ঢাকা: একরকম জিরো থেকেই হিরো হলেন ইংল্যান্ডের পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড। শুরুটা করেছিলেন তীক্ত অভিজ্ঞতা দিয়ে। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্যারিয়ারের অষ্টম ম্যাচটি খেলতে নেমে যুবরাজ সিংয়ের কাছে ছয় বলে ৬ ছক্কা হজম করেছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড।
ভিষণ্নতা ঝেঁকে বসেছিল। ক্যারিয়ারটাই হুমকির মুখে পড়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৬টি বছর সর্বোচ্চ স্তরের ক্রিকেটে সাফল্যের সঙ্গে টিকে থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রডের এই ঘোষণা এসেছে টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি পেসার আর অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক হিসেবে।
ওভাল টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ব্রডের অবসর ঘোষণার পর চারদিকে চলছে তার কীর্তির বন্দনা। গ্লেন ম্যাকগ্রার চোখে ব্রড একজন ‘চ্যাম্পিয়ন’ খেলোয়াড়, আর মাইকেল ভনের চোখে পরবর্তী প্রজন্মের ‘রোল মডেল’।
এবার ৩৭ বছর বয়সী ব্রডকে নিয়ে কথা বললেন যুবরাজ সিং। ১৬ বছর আগে যে ব্যাটসম্যানের ছয় ছক্কায় অনেকেই ব্রডের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি দেখে ফেলেছিলেন, সেই যুবরাজ ব্রডকে অভিহিত করেছেন ‘কিংবদন্তি’ হিসেবে। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের স্বীকৃতি দিতে গিয়ে জানিয়েছেন কুর্নিশও।
ব্রডের বলে যুবরাজের ছয় ছক্কার ম্যাচটি ছিল ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্বে, দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে। আগের দুই ম্যাচ হেরে যাওয়ায় ইংল্যান্ডের বিদায় নিশ্চিতই ছিল। সেদিন ভারতের বিপক্ষে ইনিংসের উনিশতম ওভার করতে গিয়ে সব বলে ছয় হজম করেন ব্রড। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেটিই এক ওভারে ৬ ছয়ের প্রথম ঘটনা। এর বছরখানেক আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন ব্রড। ক্যারিয়ারের শুরুর ওই ধাক্কা সামলে উঠতে পারবেন কি না, এ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন।
দেড় দশকের বেশি সময় পর ব্রড আজ যখন মাথা উঁচু করে ক্রিকেট ছাড়তে যাচ্ছেন, তখন ফিরে ফিরে আসছে ডারবানের সেই ম্যাচটির গল্প। শনিবার অবসর ঘোষণার পরের সংবাদ সম্মেলনেও এটি ছিল অবধারিত প্রশ্ন। এক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করেন, ক্রিকেট বিশ্বে আপনি প্রথম পরিচিত হয়ে ওঠেন যুবরাজ সিংয়ের ৬ ছয়ে। ১৬ বছর পর পেছনে ফিরলে কি সেদিনের সেই মানুষটা, বোলারটা আর লম্বা চুলের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারেন? তখন থেকে এখন পর্যন্ত বিবর্তনটাকেই বা কীভাবে দেখেন?
দীর্ঘ প্রশ্নে ব্রডের উত্তরও ছিল দীর্ঘ। তবে ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাওয়ার কথাটাই সারমর্ম, ‘ওটা খুবই কঠিন দিন ছিল। আমার বয়স তখন কত, ২১, ২২? প্রচুর শিখেছি। আমি সেই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জেনেছি সেই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমি ভালো পারফরমার ছিলাম না। তখন দ্রুত বলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যেতাম, দৌড়ানোর আগে খুব একটা প্রস্তুতি নিতাম না। আমার কোনো ফোকাস ছিল না। সেই অভিজ্ঞতার পরই আমি আমার ‘যোদ্ধা ভাব’ তৈরি করতে শুরু করি।’
ইংল্যান্ডের জন্য ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না বলে নিজেকে কিছুটা সান্ত্বনা দিতে পেরেছেন বলে জানান ব্রড, ‘ডেড রবার ম্যাচ হওয়ায় এই অনুভূতিটা হয়নি যে আমি আমার দলকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে ফেলেছি বা এ রকম কিছু। তবে আমি মনে করি, এটি আমাকে এখনকার এই প্রতিযোগী হিসেবে গড়ে তুলেছে এবং আমাকে অনেক বেশি এগিয়ে নিয়ে গেছে।’
ব্রড যে কতটা এগিয়ে গেছেন, সেটা টেস্টে তার ৬০০ উইকেটপ্রাপ্তি আর অ্যাশেজে স্মরণীয় সব স্পেলই বলে দিচ্ছে। যার সুবাদে ডারবানের রাতটিকে অস্বস্তিকর করে তোলা সেই যুবরাজের কাছ থেকেই পেয়েছেন কিংবদন্তির স্বীকৃতি, ‘স্টুয়ার্ট ব্রড, কুর্নিশ নাও। অবিশ্বাস্য টেস্ট ক্যারিয়ারের জন্য তোমায় অভিনন্দন। তুমি লাল বলের সেরা এবং সবচেয়ে ভয়ংকর বোলারদের একজন, একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি। তোমার পথচলা এবং সংকল্প দুর্দান্ত অনুপ্রেরণার। ব্রডি, তোমার পরবর্তী পর্বের জন্য শুভকামনা’-টুইটে লিখেছেন যুবরাজ।
সোনালীনিউজ/এআর