• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্মরণীয় ৩ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা জানালেন তামিম


ক্রীড়া ডেস্ক জুলাই ৮, ২০২৩, ০৯:৪১ এএম
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্মরণীয় ৩ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা জানালেন তামিম

ঢাকা: আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পরদিন চট্টগ্রামে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। 

নাটকীয় নানা ঘটনাপ্রবাহের পর শুক্রবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এরপর প্রত্যাহার করেন অবসরের ঘোষণা। 

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা ও আলোচনার সেই অভিজ্ঞতা দেশের শীর্ষস্থানীয় এক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তামিম। সোনালীনিউজের পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা....

“চট্টগ্রাম থেকে সকালেই ফিরে আসি ঢাকায়। আগেই সেটি প্ল্যান করা ছিল। আমার ফোন কখনও বন্ধ, কখনও ‘আনরিচেবল’ অবস্থায় ছিল। সত্যি বলতে, অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর এত এত ফোন, ম্যাসেজ, এসব ভালো লাগছিল না। পরিবারের সঙ্গে একটু নিজের মতো থাকতে চাচ্ছিলাম। কখনও কখনও ফোন খুলেছি বটে, তবে কারও কল বা ম্যাসেজে সেভাবে সাড়া দেইনি।”

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আগেও অনেকবার দেখা হয়েছে। কিন্তু এবারের দেখাটা অন্যরকম এবং দারুণ আনন্দের। সেটা শুধু অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার কারণেই নয়, আরও বেশি কিছু কারণে। খুবই সারপ্রাইজড হয়েছি। অবশ্যই ভালোও লেগেছে। সবকিছু তো বলা যায় না, তবে কিছুটা বলতে পারি।”

“এদিকে মাশরাফি ভাইেয়র কল তো ইগনোর করার কোনো উপায়ই নেই। সেটা আমি কখনোই করিনি। অবসরের ঘোষণার পর ভাইয়ের সঙ্গে ম্যাসেজে কথা হয়েছিল। আজকে দুপুরে আবার তার ফোন পেলাম। ভাই বললেন, ‘কীরে, প্রধানমন্ত্রী তোকে খুঁজতেছে, তোর কোনো খবর নাই!’ আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। কালকেও এরকম একটা খবর ছড়িয়ে পড়েছিল, সাংবাদিকদের কয়েকজন আমার কাছে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি তো হেসেই উড়িয়ে দিয়েছি, কারণ আসলে এরকম কিছু হয়নি। আজকে মাশরাফি ভাই বলার পর বললাম, ‘কোথায়, আমি তো জানি না!’ উনি তখন বললেন যে প্রধানমন্ত্রী উনাকে বলেছেন। ভাই আমাকে বললেন দ্রুত রেডি হতে।”

“দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে আমরা যাই গণভবনে। কক্ষে পা দেওয়া মাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, ‘কি তামিম, কী সব পাগলামো নাকি করছো! এসব করলে তো চলবে না। সবকিছু মাথা থেকে সরিয়ে ফেলো…।’ তিনি সবসময় এত আন্তরিক ও অধিনায়ক নিয়ে কথা বলেন, কোনো জবাব থাকে না। আমি শুধু হাসলাম।” 

“তার পর কথা চলল দীর্ঘক্ষণ। আমার জীবনের এটি অনেক বড় স্মরণীয় এক ঘটনা। যেটি বললাম, আগেও অনেকবার অনেক জায়গায় উনার সঙ্গে দেখা হয়েছে। কিন্তু আজকেরটি অন্যরকম।” 

“শুরুতে মাশরাফি ভাইয়ের সামনে আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে আলাদা করে কথা বলেছেন, সেখানে আমি আর আয়েশা ছিলাম শুধু। পাপন ভাই আসার পরও একসঙ্গে সবার কথা হয়েছে। তবে ২ ঘণ্টার বেশি সময় মনে হয় আলাদা করেই কথা বলেছেন আমার সঙ্গে।” 

“আমার অবসরের কারণ আমি ব্যাখ্যা করেছি উনার কাছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক কিছুও বলেছি, যতটা সম্ভব। উনি সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে সব শুনেছেন, প্রশ্ন করেছেন, নিজে থেকে অনেক কিছুই জানতে চেয়েছেন। খুব আন্তরিকভাবেই সব কিছু শুনেছেন, কথা বলেছেন।” 

