ভুলে গেছেন। নির্বাচকরা রীতিমত পরিসংখ্যান দিয়ে হেড কোচকে সৌম্যর ব্যাপারে নেতিবাচক কথা বললেও কোচ হাথুরুর মন গলেনি। তার মাথায় সৌম্য ভূত চেপে বসে আছে! তিনি এখনো ভেতরে ভেতরে সৌম্যর কথা ভাবছেন। তার দাবি, সৌম্যর ট্র্যাক রেকর্ড ভাল। সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভাল খেলে। বড় মঞ্চে রান করার রেকর্ড আছে তার।
কিন্তু সৌম্য যে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শেষ প্রায় দুই বছরে কিছুই করতে পারেননি, তার ব্যাট থেকে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৬ বলে ৬৯ রানের ইনিংসটিই সৌম্যর শেষ ওয়ানডে ফিফটি। এরপর গত ৪ বছরে সৌম্য ওয়ানডেই খেলেছেন ৬টি। যার ২ ম্যাচে আবার ব্যাট করেননি। বাকি ৪ ম্যাচে রান করেছেন ৪০।
এছাড়া জাতীয় দলের হয়ে শেষ ১৭ ম্যাচে তার ফিফটি মোটে দুটি। এসব জানা নেই হাথুরুর। সবকিছু শোনার পর খানিকটা চুপ মেরে গেছেন বাংলাদেশ কোচ। তারপরও নাকি নির্বাচকদের বলেছেন, তবুও সৌম্যর দিকে চোখ রাখ। যদি প্রিমিয়ার লিগে রান করে তাহলে তার কথা মাথায় রেখো। কারণ, জাতীয় দলের হয়ে তার ভাল কিছু ইনিংস আছে।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের এখনো চার-পাঁচ মাস বাকি। এ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি সিরিজ ও টুর্নামেন্ট আছে টাইগারদের। তাই বিশ্বকাপ স্কোয়াড চূড়ান্ত করার পর্যাপ্ত সময়ও আছে হাথুরুর হাতে।
তবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কথা, ‘আমরা এশিয়া কাপেই দল সাজিয়ে ফেলবো। এশিয়া কাপের দলটিই হবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ স্কোয়াড।’
এশিয়া কাপ আয়োজনের সময়সূচি হলো সেপ্টেম্বর। তার আগে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ। এরপর আগস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে আরও একটি ওয়ানডে সিরিজ হতে পারে। যদি হয় তাহলে এশিয়া কাপের আগে আর দুটি মাত্র ওয়ানডে সিরিজ আছে টাইগারদের।
দল কেমন হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এখনই ক্রিকেট অনুরাগীদের উৎসাহ ও আগ্রহের শেষ নেই। অনেকেই আলোচনা-পর্যালোচনায় বসে গেছেন। নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চলছে দল নিয়ে।
যেহেতু সামনে অনেক ম্যাচ আছে। সে সব সিরিজ এবং টুর্নামেন্টে দল নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলবে। যদিও কিছু পজিশন ও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার নিশ্চিত। তারা অটোমেটিক চয়েজ হয়ে আছেন। অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবাল নিশ্চিত। অপর ওপেনার লিটন দাসকে নিয়েও সংশয় নেই। ওয়ান ডাউনে জায়গা পাঁকা করে ফেলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এছাড়া সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম এবং সাম্প্রতিক সময়ে ভালো পারফর্ম করা তৌহিদ হৃদয়েরও জায়গা নিশ্চিত।
তাদের সাথে স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ এবং পেস বোলার কোটায় তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও এবাদত হোসেনও মোটামুটি কনফার্ম। কোনোরকম ইনজুরির শিকার না হলে এই ১০ জনের বিশ্বকাপ দলে থাকা একেবারেই নিশ্চিত।
এখন দল যদি হয় ১৫ জনের হয়, তাহলে বাকি থাকলো আরও ৫ জন। তারা কারা? সেখানে আছে বেশ কিছু নাম- রনি তালুকদার, ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, সাইফউদ্দীন, নাসুম আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম।
ভক্ত ও সমর্থকরা হয়তো প্রিমিয়ার লিগে অনেক রান করা এনামুল হক বিজয়, নাইম শেখসহ আরও কয়েকজন ক্রিকেটারের কথা ভাবছেন। তাদের নিয়ে ভক্তরা যত উৎসাহই দেখান না কেন তাদের কথা এ মুহূর্তে মাথায় নেই টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকদের। কোচের মাথায় এমন একজন ঘুরছেন যে কি না, একেবারেই ফর্মে নেই। শুধুমাত্র প্রিয় ছাত্র বলেই কপাল খুলে যেতে পারে তার। তবে শেষ পর্যন্ত স্কোয়াডে সুযোগ পান কি না? সেটা সময়ই বলে দেবে।
সোনালীনিউজ/এআর