ঢাকা : আর্জেন্টিনার চোখে চোখ রেখে লড়াই করল উরুগুয়ে। প্রথমার্ধে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে করল ব্যবধান দ্বিগুণ। প্রায় এক মাস প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ না খেলা লিওনেল মেসি মাঝে মধ্যে ঝলক দেখালেন বটে, কিন্তু পারলেন না দলকে বাঁচাতে। কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রথম হারের তেতো স্বাদ পেল লিওনেল স্কালোনির দল।
বুয়েন্স এইরেসে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকালে ২০২৬ বিশ্বকাপের লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে উরুগুয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছে আর্জেন্টিনা। রোনালদ আরাউহো দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দারউইন নুনেস।
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে হারের পর টানা ১৪ ম্যাচ জিতে উড়ছিল আর্জেন্টিনা। তাদেরকে মাটিতে নামাল উরুগুয়ে; আর্জেন্টাইন কোচ মার্সেলো বিয়েলসার কৌশল মেলে ধরে।
বাছাইয়ে টানা চার জয়ের পর প্রথম হারল আর্জেন্টিনা, যদিও ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
প্রথমার্ধে দুই পক্ষ গোলের সুযোগ যতটা না তৈরি করল, তার চেয়ে বেশি ফাউল করা আর ধাক্কাধাক্কিতে মেতে থাকল! তাই দুই দল মিলিয়ে এই সময়ে যেখানে পোস্টে শট মাত্র ৩টি, সেখানে ফাউলের সংখ্যা ১৭টি! এর মধ্যে উরুগুয়েরই ১১টি।
দশম মিনিটে প্রথম ভালো আক্রমণটি শাণায় অবশ্য উরুগুয়েই। সতীর্থের লং পাস গতিতে ক্রিস্তিয়ান রোমেরো ও নিকোলাস ওতামেন্দিকে পেছনে ফেলে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন দারউইন নুনেস, কিন্তু একটু দুরূহ কোণ থেকে তার নেওয়া শট চলে যায় দূরের পোস্টের বেশ বাইরে দিয়ে। তিন মিনিট পর মেসির শট আটকান উরুগুয়ে গোলরক্ষক।
১৯তম মিনিটে একটি ফাউলের ঘটনায় মেজাজ হারায় দুই পক্ষই। জড়িয়ে পড়ে ধাক্কাধাক্কিতে। তাতে খেলা একটু সময় থাকে বন্ধ। রেফারির দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি গড়ায়নি বেশি দূর।
দুই মিনিট পর মেসিকে বক্সের একটু বাইরে মানুয়েল উগারতে পেছন থেকে ফাউল করলে ফের উত্তেজনা ছড়ায়। আর্জেন্টাইন তারকার ২১ মিটার দূর থেকে নেওয়া ফ্রি কিক রক্ষণ দেয়ালে লেগে কর্নার হয়।
পায়ের কিছু কারিকুরি, দারুণ কিছু মুভ দেখালেও এ অর্ধে উরুগুয়ের জন্য ভয়ের কারণ হতে পারেননি প্রায় এক মাস প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার মধ্যে না থাকা মেসি। আর্জেন্টাইন তারকাকে কড়া পাহারায় রাখার কৌশল নিয়েছিলেন উরুগুয়ে কোচ বিয়েলসা।
৩৭তম মিনিটে রদ্রিগো দে পলের ফ্রি কিকের পর বক্সে রোমেরোর পাস এক টোকায় উঁচুতে তুলে হুলিয়ান আলভারেসের সাইড ভলি যায় পোস্টের বাইরে। একটু পর পাল্টা আক্রমণে সুযোগ তৈরি করেন নুনেস, কিন্তু তার আড়াআড়ি ক্রসে গোলমুখে সতীর্থের কাছে পৌঁছানোর আগেই ক্লিয়ার করেন এক ডিফেন্ডার।
৪১তম মিনিটে ঠিক এমনই আক্রমণ থেকে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের স্তব্ধ করে দেয় উরুগুয়ে। বাঁ দিকে মলিনার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে বাইলাইনের একটু উপর থেকে বক্সে ক্রস বাড়ান মাতিয়াস ভিনা। ক্লিয়ার করতে পারেননি আর্জেন্টিনার কোনো ডিফেন্ডার। রোনালদ আরাউহোর কোনাকুনি শটে পরাস্ত এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
বিরতির আগে মেসির কর্নারে রোমেরোর শট গোলরক্ষক ফেরালে এগিয়ে থাকার আনন্দ নিয়ে বিরতিতে যায় উরুগুয়ে।
মাক আলিস্তেরের বদলি হিসেবে লাউতারো মার্তিনেসকে নামিয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে আর্জেন্টিনা। ৫৩তম মিনিটে নিকোলাস গনসালেদের জায়গায় নামেন আনহেল দি মারিয়া, উরুগুয়ের বিপক্ষে আগের জেতা ম্যাচে একমাত্র গোলটি করেছিলেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারই। তাকে পেয়ে আর্জেন্টিনার আক্রমণেও পায় গতি।
একটু পরই ডান দিকের বক্সের ঠিক বাইরে দি মারিয়া ফাউলের শিকার হলে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির জাদুকরী বাঁ পায়ের ফ্রি কিক ক্রসবারের উপরের দিকে লেগে বেরিয়ে যায়। হতাশা বাড়ে বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
রদ্রিগো দে পলের ট্যাকলে মাঠে পড়ে থাকার পর ৬২তম মিনিটে ব্যথায় কাঁতরাতে কাঁতরাতে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন আরাউহো। বদলি নামেন রদ্রিগো বেন্তাকুর।
৮১তম মিনিটে বল নিয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠেছিলেন দি মারিয়া, কিন্তু তার কোনাকুনি শট যায় দূরের পোস্টের বাইরে। স্কালোনির বিষন্ন মুখ ভেসে ওঠে পর্দায়।
একটু পর কর্নারে ওতামেন্দির হেড ফিস্ট করে ফিরিয়ে উরুগুয়েকে জয়ের পথে রাখেন গোলরক্ষক। ৮৭তম মিনিটে উরুগুয়ের জয় নিশ্চিত করে দেন নুনেস। পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে এক ছুটে বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে জাল কাঁপান এই ফরোয়ার্ড।
পাঁচ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে উরুগুয়ে উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে।
এমটিআই