“ফিটনেস নিয়ে মিডিয়ায় কথা বলার প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আমি পাপন ভাইয়ের সামনেই বলেছি যে, ‘আমি তো কোচের সঙ্গে কথা বলেই সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে কথা বলেছি। কোচ তো কনভিন্সড ছিলেন। এরপর যদি কিছু হয়ে থাকে, পাপন ভাই একটি মিডিয়াকে যেভাবে বলেছেন, সেটা আমার খারাপ লেগেছে। তাকে হয়তো কেউ ভুল তথ্য দিয়েছে।’ পাপন ভাইও হয়তো সেটা তখন বুঝতে পেরেছেন।” 

“তবে পাপন ভাইয়ের সেই কথাই যে অবসরের কারণ নয়, প্রধানমন্ত্রী তা বুঝতে পেরেছেন। উনি বলেছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু খেলায় ফিরতে হবে। শুধু তা-ই নয়, চট্টগ্রামে যে লোকে মিছিল করছে, অনেকে কান্নাকাটি করেছে, এসব ছবি-ভিডিও দেখে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘দেখো, শুধু আমার কথা নয়, মানুষের কথা ভাবো। কত মানুষ তোমাকে ভালোবাসে। সেটির মূল্য দিতে হবে না?’ দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন এভাবে বলেন, এরপর তো আর কিছু বলার থাকে না।”

“তবে আমি বলেছি যে আমার একটু নিজের মতো সময় লাগবে এক-দেড় মাস। উনি বলেছেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার যে কিছু অসুস্থতা আছে, সেসবের জন্য কোথায় কোন ডাক্তারের কাছে গেলে ভালো হবে, সেসব পরামর্শও দিলেন। এই সময়টায় কীভাবে কী করতে পারি, এসব কথাও বললেন। উনার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ।” 

“অধিনায়কত্বের কথা আমি কিছু বলিনি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কিছু বলেনি। উনি বলেছেন যে, ‘তোমাকে বিশ্বকাপে মাঠে থাকতে হবে, আর কোনো কথা নেই।’ মাত্রই এত কিছু হলো, এখনই ভাবতে চাই না যে অধিনায়কত্ব করব নাকি শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে থাকব। ফেরার পর সেটা নিয়ে ভাবব।” 

“প্রধানমন্ত্রী অনেক ব্যক্তিগত গল্পও করেছেন। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়েছিলাম আমি আর আয়েশা। সেই কথা উনাকে বললাম। তখন উনি বঙ্গবন্ধু ও তাদের পরিবারের অনেক কথা বললেন। কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে কান্না করে ফেললেন। তার অনুভূতিগুলো আমাদেরও টাচ করেছে খুব।” 

“আয়েশার সঙ্গেও অনেক কথা বলেছেন উনি। আয়েশাকে মাঠে নিয়ে যাই না, খেলা দেখতে নিয়ে যাই না বলে আমাকে বকাও দিলেন বেশ! পরে আয়েশাকে তার ফোন নম্বর দিয়ে বললেন, ‘এরপর যদি তামিমের মাথায় কোনো উল্টাপাল্টা ভাবনা আসে, তুমি সরাসরি আমাকে ম্যাসেজ দেবে আর ওকে নিয়ে আসবে আমার আছে।’ উনার এই ধরনের অনেক গল্প আমি শুনেছি, এবার নিজের সঙ্গে হলো। অনেকের কাছে এসব অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু তার যে আন্তরিকতা, তা অসাধারণ।” 

“আমি চেষ্টা করব উনার এই ভালোবাসার সম্মান যেন রাখতে পারি। গতকাল থেকে সবার যে ভালোবাসা পেয়েছি ও জানতে পেরেছি, তাতেও আমি অনুপ্রাণিত। সাফল্যের গ্যারান্টি তো দিতে পারি না। তবে চেষ্টায় কমতি রাখব না, এটা কথা দিতে পারি।”

সোনালীনিউজ/এআর

Wordbridge School
Link copied!