• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

ব্রডের বিদায়ী ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয়, অ্যাশেজ শেষ সমতায়


ক্রীড়া ডেস্ক আগস্ট ১, ২০২৩, ১২:১৬ পিএম
ব্রডের বিদায়ী ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয়, অ্যাশেজ শেষ সমতায়

ঢাকা : স্টুয়ার্ট ব্রডের অফ স্টাম্পের বল অ্যালেক্স কেয়ারির ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ল কিপার জনি বেয়ারস্টোর গ্লাভসে। দুই হাত প্রসারিত করে ডানা মেলে দিলেন ইংলিশ পেসার। গ্যালারিতে তার পরিবারের সদস্যদের মুখে চওড়া হাসি ধরা পড়ল টিভি ক্যামেরায়। ব্রডকে একে একে আলিঙ্গনে বাঁধলেন সতীর্থরা। পেশাদার ক্রিকেটে নিজের বিদায়ী ম্যাচ তিনি স্মরণীয় করে রাখলেন শেষ বলে উইকেট নিয়ে। দুর্দান্ত এক জয়ে সমতায় সিরিজ শেষ করল ইংল্যান্ড।

ওভালে অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্টের শেষ দিনে ব্যাট-বলের দারুণ লড়াইয়ের পর স্বাগতিকরা জিতল ৪৯ রানে।

৩৮৪ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় বিনা উইকেটে ১৪০ ও একটা পর্যায়ে ৩ উইকেটে ২৬৪ রানের শক্ত অবস্থানে ছিল অস্ট্রেলিয়া। ৭ উইকেট হাতে রেখে দরকার ছিল ১২০ রান। এরপরই নাটকীয় ধসে গুটিয়ে যায় তারা ৩৩৪ রানে।

অস্ট্রেলিয়ার ‘ছাইদানি’ ধরে রাখা নিশ্চিত হয়েছিল আগেই। এই হারে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাদের সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়ল আরও। প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর ইংল্যান্ড সিরিজ শেষ করল ২-২ সমতায়।

রান তাড়ায় ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাওয়াজা ও স্টিভেন স্মিথের ফিফটি, ৯৫ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি- কিছুই শেষ পর্যন্ত কাজে এলো না।

দ্বিতীয় সেশনে বৃষ্টির বাগড়ায় এমনকি ড্রয়ের সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছিল একটা সময়। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড পেল নাটকীয় জয়। যেখানে বড় অবদান পেসার ক্রিস ওকস ও স্পিনার মইন আলির। দুজনে মিলেন নেন সাত উইকেট। ওকসের শিকার সর্বোচ্চ চারটি।

শেষের দুই উইকেট নিয়ে শেষটা রাঙান ব্রড।

এই ম্যাচে রান হলো মোট ১ হাজার ৩০৭। কোনো ব্যক্তিগত শতক ছাড়া এক টেস্টে সবচেয়ে বেশির রানের রেকর্ড এটিই। পেছনে পড়ে গেল ১৯২৮ সালে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড ম্যাচের ১ হাজার ২৭২ রান।   

প্রথম চার দিন উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হলেও সোমবার শেষ দিন পেসারদের জন্য মুভমেন্ট ছিল যথেষ্ট।

আগের দিন বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগের ওভারে মার্ক উডের বাউন্সার খাওয়াজার হেলমেটে লাগার পর বল পরিবর্তন করেন আম্পায়াররা। বলটি দেখতে আগের বলের চেয়ে চকচকে। যা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ও এই সিরিজে স্কাই স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকার রিকি পন্টিং। শেষ দিনেও ধারাভাষ্যকক্ষে ওই বল নিয়ে আলোচনা হয় প্রবল।

বিনা উইকেটে ১৩৫ রান নিয়ে শেষ দিনের ব্যাটিং শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। মেঘলা আকাশের নিচে দিনের শুরু থেকে দারুণ বোলিং করেন ব্রড-ওকসরা। যার পুরস্কারও মেলে দ্রুত। ওকস পরপর দুই ওভারে দারুণ দুটি ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন থিতু হওয়া দুই ওপেনারকে। অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যাওয়া বলে কট বিহাইন্ড হন ওয়ার্নার। আরেক বাঁহাতি খাওয়াজা হন এলবিডব্লিউ।

ইংল্যান্ডে নিজের শেষ টেস্টে ১০৬ বলে ৯ চারে ওয়ার্নার করেন ৬০ রান। ১৪৫ বলে ৮ চারে খাওয়াজার ব্যাট থেকে আসে ৭২। সিরিজ শেষ করলেন তিনি সর্বোচ্চ ৪৯৬ নিয়ে।

দিনে প্রথমবার আক্রমণে এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারে সাফল্য পান মার্ক উড। ১৩৯ কিলোমিটার গতির ডেলিভারিতে খোঁচা দিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়েন মার্নাস লাবুশেন।

একটা পর্যায়ে বিনা উইকেটে ১৪০ থেকে অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৩ উইকেটে ১৬৯।

সেখান থেকে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন ট্রাভিস হেড ও স্মিথ। বাউন্ডারি আসতে থাকে প্রায় প্রতি ওভারে। তাদের জুটির পঞ্চাশ রান স্পর্শ করে স্রেফ ৬১ বলে।

