ঢাকা : বিচ্ছেদের গুঞ্জনের মধ্যেই তৃতীয় বিয়েটা সেরে ফেললেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিক। একা হয়ে গেলেন সানিয়া মির্জা। ইসলামী শরিয়ত আইন অনুযায়ী শোয়েবের কাছে ‘খুলা’ পাঠিয়ে দিয়েছেন টেনিস তারকা।
এই জুটির বিচ্ছেদ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের নভেম্বরে। যদিও দুজনের কেউই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি এ বিষয়ে। তাদের সম্পর্কের অবনতি ফুটে উঠেছে সামাজিকমাধ্যমে।
সামাজিকমাধ্যমে সানিয়ার মনের অবস্থার কিছুটা আভাস পেয়েছেন ভক্তরা। ২০২২ সালের নভেম্বর শুরুতে সানিয়া সামাজিকমাধ্যমে ছেলে ইজহানকে আদরের ছবি দিয়ে লিখেছিলেন, ভাঙা হৃদয় কোথায় যায়? আল্লাহকে খুঁজতে। যে মুহূর্তগুলো কঠিন সময় পার করে দেয়।
বিচ্ছেদ জল্পনার সেই থেকে শুরু। কয়েক দিন পরেই শোয়েব ছেলের জন্মদিনে সামাজিকমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘বাবা তোমার পাশে সারাক্ষণ থাকবে না। রোজ দেখাও হবে না। কিন্তু তোমার কথা আর মুখের হাসি প্রতিমুহূর্তে মনে করবে। তখনই শোনা গিয়েছিল, নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন শোয়েব।
তার আগেই নাকি দুবাইয়ে নতুন বাড়িতে উঠে গিয়েছিলেন ক্রীড়া দম্পতি। বিলাসবহুল সেই বাড়িতে যাওয়া থেকে অশান্তি শুরু হয়েছিল। নভেম্বরেই তাদের বিচ্ছেদ ঘিরে গুঞ্জন আরও তীব্র হয়েছিল। কারণ, তাদের কাছের এক পারিবারিক বন্ধু জানিয়েছিলেন, বিচ্ছেদ শুধু সরকারিভাবে কার্যকর হওয়া বাকি।
এর কয়েক দিন পর সামাজিকমাধ্যমে শুধু নিজের একটি ছবি দিয়েছিলেন সানিয়া। সঙ্গে কিছু লেখেননি। কয়েক দিন পরেই প্রকাশ্যে এসেছিল দুজনের একসঙ্গে একটি পোস্টার। স্বামী শোয়েবের কাঁধে হাত রেখে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে সানিয়া। ‘উর্দুফ্লিক্স’ নামে একটি ওটিটি মাধ্যমে সানিয়া এবং শোয়েবের একসঙ্গে শো করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘দ্য মির্জা মালিক শো’। সে বছর ১৫ নভেম্বর সানিয়ার জন্মদিনে শোয়েব লিখেছিলেন, সানিয়া, শুভ জন্মদিন। তোমার জীবন সুখে ভরে উঠুক। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হও, এই কামনা করি। আজকের দিনটা দারুণভাবে উপভোগ করো। যদিও দুবাইয়ের বাড়িতে সানিয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শোয়েবের ছবি দেখা যায়নি। ‘দ্য মির্জা মালিক শো’-র শুটিংয়ে একসঙ্গে দেখা যায় তাদের।
বিচ্ছেদ নিয়ে সানিয়া প্রথম ইঙ্গিত দেন ২০২৩ সালের শুরুতে। ৭ জানুয়ারি সামাজিকমাধ্যমে টেনিস তারকা লেখেন, আমাদের মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে, সেটা অন্যদের আলোচনার বিষয় নয়। নিজেদের প্রয়োজনেই এই দূরত্ব। একজনের সঙ্গে শুধু একটা দূরত্ব রয়েছে মানেই তার ব্যবহার খারাপ এমন নয়। এটাও হতে পারে যে তার ব্যবহার আমার জন্য সঠিক নয়।
এর দুদিন পরেই সানিয়ার সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে শোয়েব জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন বলিউডের পরিচালক এবং কোরিয়াগ্রাফার ফারাহ খানকে। গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ছিল সানিয়ার শেষ গ্র্যান্ডস্ল্যাম। তার শেষ ম্যাচের ১০ ঘণ্টা পর সানিয়াকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শোয়েব সামাজিকমাধ্যমে লিখেছিলেন, খেলাধুলোর জগতে সব নারীদের কাছেই তুমি আশার প্রতীক ছিলে। গোটা টেনিসজীবনে যা যা অর্জন করেছ, তার জন্য অত্যন্ত গর্বিত। তুমি অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। এ ভাবেই শক্তিশালী হয়ে আগামী দিনে এগিয়ে যাও। অবিশ্বাস্য টেনিসজীবনের জন্যে অনেক শুভেচ্ছা।
