ঢাকা: যদিও এখন আর ‘অধিনায়ক সাকিব’ কথাটায় সেইরকম উত্তেজনা কাজ করেনা ক্রিকেট ভক্তদের মনে। যতই মাথায় মুকুট-টুকুট পরিয়ে দেওয়া হোক না কেন, সেটি আর সেভাবে দ্যোতনা জাগায় না।
যদিও গতকাল ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তার নাম ঘোষণার বাড়তি তাৎপর্য আছে। প্রথমত, আবারও তিন সংস্করণেই অধিনায়ক এখন সাকিব। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অভিন্ন অধিনায়ক ২০১৪ সালের পর এই প্রথম। তার চেয়ে যা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো, সাকিবকে ওয়ানডে অধিনায়ক করা হয়েছে যে দুটি টুর্নামেন্টের জন্য, তার একটি বিশ্বকাপ। অর্থাৎ আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেবেন সাকিব আল হাসান।
বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ আছে। এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপের মাঝখানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। বড় দুই টুর্নামেন্টের মাঝখানে স্যান্ডউইচ হয়ে থাকায় দ্বিপক্ষীয় সিরিজটি সেভাবে আলোচনায় আসছে না। তবে আপাতত ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিবের কার্যতালিকায় এটিও আছে। বিশ্বকাপের পরও সাকিব তিন সংস্করণেই অধিনায়ক থাকবেন কি না, তা নিয়ে একটু ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।
দেশ-বিদেশে সাকিব যেভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে বেড়ান, এর সঙ্গে তিন সংস্করণেই অধিনায়কত্ব করার চাপ নিতে পারা না-পারার সঙ্গে যা সম্পর্কিত। মাঠে আর মাঠের বাইরের ব্যস্ততা অবলীলায় সামলানোর দক্ষতা ভুল বোঝালেও বয়স তো আর তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। সেটি ৩৬ পেরিয়ে গেছে সেই মার্চেই।
সাকিব পারবেন কি পারবেন না, সেই আলোচনা আপাতত তুলে রাখলে ইতিবাচক কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়। কারণ এই বড় দুই টুর্নামেন্টই হতে পারে সাকিবের ক্যারিয়ারের শেষ। তাই ঘোষিত তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে শেষটা অবশ্যই রাঙাতে চাইবেন বাংলাদেশের পোষ্টার বয়।
বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার তিনি। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে ৬০৬ রান এবং ১১ উইকেট নিয়ে অনন্য রেকর্ড গড়েন সাকিব। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ১৫ তম ওয়ানডে অধিনায়কের আবারও সিংহাসনে ফেরার মঞ্চ প্রস্তুত।
হ্যাঁ, সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্বের অন্ধকার অধ্যায়ও আছে। ২০১১ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত নেতৃত্ব পান তিনি। সেবার দেশের মাটিতে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। তবে, সেই স্বপ্নের ভরাডুবি হয়।
বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের বাঁধাই টপকাতে পারেনি। তিনটা ম্যাচ জিতেছিল অবশ্য দল। এর মধ্যে একটা জয় এসেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বাকি দুটো জয় আসে আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। তবে, সেই বিশ্বকাপটা নিশ্চিতই ভুলে যেতে চাইবেন সাকিব। কারণ, সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপে আর কখনওই সাকিব পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়কত্ব পাননি। এবার পেয়েছেন। এবার নিশ্চয়ই আগের বাজে সময়টা সাকিব ভুলিয়ে দিতে চাইবেন স্মরণীয় সাফল্য দিয়ে।
ক্যারিয়ারের শেষটা রঙিন করে রাখার এর চেয়ে ভাল কোনো মঞ্চ সাকিবের নিশ্চয়ই আর পাওয়ার উপায় ছিল না! আর এই মঞ্চে সাকিব সফল হলে লাভটাও তো বাংলাদেশেরই।
এদিকে এশিয়া কাপের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডে উপেক্ষিতই থেকে গেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অবশ্য এটা আগে থেকেই অনুমান যোগ্য ছিল। কিন্তু, অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বলেই তার বাদ পড়ার ব্যাখ্যা দিতে হল প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে। তিনি জানালেন, টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনায় এখন আর নেই রিয়াদ। এমনকি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানেরও এই সিদ্ধান্তে মত আছে।
মিরপুরের মিডিয়া সেন্টারে এশিয়া কাপের দল ঘোষণার জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচক এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে অনেক লম্বা আলোচনা হয়েছে প্রথম দিকে। তারপর অনেক আলোচনা করার পর টিম ম্যানেজম্যান্ট আমাদেরকে একটা পরিকল্পনা দেয়, সামনে কীভাবে কোন দেশের সঙ্গে খেলবে, কী পরিকল্পনা। ওই চিন্তা ভাবনা করেই কিন্তু রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
অধিনায়ক সাকিবও রিয়াদকে জাতীয় দলে বিবেচনা করার পক্ষে নন। প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘ম্যানেজম্যান্টের পরিকল্পনাকে আমরা মনে করেছি অবশ্যই এটা ভালো। ওদের সঙ্গে যেহেতু হেড কোচের একটা পরিকল্পনা আছে টিম কীভাবে পরিচালনা করা হবে। সব আলোচনা হয়েছে, আমাদের অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তবে, রিয়াদ ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ফিটনেস ক্যাম্পে। এই ক্যাম্পে মূলত জাতীয় দল আর তার আশেপাশে থাকা সব ক্রিকেটারকেই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ইয়ো ইয়ো টেস্টে তার স্কোর কেবল ১৭, যেখানে বিসিবির নির্ধারিত বেঞ্চমার্ক ছিল ১৮.৫। রিয়াদের বয়স প্রায় ৩৮। ফিটনেস নিয়ে সমস্যা থাকাটাও তাই স্বাভাবিক।
তার ওপর রিয়াদ টানা তিনটি আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলেননি। ফলে, তাকে জাতীয় দলের বাইরেই বলা যায়। রিয়াদ পারফরম্যান্স ও ফিটনেস নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন কোচ চন্ডিকা।
তার ব্যাটিং রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে গেছে, হ্যান্ড আই কম্বিনেশন নেই বললেই চলে। স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেন না ঠিক মত। এমনকি এমন ম্যাচ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যেখানে রিয়াদ ফিল্ডিংয়ে বড় কোনো ভুল করছেন না।
ফলে, নির্বাচকরাও তার ওপর ভরসা করার কোনো কারণ দেখছেন না। তবে এশিয়া কাপের দলে না থাকলেও। বিশ্বকাপের আশা একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি মাহমুদউল্লাহর। বোর্ড কর্তাদের কণ্ঠেও তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বিশ্বকাপ বিবেচনায় এশিয়া কাপের ১৭ সদস্যের সঙ্গে অপেক্ষমান তালিকায় আছেন আরও ৮ ক্রিকেটার। এইসব সদস্য ভারতে যাওয়ার ভিসা প্রসেসিং করলেও মাহমুদউল্লাহর এখনো কোনো তোড়জোড় দেখা যায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলের সঙ্গী হতে পারেন কি না মাহমুদউল্লাহ সেটা জানতে ভক্তদের তাই অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :