• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
এশিয়া কাপ

১১ বছর পর এমন লজ্জাজনক ফাইনাল!


ক্রীড়া ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩, ০৭:২৮ পিএম
১১ বছর পর এমন লজ্জাজনক ফাইনাল!

ঢাকা: প্রেমাদাসায় এশিয়া কাপের ফাইনালে যা হয়েছে, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। টসে জিতে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং তো নিল না, যেন মৃত্যুকূপে ঝাঁপ দিল! 

বৃষ্টির কারণে ৪০ মিনিট দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে ৫.৪ ওভারে ১২ রান তুলতে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকেরা। মোহাম্মদ সিরাজ তখন পর্যন্ত ৩ ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়েই নেন ৫ উইকেট, বুমরার উইকেট ছিল ওই প্রথমটাই।

লড়াই না বলে আত্মসমর্পণ বলাই ভালো। ১ ঘণ্টা ২৯ মিনিট এবং ১৫.২ ওভার স্থায়ী হওয়া শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ মাত্র ৫০ রানেই। শেষ পর্যন্ত ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে সিরাজই ধসিয়ে দিয়েছেন স্বাগতিকদের। 

২.২ ওভার বল করে মাত্র ৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়াও। শুরুতে ভারতীয় পেসারদের গতি আর মুভমেন্ট অস্বস্তিতে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু একটু সময় কাটালেই ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট হওয়ার কথা ছিল বেশ সহজ। শ্রীলঙ্কা ব্যাটসম্যানরা থাকলেন না সে সময়টুকুই!

শ্রীলঙ্কার দর্শকেরা অবশ্য ওই পরিস্থিতিতেও উপলক্ষ পেলে হাততালি দিতে ছাড়ছিলেন না। নয় নম্বর ব্যাটসম্যান দুশান হেমন্তের মারা এক বাউন্ডারিতে যেমন বেশ উল্লাসমুখর হয়ে উঠল গ্যালারি। ১৪.১ ওভারে রানটা ৫০ পূর্ণ হওয়ার পরও গ্যালারি থেকে ভেসে এসেছে হাততালির শব্দ, যদিও ইলেকট্রিক স্কোরবোর্ডে তখন স্কোরটা দেখাচ্ছিল এমন-৫০/৮! এরপর তো ওই ৫০-এই পড়েছে শেষ দুই উইকেটও।

দীর্ঘ ১১ বছর পর ঘরের মাঠে আরেকটি ফাইনাল দেখতে আসা শ্রীলঙ্কার মানুষের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত দাসুন শানাকার দলের এমন ব্যাটিং বিপর্যয়। শানাকাই আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দেশের ক্রিকেট পাগল জনতার জন্য হলেও এশিয়া কাপের ফাইনালে তারা ভালো কিছু করতে চান। টসে জেতা পর্যন্ত সব ভালো ছিলও। কিন্তু খেলা শুরু হতেই ভোজবাজির মতো যা ঘটে গেল, তাতে রীতিমতো অবিশ্বাস্য এক ফাইনালই দেখা হচ্ছে প্রেমাদাসার দর্শকদের।

২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কায় এবারের এশিয়া কাপের আগে আর কোনো টুর্নামেন্ট হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারা সেই বিশ্বকাপের ফাইনালটাই তাই এত দিন হয়ে ছিল প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার খেলা সর্বশেষ কোনো ফাইনাল। শ্রীলঙ্কার মানুষও ঘরের মাঠে আর কোনো ফাইনাল দেখার সুযোগ পায়নি এত দিন।

সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কায় টুর্নামেন্ট হলো এবারই প্রথম। সেটিও পাকিস্তানে এশিয়া কাপ খেলা নিয়ে ভারত বেগড়বাই করায়। ‘যৌথ টুর্নামেন্টে’ শেষ পর্যন্ত মূল আয়োজক পাকিস্তানকে বিদায় করে এত বছর পর শ্রীলঙ্কার মাঠে হওয়া টুর্নামেন্টকে যেন সার্থক রূপ দিতে চাইল শানাকার দল। কিন্তু এত দূর এসে শেষ পর্যন্ত এ কেমন ফাইনাল!

ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল না হওয়ায় টেলিভিশন সম্প্রচারের আয়ে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও পড়তে পারে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের তো আর সেটা নিয়ে চিন্তা নেই। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘরের স্টেডিয়ামে বসে নিজ দেশের খেলা উপভোগের চেয়ে আনন্দের আর কী আছে! এই ফাইনাল নিয়ে শ্রীলঙ্কার মানুষের আগ্রহের পারদটা কোথায় উঠেছিল, তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন।

একটি বাড়তি তথ্য সে অনুমান আরও সহজ করে দেবে। পরশু বিকেলে একবার, আজ ম্যাচ শুরুর আগে আরও দুইবার-গত দুই দিনে মোট তিনবার শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, ফাইনালের সব টিকিট বিক্রি শেষ। কেউ যেন অযথা টিকিট কাউন্টারে ভিড় না করেন। এসব টিকিট যে শুধু শ্রীলঙ্কানরাই কিনেছেন, তা নয়। ভারত মহাসাগরের ওপারের দেশ ভারত থেকেও এসেছেন অনেক দর্শক। আজ গ্যালারিতে তাদের সরব উপস্থিতি আরও স্পষ্ট করে তুলছে সবার হাতে হাতে থাকা ভারতের পতাকা। শ্রীলঙ্কার একটার পর একটা উইকেট পতনে তাদের উল্লাস ধ্বনি।

এসএলসির ‘আর টিকিট নেই’ ঘোষণার পরও আজ মাঠে এসে দেখা গেল, প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের কাছের টিকিট কাউন্টারে প্রত্যাশীদের দীর্ঘ সারি। স্টেডিয়ামের দিকে যাওয়া খেত্তারামা টেম্পল রোডে লেগে আছে যানজট। এশিয়া কাপের অন্য ম্যাচের দিনে স্টেডিয়ামের যেসব গেটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুটা শিথিল ছিল, আজ সেখানেও বেশ কড়াকড়ি। মেইন রোড থেকে স্টেডিয়ামের দিকে ঢোকার পথে অন্তত বার তিনেক নিরাপত্তা তল্লাশি পার হতে হয়েছে দর্শকদের।

কিন্তু মাঠে ঢুকে দ্বন্দ্বে পড়ে যেতে হলো, রাস্তায় দেখে আসা দর্শকেরা গ্যালারিতে এসে বসবেন কোথায়! ২৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের গ্যালারি যে ততক্ষণে পরিপূর্ণ! খেলা শুরুর কিছু সময় পর প্রেসবক্সে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের মিডিয়া ম্যানেজার প্রসন্ন রডরিগো জানালেন, ২৫ হাজারের চেয়েও বেশি দর্শক আছে মাঠে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ২৭ হাজারের মতো।

এআর

Wordbridge School
Link copied!