এপ্রিলে আবার সেই গুঞ্জন আরও বেড়ে যায় একটি পোস্ট ঘিরে। প্রিয়জনদের নিয়ে ইফতার পার্টি করেছিলেন সানিয়া। সামাজিকমাধ্যমে দিয়েছিলেন প্রিয়জনদের ভিডিও। যাতে অনুপস্থিত ছিলেন শোয়েব। কয়েক দিন পরেই ছিল তাদের ১৪তম বিবাহবার্ষিকী। কেউ কাউকে শুভেচ্ছা জানাননি। কেউ কোনো পোস্ট করেননি সামাজিকমাধ্যমে। তাদের দূরত্ব যে তখনই অনেক বেড়ে গিয়েছিল, অনুরাগীদের বুঝতে আর অসুবিধা হয়নি। বিবাহবার্ষিকী নিয়ে কয়েক দিন পরেই এক অনুষ্ঠানে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন শোয়েব। তার উত্তর ছিল, আমরা একসঙ্গে থাকার সময় পাচ্ছি না।
সম্পর্কের দূরত্বই আসলে দ্রুত কমিয়ে দিয়েছিল সময়। শোয়েবের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরের অর্থ বুঝতে সময় লাগেনি ক্রীড়াপ্রেমীদের। বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যায় গত আগস্টে। পাক অলরাউন্ডার ইনস্টাগ্রাম বায়ো থেকে ‘হাসব্যান্ড টু এ সুপারওম্যান সানিয়া মির্জা’ কথাটি মুছে দেন। বদলে লেখেন, ‘ফাদার টু ওয়ান ট্রু ব্লেসিং’ (সত্যিকারের আশীর্বাদধন্য এক বাবা)। গত অক্টোবরে ছেলের জন্মদিনে দূরত্ব ফুটে উঠেছিল সানিয়ার একটি পোস্টেও।
সামাজিকমাধ্যমে সানিয়া লেখেন, আমার জীবনের সব থেকে উজ্জ্বল নক্ষত্রকে শুভ জন্মদিন। আমার চার পাশে যতই অন্ধকার হোক না কেন, তোমার হাসি সব কিছুকে আরও সুন্দর করে তোলে। আমি আশীর্বাদ হিসাবে তোমাকে পেয়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। আমি তোমার মধ্যে দেখেছি নিঃশর্ত ভালোবাসা কাকে বলে। সে জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ। আমার ছোট্ট ছেলের জায়গা চির দিন আমার হৃদয়ে থাকবে। প্রতি বছর আমি তোমাকে আরও বেশি কাছে টেনে ধরব। তোমাকে আরও একটু শক্ত করে আলিঙ্গন করব। তোমাকে সফল হতে সাহায্য করব। আল্লাহ তোমায় সব সময় আশীর্বাদ করুন।
এই লেখার সঙ্গে দিয়েছিলেন একাধিক ছবি। পরিবারের সকলের সঙ্গে ছবি থাকলেও ছিলেন না শোয়েব। ‘আমরা’র বদলে জায়গা পেয়েছিল ‘আমি’। এই ‘আমি’ আমিত্বের প্রকাশ ছিল না। শোয়েবহীন জীবনের একাকিত্বের কথাই হয়তো বোঝাতে চেয়েছিলেন সানিয়া। যদিও পরে দিনেই শোয়েব একসঙ্গে তিনজনের ছবি দিয়েছিলেন সামাজিকমাধ্যমে। শোয়েব শুধু লিখেছিলেন, শুভ জন্মদিন বেটা। বাবা তোমাকে ভালোবাসে।
কয়েক দিন পরেই সানিয়া নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লিখেছিলেন, প্রত্যেক শক্তিশালী এবং স্বাধীন মহিলার পেছনে একটা ছোট্ট মেয়ে থাকে যে অন্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখে যায়।
এই পোস্ট দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন, সানিয়া হয়তো বাস্তবেই শোয়েবকে ছাড়া ‘নিজের পায়ে দাঁড়াতে’ শেখার কথা বলতে চেয়েছেন।
সানিয়া-শোয়েব বিচ্ছেদের জল্পনা নানা খাতে বয়েছে। কখনও তীব্র হয়েছে। আবার কখনও সংশয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ঠিক কোন অবস্থায় রয়েছে তাদের দাম্পত্য, সেটি বোঝা যায়নি। কেউ কাউকে দোষারোপ করেননি। কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। মানসিক দূরত্ব বৃদ্ধি পেলেও, তা মাপতে পারেননি অনুরাগীরা। আসলে গোটা বিচ্ছেদ পর্বেই রক্ষণ জমাট করে মেপে খেলেছেন দুই ক্রীড়াবিদ। শোয়েব যেমন কোনো আলগা শট খেলেননি, তেমনই সানিয়াও করেননি কোনো আনফোর্সড এরর। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার।
এমটিআই