ঢাকা: বাংলাদেশের ১৩৯ ম্যাচের টেস্ট ইতিহাসে এটি ১৯তম জয়। এই ১৯ জয়ের মধ্যে বড় দলের বিপক্ষে আছে পাঁচটি জয়। সেই ম্যাচগুলো হল....
১. ইংলিশদের ২০১৬ সালে মিরপুরে হারিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থানকে দৃঢ়তা দিয়েছিল বাংলাদেশ। জয়টা আসতে পারত সিরিজের প্রথম টেস্টেই। কিন্তু চট্টগ্রামে সাব্বির রহমানের লড়াকু ইনিংস (৬৪*) বৃথা যায়। বাংলাদেশ হেরে যায় ২২ রানে। তবে মিরপুরে সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে মুশফিকুর রহিমের দল জয় তুলে নেয় ১০৮ রানে।
মেহেদী হাসান মিরাজের অভিষেক হয় এই সিরিজ দিয়েই। অফ স্পিন দিয়ে নিজের জাত চেনান মিরাজ। মিরপুরে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে বড় অবদান রাখেন। সেই টেস্ট জিতে অ্যালিস্টার কুকের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করে বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরা দুই স্বীকৃতিই পান মিরাজ।
২. ২০১৭ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কা সফর। এদিকে ১০০তম টেস্টে খেলতে নামার মাইলফলক। দেশ ছাড়ার সময় নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচটিতে পাখির চোখ ছিল সবার। জিতলে ব্যাপারটা দারুণ হয়। বাংলাদেশ সেই টেস্ট জিতেই ছেড়েছিল। কলম্বোর পি সারা ওভালে মুশফিক রহিমের নেতৃত্বাধীন দলটির জয়ের ব্যবধান ছিল ৪ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৪৯ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তামিম ইকবাল।
সাকিব আল হাসানের অবদানও কম ছিল না। প্রথম ইনিংসে শতক করেছিলেন সাকিব। বল হাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। সেই টেস্ট জিতে সিরিজও ড্র করে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ছিলেন বাংলাদেশেরই বিদায়ী স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ। টেস্ট ইতিহাসে চারটি দেশ নিজেদের শততম টেস্টে জয় পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর বাংলাদেশ।
৩. নিরাপত্তাহীনতার ‘অজুহাত’ দেখিয়ে অনেক জল ঘোলা করে অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশে আসে ডেভিড ওয়ার্নার-স্টিভেন স্মিথদের অস্ট্রেলিয়া। তবে মিরপুরে প্রথম টেস্টে ‘নাক উঁচু’ অস্ট্রেলিয়ানদের হারিয়েই স্বাগত জানিয়েছিল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে (দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮৯ রান ও ১০ উইকেট) বাংলাদেশ জেতে ২০ রানে। তামিম ইকবালও ছিলেন দুর্দান্ত। ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন উইকেটে দুই ইনিংসেই অর্ধশত (৭১ ও ৭৮) করেন। এটি ছিল নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের দশম জয়। ঐতিহাসিক এ ম্যাচেও বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিক।
৪. গত বছর এমনই এক সকালে মাউন্ট মঙ্গানুই থেকে এসেছিল সুখবর। তখনকার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে ৮ উইকেটে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। সেটাও সাকিব-তামিমকে ছাড়াই! সব সংস্করণ মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে এটি এখনো পর্যন্ত একমাত্র জয়। টেস্টে উইকেটের ব্যবধানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ও এটি।
অনেকের মতে, যা নিজেদের টেস্ট ইতিহাসেরও সেরা। অবিস্মরণীয় এ জয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মুমিনুল হক। ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে করেন ৮৮ ও অপরাজিত ১৩। প্রথম ইনিংসে মূল্যবান ২টি উইকেটও নেন। আউট করেন কিউইদের ইনিংসের সর্বোচ্চ দুই রান সংগ্রাহক ডেভন কনওয়ে (১২২) ও হেনরি নিকোলসকে (৭৫)।
মাহমুদুল হাসান, নাজমুল হোসেন, লিটন দাসও প্রথম ইনিংসকে অর্ধশত করেন। তবে সবাইকে ছাপিয়ে ঐতিহাসিক জয়ের মূল নায়ক হয়ে ওঠেন পেসার ইবাদত হোসেন। প্রথম ইনিংসে একটিমাত্র উইকেট পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। ৪৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ গুঁড়িয়ে দেন ইবাদত। বিদেশে কোনো বাংলাদেশি পেসারের এটাই সেরা বোলিং।
৫. বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর এটাই ছিল প্রথম ম্যাচ। সিলেটে এর আগে খেলা একমাত্র টেস্টেও ছিল না কোনো সুখস্মৃতি। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের কাছে ১৫১ রানে হার। পাঁচ বছর পর সেই সিলেটে আবার টেস্ট খেলতে হয়েছে শীর্ষ পাঁচ খেলোয়াড়কে ছাড়া-সাকিব, তামিম, লিটন, তাসকিন ও ইবাদত; চোট ও ছুটির কারণে তারা কেউ ছিলেন না।
তাদের অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্বভার ওঠে নাজমুল হোসেনের কাঁধে। সেই নাজমুলের অধিনায়কত্বেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এল আরেকটি স্মরণীয় জয়। আজ ভূমিকম্পের সকালেই কিউইদের কাঁপিয়ে দিয়ে প্রয়োজনীয় ৩ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ।
এআর