ঢাকা : ডানেডিনের মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ ছেড়ে নেলসনের রোদেলা দিনের সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। ব্যাটিং প্রতিভা নিয়ে কতশত অপবাদ শোনা সৌম্য সেক্সটন ওভালে যা করে দেখালেন এশিয়ার কোনো ব্যাটার এর আগে তা করতে পারেননি। তার ১৬৯ রানের ঝাঁ তকতকে ইনিংসটিই ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচের একমাত্র সম্বল। সৌম্যে ভর বাংলাদেশ বোর্ডে ২৯১ রান জড়ো করলেও যথেষ্ট হয়নি তা। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশকে হারানোর ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রেখে ৭ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
কিউইদের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে বাংলাদেশের টানা ১৭তম হার এটি। এতে এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজও খোঁয়াতে হলো নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে। কিউইদের জয়ের নায়ক তাদের চার টপ অর্ডার ব্যাটার। ঠিক মুদ্রার ওপিঠে যেমন বাংলাদেশের ব্যর্থতায় ছিলেন টপ অর্ডার ব্যাটাররা।
প্রথম উইকেটে ৭৬, দ্বিতীয়তে ১২৮, তৃতীয় উইকেটে ৫৬ রানের জুটি তিনটিই কিউইদের ২৯২ রান তাড়ার অভিযাত্রা একেবারে সহজ করে দেয়। ৩৩ বলে ৪৫ রানের ইনিংসে ঝড়ো সূচনা এনে দেন রাচিন রবীন্দ্র। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি না পেলেও ৯৪ বলে ৮৯ রানের ভিতগড়া ইনিংস খেলেন উইল ইয়ং। এ দুজনকে থামান হাসান মাহমুদ।
৯৯ বলে ৯৫ রানের জয় নিশ্চিত করা ইনিংস উপহার দেন তিনে নামা হেনরি নিকলস। নিকলসকে সেঞ্চুরিবঞ্চিত করান শরিফুল ইসলাম। অধিনায়ক টম ল্যাথাম দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার সময় অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৩৪ রান করে। তার সঙ্গী ছিলেন অপরাজিত ২৪ রান করা টম ব্লান্ডেল।
বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। ৮০ রানের মাথায় চার উইকেট নেই। বিজয় ও লিটন ফেরেন নিজেদের দোষে। আর শান্ত ও হৃদয়ের উইকেট দুটো অভাগার মতো। এক পাশে দাঁড়িয়ে এসব দেখতে দেখতেই নিজের কাজটুকু ঠিকমতো করার চেষ্টায় ছিলেন সৌম্য।
এরপর মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিককে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে গড়া ৯১ রানের জুটিতে দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। চার বছর পর দেখা পান ফিফটির। এরপর ৪৫ রানে মুশফিক আউট হওয়ার পরেও মোমেন্টাম ক্যারি করে নিয়ে যান সৌম্য।
ইনিংসের ৪০তম ওভারে দেখা পান সেই আকাঙ্খিত তিন অঙ্কের রানের। ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। যার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ পাঁচটি বছর। আদিত্য অশোকের বলে সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরি পূরণের পর নিজেকে হয়তো বলেছিলেন সৌম্য- থামার সময় হয়নি।
পরের ওভার থেকেই শুরু করেন হাত খোলা। ১১৬ বলে ১০০ করা সৌম্য ১৪৪ বলে ছোঁন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দেড়শ রানের মাইলফলক। তামিম ও লিটনের পর দেশের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে গড়েন এ কীর্তি। অন্যপ্রান্তে মিরাজ-তানজিমরা পুঁজি বড় করার আশায় রান করতে গিয়ে উইকেট হারালেও ব্যতিক্রম সৌম্য। সময় নিয়ে ইনিংস গড়ার পর শট নির্বাচন, টাইমিং, প্লেসমেন্ট, এমনকি ভাগ্যের দিক থেকেও আজ সৌম্য ছিলেন দুর্দান্ত। চোখের পলকেই বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংসে কাছে পৌঁছে যাচ্ছিলেন প্রায়। ততোক্ষণে অবশ্য পেছনে ফেলে দিয়েছেন ক্রিকেট ঈশ্বর শচিন টেন্ডুলকারকে। এশিয়ার ব্যাটারদের মধ্যে কিউই মুল্লুকে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলে।
সে সময় ইনিংসে শেষ ওভারের প্রথম বলে এক্সট্রা কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ঠিকমতো এলিভেশন পাননি সৌম্য। বলটি গিয়ে জায়গা নেয় নিকলসের হাতে। নিন্দুকের জবানে তালা মারার মতো সৌম্যর অনবদ্য ইনিংসটি থামে ১৬৯ রানে। যা জন্য খেলেছেন ১৫১ বল। ছক্কা মোটে দুটি হলেও ইনিংসে বাউন্ডারি মেরেছেন ২২টি।
বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), এনামুল হক, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, রিশাদ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তানজিম হাসান, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ।
নিউজিল্যান্ড একাদশ: টম ল্যাথাম (অধিনায়ক), টম ব্লান্ডেল, মার্ক চ্যাপম্যান, জশ ক্লার্কসন, জ্যাকব ডাফি, অ্যাডাম মিল্ন, হেনরি নিকোলস, উইল ও’রোক, রাচিন রবীন্দ্র, আদিত্য অশোক, উইল ইয়াং।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৯.৫ ওভারে ২৯১ (সৌম্য ১৬৯, এনামুল ২, শান্ত ৬, লিটন ৬, হৃদয় ১২, মুশফিক ৪৫, মিরাজ ১৯, তানজিম ১৩, রিশাদ ৬, শরিফুল ১*, হাসান ০; মিল্ন ১০-০-৭৪-১, ডাফি ১০-০-৫১-৩, ও’রোক ৯.৫-০-৪৭-৩, ক্লার্কসন ৬-০-৩০-১, অশোক ১০-১-৬৩-১, রাচিন ৪-০-১৯-০)
নিউজিল্যান্ড: (লক্ষ্য ২৯২) ৪৬.২ ওভারে ২৯৬/৩
ফল : ৭ উইকেটে জিতেছে নিউজিল্যান্ড।
এমটিআই