লাঞ্চের আগে শেষ ওভারে স্মিথকে ফেরানোর সুযোগ হারান বেন স্টোকস। মইনের লাফিয়ে ওঠা বল ডিফেন্স করার চেষ্টায় স্মিথের গ্লাভস ছুঁয়ে গায়ে লেগে উঠে যায় পেছনে, লেগ স্লিপে লাফিয়ে এক হাতে বল মুঠোয় জমান ইংলিশ অধিনায়ক। কিন্তু উদযাপনের সময় তার হাঁটুর সঙ্গে হাত লেগে ফসকে যায় বল।

আম্পায়ার শুরুতে আউট দেননি। স্টোকস নেন রিভিউ। রিপ্লেতে স্মিথের গ্লাভসে বলের স্পর্শের প্রমাণ মিললেও স্টোকস ক্যাচ সম্পন্ন করার আগেই বলের নিয়ন্ত্রণ হারানোয় নিয়ম অনুযায়ী ‘নট আউট’ থেকে যান স্মিথ। তখন ৩৯ রানে খেলছিলেন তিনি।

লাঞ্চের পর খেলোয়াড়রা মাঠে নামতেই শুরু হয় বৃষ্টি। এতে ভেস্তে যায় দ্বিতীয় সেশন। বিকেল সোয়া চারটার পর আবার যখন খেলা শুরু হলো, ৫২ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার চাই ১৪৬ রান।

এ যাত্রায় দেখেশুনে খেলে দলকে এগিয়ে নেন স্মিথ ও হেড। স্মিথ ম্যাচে দ্বিতীয় ফিফটি পূর্ণ করেন ৮৯ বলে। অস্ট্রেলিয়ার দরকার তখন আর ১২০ রান।

এরপরই নাটকীয়ভাবে বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। ১৮ বলের মধ্যে ১১ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। মইন ও ওকস নিজের পরপর দুই ওভারে ধরেন একটি করে শিকার।

মইনের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে স্লিপে ধরা পড়েন হেড (৭০ বলে ৪৩)। ওকসের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে স্মিথ (৯৪ বলে ৫৪) ক্যাচ দেন দ্বিতীয় স্লিপে।

বেয়ারস্টোর এক হাতে নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন মিচেল মার্শ। মিচেল স্টার্ককে নিজের চতুর্থ শিকারে পরিণত করেন ওকস।

এরপর দলকে কিছুটা এগিয়ে নেন কেয়ারি ও প্যাট কামিন্স। মইনের বলে লেগ স্লিপে স্টোকসের হাতে কামিন্স ধরা পড়তেই আরেকবার উল্লাসে মাতে ওভালের গ্যালারি।
রোমাঞ্চের ভেলায় চেপে দুর্দান্ত জয়ে ব্রডের বিদায় রাঙাল ইংল্যান্ড

কেয়ারি ও টড মার্ফির নবম উইকেট জুটিতে আবার কিছুটা আশা জাগে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে। মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠা ৩৫ রানের জুটি ভাঙেন ব্রড। দারুণ এক ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন মার্ফি।

এরপর ব্রডের ওই শেষ শিকার আর ইংল্যান্ডের জয়োল্লাস। মুখোমুখি হওয়া শেষ বলে মেরেছিলেন ছক্কা, পেশাদার ক্রিকেটে নিজের শেষ বলে নিলেন উইকেট। রূপকথার এক সমাপ্তি দিয়ে শেষ হলো ব্রডের ক‍্যারিয়ার।

এই ম্যাচের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি। টেস্টে ৬০৪ উইকেট নিয়ে খেলা শেষ করলেন ৩৭ বছর বয়সী পেসার। পেস বোলিংয়ে টেস্ট ইতিহাসে ব্রডের চেয়ে বেশি উইকেট আছে কেবল তার বোলিং জুটির দীর্ঘদিনের সঙ্গী  জেমস অ্যান্ডারসনের, ৬৯০টি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল‍্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৮৩

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২৯৫

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৩৯৫

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৮৪) (আগের দিন ১৩৫/০) ৯৪.৪ ওভারে ৩৩৪ (ওয়ার্নার ৬০, খাওয়াজা ৭২, লাবুশেন ১৩, স্মিথ ৫৪, হেড ৪৩, মার্শ ৬, কেয়ারি ২৮, স্টার্ক ০, কামিন্স ৯, মার্ফি ১৮, হেইজেলউড ৪*; ব্রড ২০.৪-৪-৬২-২, অ্যান্ডারসন ১৪-৪-৫৩-০, ওকস ১৯-৪-৫০-৪, মইন ২৩-২-৭৬-৩, রুট ৯-০-৩৯-০, উড ৯-০-৩৪-১)

ফল: ইংল্যান্ড ৪৯ রানে জয়ী

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ২-২ সমতায় শেষ

ম্যান অব দা ম্যাচ: ক্রিস ওকস

ম্যান অব দা সিরিজ: মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া), ক্রিস ওকস (ইংল্যান্ড)

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!