ঢাকা : বড় ভাই রিয়াজ আফ্রিদি ছিলেন পেসার। যিনি পাকিস্তানের হয়ে খেলেছিলেন একটি টেস্টও। ক্যারিয়ার খুব বেশি লম্বা হয়নি বলে নিজের স্বপ্ন ছোট ভাই শাহিন শাহ আফ্রিদিকে দিয়ে পূরণ করতে চান রিয়াজ। ভাইয়ের হাতে তুলে দেন বল, জোগান অনুপ্রেরণা। শাহিনের ভেতরেও বুনে দেন ক্রিকেটের প্রতি ভালোলাগার বীজ। অনেক পরিচর্যায় সেই বীজ এখন রূপ নিয়েছে গাছে। সময় গড়াতে শাহিন নামের গাছটি থেকে সুমিষ্ট ফল পেতে শুরু করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট।
খাইবার জেলার লান্ডি কোটালে জন্ম ও বেড়ে ওঠেন শাহিন আফ্রিদি। সাত ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তিনি। তার মেন্টর রিয়াজ আফ্রিদি ছিলেন সবার বড়। স্থানীয় একটি ক্রিকেট মাঠে রিয়াজের সঙ্গে টেনিস বলে খেলে শাহিনের ক্রিকেট যাত্রা শুরু। ছোট ভাইয়ের প্রতিভা দেখে পরিবারকে মানিয়ে তাকে পেশোয়ারের খান ল্যাবরেটরিজ ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন রিয়াজ। এই ক্লাবটির হয়েই ২০১৭ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পা রাখেন শাহিন। গড়েন পাকিস্তানের হয়ে এই সংস্করণে অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। রাওয়ালপিন্ডির বিপক্ষে ওই ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি এই পেসার।
বল হাতে সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের ধাপ পেরিয়ে ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখেন আফ্রিদি, টি-টোয়েন্টি দিয়ে। ওই বছরই ওয়ানডে ও টেস্ট অভিষেক হয়ে যায় তার। এরপর আর পেছন পানে নয়, আফ্রিদি ছুটছেন কেবল সামনের দিকে। তিন সংস্করণেই এখন পাকিস্তানের বোলিং বিভাগের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তিনি। প্রতিপক্ষের জন্য হয়ে উঠেছেন এক আতঙ্কের নাম। তার গতি, নিখুঁত লাইন-লেংথের সঙ্গে ভয়ংকর ইয়র্কারে কুপোকাত হচ্ছেন তারকা সব ব্যাটসম্যানরা।
চলতি বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো না হলেও ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন আফ্রিদি। গত ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২০১৯ আসরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৫ রানে তার শিকার ছিল ৬টি। বৈশ্বিক আসরে পাকিস্তানের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে দুইবার পাঁচ উইকেট পেয়েছেন আফ্রিদি। কীর্তিটি আছে তার শ্বশুর ও পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদির। ২০১১ সালে কানাডা ও কেনিয়ার বিপক্ষে পাঁচটি করে উইকেট নিয়েছিলেন তারকা এই লেগ স্পিনার।
এবারের আসরে প্রথম তিন ম্যাচে ৪ উইকেট নেওয়া আফ্রিদির ফর্মে ফেরা নিঃসন্দেহে প্রতিপক্ষের জন্য ভীতির কারণ। আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে লড়াই পাকিস্তানের। আফগান ব্যাটসম্যানদের ভাবনায় তাই আফ্রিদি থাকবেন আলাদা করে। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত। ৫ ওয়ানডেতে ওভারপ্রতি গড়ে চারের একটু বেশি রান দিয়ে নিয়েছেন ১২ উইকেট। ম্যাচে চার শিকারও আছে একবার। চলতি বছর বল হাতে ভালোই উজ্জ্বল ২৩ বছর বয়সী আফ্রিদি। ১৬ ওয়ানডে খেলে পেয়েছেন ৩৩ উইকেট, ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন সাড়ে পাঁচের কাছাকাছি। এই পেসারের কাছ থেকে আজ আরেকটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের আশায় থাকবে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের তারকা ব্যাটসম্যানদের থামাতে আফগানিস্তান তাকিয়ে থাকবে ফজলহক ফারুকির দিকে। নতুন বলে উইকেট এনে দেওয়ার সামর্থ্যবান এই পেসারকে জ্বলে উঠতে হবে আপন আলোয়। কিন্তু বিশ্বকাপে এখনো তাকে চেনা রূপে দেখা যায়নি। চার ম্যাচে মাত্র দুটি উইকেট নিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী এই পেসার, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংলিশদের হারানো আফগানরা চেন্নাইয়ে পাকিস্তানকে চমকে দিতে হলে ফারুকিকে রাখতে হবে বড় অবদান।
শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে ২০১৭ সালে পা রাখেন ফারুকি, প্রথম শ্রেণির ম্যাচ দিয়ে। পরের বছর লিস্ট ‘এ’ ও এর পরের বছর টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় তার। ২০২১ সালে বিশ ওভারের ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পথচলা শুরু করেন তিনি। দেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডে খেলেন পরের বছর। এই সংস্করণে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই ঝলক দেখান ফারুকি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫৪ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। চারটি শিকারই ধরেন প্রথম স্পেলে নতুন বলে। পরপর দুই ওভারে নেন জোড়া উইকেট। ওই বছরের শেষ দিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ৪ উইকেট নেন বাঁহাতি এই পেসার।
পাকিস্তানের বিপক্ষে খুব বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই ফারুকির। মাত্র তিনটি ওয়ানডে খেলেছেন দলটির বিপক্ষে। ওভারপ্রতি সাড়ে ছয়ের বেশি রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। চলতি বছর ১৫ ওয়ানডে খেলে ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি তার শিকার ১৭ উইকেট। আর ভারতের মাটিতেও খেলার বেশ অভিজ্ঞতা আছে ফারুকির। গত দুই আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলেছেন তিনি। যদিও আহামরি কিছু করতে পারেননি, ৭ ম্যাচে নিয়েছেন ৬ উইকেট। এর আগে চেন্নাই সুপার কিংসে নেট বোলার হিসেবে ছিলেন ফারুকি। ভারতের কন্ডিশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন তিনি।
এমটিআই