ঢাকা: লিওনেল মেসির ৩৬তম জন্মদিন আজ। ১৯৮৭ সালে আজকের দিনে আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এ ফুটবলার। গতকাল থেকেই বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন ইন্টার মায়ামি তারকা। বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রথম জন্মদিন হওয়ায় বিশ্বজুড়ে চলছে বিশেষ সেলিব্রেশন।
ক্লাব ফুটবলে অর্জনের ডালিটা কানায় কানায় পূর্ণ করেছেন অনেক আগেই। ২০০৫ সাল বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন প্রথম লা লিগা। সেবারের জন্মদিনটা নিশ্চয়ই বিশেষ ছিল মেসির। এরপর ২০০৬ সালের মে মাসে জিতেছেন প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। সেবারের ২৪ জুন মেসি উদ্যাপন করেছেন ১৯তম জন্মদিন। এরপর এমন অনেক শিরোপা জয়, এমন অনেক বিশেষ জন্মদিন গেছে মেসির। ২০২১ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছেন ৩৪তম জন্মদিন পালনের পরের মাসে। কিন্তু ২০২২ সালে ইতালিকে হারিয়ে লা ফিনালিসিমা জিতে পালন করেছেন ৩৫তম জন্মদিন।
এত এত বিশেষ জন্মদিন কাটানো মেসি অপেক্ষায় ছিলেন একটি অতি বিশেষ জন্মদিন পালনের। শুধু মেসি কেন, মেসির একটি অতি বিশেষ জন্মদিন পালনের স্বপ্ন দেখে কাটিয়েছে বিশ্বজোড়া তার কোটি কোটি ভক্তও। মেসি তার প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছেন ২০০৬ সালে, ১৯ বছর বয়সে। এরপর ২৩ বছর বয়সে ২০১০ বিশ্বকাপ, ২৭ বছর বয়সে ২০১৪ আর ৩১ বছর বয়সে ২০১৮ বিশ্বকাপ।
ব্রাজিলে হওয়া ২০১৪ বিশ্বকাপে একদম তিরে গিয়ে তরি ডুবেছে। স্বপ্নের বিশ্বকাপ শিরোপা ছুঁতে পারেননি ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে যাওয়ায়। সেবার বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন মেসি। কিন্তু পুরস্কারটি হাতে নিয়ে সেদিকে তাকাচ্ছিলেনও না আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। ভাবখানা ছিল এ রকম, ‘কী চেয়েছিলাম আর কী পেলাম!’
২০১৪ বিশ্বকাপের পর ২০১৫ কোপা আমেরিকার ফাইনালেও চিলির কাছে হারে আর্জেন্টিনা। পরের বছর ছিল কোপা আমেরিকার শতবর্ষী আসর। আবারও ফাইনালে চিলির সামনে পড়ে আর্জেন্টিনা। ফাইনালের দুই দিন আগে ছিল মেসির জন্মদিন। চিলিকে হারিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে আর্জেন্টিনার সিনিয়র দলের জার্সিতে প্রথম শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসতে চেয়েছিলেন মেসি, জন্মদিনটা পালন করতে চেয়েছিলেন ফাইনালের পর। কিন্তু কোথায় কী! আর্জেন্টিনার হারের পর কী বিষাদময় কিছুদিনই না কেটেছে তার। অন্তর্দহন সহ্য করতে না পেরে আন্তর্জাতিক ফুটবলকেই বিদায় জানিয়ে দিয়েছিলেন!
ডিয়েগো ম্যারাডোনা থেকে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট-সবার অনুরোধে আর্জেন্টিনার প্রয়োজনেই মেসি অবসর ভেঙে আবার ফিরেছেন ২০১৮ বিশ্বকাপের আগে। কিন্তু সেবার দারুণ নৈপুণ্যে দলকে বিশ্বকাপের মূলমঞ্চে নিয়ে গেলেও জন্মদিনটা বিশেষ করে তুলতে পারেননি। কারণ, আর্জেন্টিনা যে ছিটকে গিয়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই। এর পর থেকেই মেসি দিন গুনে গেছেন। তখন মেসির বয়স হয়ে গিয়েছিল ৩১ বছর। কিন্তু আরেকটি বিশ্বকাপ খেলা আর শিরোপা জয়ের ভাবনায় তার বয়স যেন বাড়ছিলই না!
৩১ থেকে ৩২, সেখান থেকে ৩৩, ৩৪, ৩৫-গাণিতিক হিসাবে মেসি একটু একটু করে ‘বুড়ো’ হচ্ছিলেন, কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্স বলছিল বয়স যেন তার থমকে আছে একই জায়গায়! দুর্দান্ত সেই পারফরম্যান্সটা নিয়ে গেলেন কাতারে। একের পর এক ম্যাচে অসাধারণ ফুটবল খেলে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে এনে দিলেন পরম আকাঙ্ক্ষিত সেই বিশ্বকাপ ট্রফি। এখন তিনি বিশ্বজয়ী! আজ একজন বিশ্বজয়ীর জন্মদিন।
উল্লেখ্য, ১০ বছর বয়সে হরমনজনিত সমস্যা ধরা পড়ে মেসির। ছোট্ট দুটি পায়ে, বিশেষ করে জাদুকরি বাঁ পায়ের কারিকুরিতে নিওয়েলস বয়েজ ক্লাবের প্রাঙ্গণ মাতিয়ে রাখা শিশুটি আর কখনো ফুটবল খেলতে পারবে কি না, তা নিয়েই শঙ্কা জাগে। সেই শঙ্কার অবসান হয় ২০০০ সালে বার্সেলোনা অসামান্য এই প্রতিভাকে নিজেদের একাডেমিতে নিলে। মেসির চিকিৎসার দায়িত্বও নিয়েছিল কাতালান ক্লাবটি। এরপর ক্যাম্প ন্যু থেকে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু অথবা স্তদ দি ফ্রান্স থেকে ওয়েম্বলির সবুজে ছোট্ট দুটি পায়ে মেসি যা রচনা করেছেন, সেগুলোকে রূপকথা ছাড়া আর কিই বা বলা যায়!
সোনালীনিউজ/এআর