ঢাকা: ৪২তম ওভারের চতুর্থ বল। লকি ফার্গুসনকে স্কয়ার লেগের দিকে খেলে ডাবলস। ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০টি সেঞ্চুরি হয়ে গেল তাতে বিরাট কোহলির।
ডাবলস পূর্ণ করার পর লাফ দিয়েছেন। ব্যাটটা রেখে খুলেছেন গ্লাভস, এরপর হেলমেট। এরপর নুইয়েছেন মাথা। নিজের আদর্শ শচীন টেন্ডুলকারের সামনে, তার মাঠে, তাকে ছাড়িয়ে গেলেন কোহলি। সেটিও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। স্ত্রী আনুশকা শর্মার উল্লাস আর কোহলির চোখ-মুখের ভাষায় বলে দেয় সব! এর আগে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে কোহলির সর্বোচ্চ ছিল ৩৫ রান। সেটি ছাড়িয়ে আজ প্রথম ফিফটি পেয়েছেন। এবার প্রথম সেঞ্চুরিও।
শচীনকে আদর্শ মেনেই ক্রিকেট শুরু করেছিলেন দিল্লির ছেলে বিরাট কোহলি। বয়সভিত্তিক সব পর্যায় পেরিয়ে এসেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের বড় মঞ্চে। তারপর একদিন বলা হলো, এই ছেলে শচীনের মত খেলে। নামের পাশে শচীনের সঙ্গে তুলনায় পথ ভোলেননি বিরাট। খেলে গেলেন এক যুগের বেশি সময়। আর আজ সেই শচীনের শহরেই ভাঙলেন তারই রেকর্ড। বিরাট কোহলি এখন ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক। মুম্বাইয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করলেন নিজের ৫০তম সেঞ্চুরি।
এবারের বিশ্বকাপেই একাধিকবার সুযোগ এসেছিল কোহলির সামনে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই গ্রুপপর্বে খেলেছিলেন ৯৫ রানের ইনিংস। সেদিন হয়নি শেষের দিকে মনোঃসংযোগ হারানোর কারণে। সুযোগ ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেও। সেদিনও মুম্বাইয়ের এই মাঠেই শতকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি। তবে শেষ পর্যন্ত ওটা আর হয়নি। ৮৮ রানে থামতে হয় তাকে।
সেমিফাইনালের মত বড় মঞ্চে আগে কখনোই ভালো কিছু করা হয়নি তার। আগেরদিন কলকাতায় নিজের জন্মদিনে কিছুটা ধীরগতিতে খেলেছিলেন বিরাট। নিজের জন্য খেলছেন, এমন অভিযোগটাও সেদিন শুনতে হয়েছে। সেমিফাইনালে যেন সেসব বিতর্কই মিটিয়ে ফেলতে চাইলেন। শুরু থেকে সাবধানী ছিলেন সত্য। তবে সময় বুঝে নিজের ইনিংসে গতি এনেছেন। রান তুলেছেন নিজের স্বভাবসুলভ শট দিয়ে।
সেঞ্চুরির অর্ধশতক করতে খেলতে হয়েছে ১০৬ বল। নড়বড়ে নব্বইয়ের পর মাসল ক্র্যাম্প হয়েছে। তাতে অবশ্য দমানো যায়নি তাকে খুব একটা। শেষ পর্যন্ত যখন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেছে, তখনই কোহলি হয়েছেন ইতিহাসের অংশ।
একটি রেকর্ডে তিনি পেছনে ফেলেছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান এবং ভারতের শচীন টেন্ডুলকারকে। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসের তালিকায় এতদিন রেকর্ড ছিল এই দুজনের। ২০০৩ সালে শচীন টেন্ডুলকার এবং ২০১৯ সালে সাকিব খেলেছিলেন ৭টি পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস। কোহলি টপকে গিয়েছেন সেই রেকর্ডও।
এমনকি এই এক সেঞ্চুরিতে আরও এক রেকর্ড ভেঙে দিলেন কোহলি। বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রানের মালিক এতদিন ছিলেন শচীন। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬৭৩ রান করেছিলেন তিনি। কোহলি আজ ছাড়িয়ে গেলেন সেটাও।
এআর