ঢাকা : প্রথমার্ধের পুরোটা সময় যেন ম্লান হয়েই রইল রিয়াল মাদ্রিদ। ৩৮ সেকেন্ডে গোল হজমের পর বিরতির আগে তারা আবার বল কুড়িয়ে আনল নিজেদের জাল থেকে। এর পরের গল্পটা সেই পুরোনো; অসংখ্যবার যা করেছে স্পেনের সফলতম দলটি, তা করল আবার। ঘুরে দাঁড়াল দ্বিতীয়ার্ধে। আলমেরিয়াকে হারিয়ে ফিরল লা লিগার শীর্ষে।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে রোববার (২১ জানুয়ারি) রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ৩-২ গোলে জিতেছে কার্লো আনচেলত্তির দল।
লার্জি রামাজানি আলমেরিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এদগার গনসালেস। পেনাল্টি থেকে জুড বেলিংহ্যাম ব্যবধান কমানোর পর সমতা ফেরান ভিনিসিউস জুনিয়র। ৯৮তম মিনিটের গোলে রেয়ালকে ৩ পয়েন্ট এনে দেন দানি কারভাহাল।
মৌসুমে এখনও জয়ের দেখা না পাওয়া আলমেরিয়া এগিয়ে যায় শুরুতেই। লুকাস রবের্তোনির কাছ থেকে বল পেয়ে জাল খুঁজে নেন রামাজানি। ঝাঁপিয়ে পড়ে কেপা আরিসাবালাগা কোনোমতে পা ছোঁয়ালেও গোল ঠেকাতে পারেননি। ম্যাচের বয়স তখন স্রেফ ৩৮ সেকেন্ড।
এগিয়ে গিয়ে আলমেরিয়া মনোযোগ দেয় রক্ষণে। নিজেদের গুছিয়ে নিতে একটু সময় নেয় রেয়াল। সুযোগ আসে একটু পরেই, কিন্তু শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি রদ্রিগো।
নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নেয় রেয়াল। কিন্তু প্রথমার্ধে গোলের খুব ভালো সুযোগ তারা তৈরি করতে পারেনি। একটি শটও রাখতে পারেনি লক্ষ্যে।
২৪তম মিনিটে আরও পিছিয়ে যেতে বসেছিল রেয়াল। রামাজানির ক্রসে গতি বেশি থাকায় পেনাল্টি স্পট থেকে ঠিক মতো শট নিতে পারেননি সের্হিও আরিবাস।
ভিনিসিউস, বেলিংহ্যামরা যেন ছিলেন নিজেদের ছায়া হয়ে। তাদের আক্রমণে ছিল না তেমন কোনো ধার। বরং আলমেরিয়ার প্রতি-আক্রমণগুলো বেশ ভীতি ছড়াচ্ছিল বের্নাবেউয়ে।
দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে ৪৩তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ায় তলানির দলটি। এই ম্যাচে ডিফেন্ডার হিসেবে খেলা গনসালেস বুলেট গতির শটে ক্রসবার ও পোস্টের কোণা ঘেঁষে বল পাঠান জালে। কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষকের।
ষোড়শ দেখায় এই প্রথম কোনো ম্যাচে রেয়ালের জালে দুইবার বল পাঠাতে পারল আলমেরিয়া। তাদের দুই গোলেই বড় দায় ছিল নাচো ফের্নান্দেসের। বিরতির সময় অধিনায়কের পাশাপাশি রদ্রিগো ও ফেরলঁদ মঁদিকেও তুলে নেন রেয়াল কোচ।
৫৭তম মিনিটে সফল স্পট কিকে ব্যবধান কমান বেলিংহ্যাম। চলতি মৌসুমে পেনাল্টি থেকে এটাই রেয়ালের প্রথম গোল; এর আগে দুটি ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছিলেন রদ্রিগো ও হোসেলু। ডি-বক্সে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার কাইকির হাতে বল লাগলে ভিএআর মনিটরে রিপ্লে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি।
চার মিনিট পর রেয়ালের জালে বল পাঠান আরিবাস। তবে গোল মেলেনি। দীর্ঘ সময় মনিটরে রিপ্লে দেখে ফাউলের বাঁশি বাজান রেফারি। আক্রমণের শুরুতে বেলিংহ্যামকে ফাউল করেছিলেন দিয়োন লুপি।
৬৭তম মিনিটে একটি ক্রস থেকে বল জালে পাঠান ভিনিসিউস। শুরুতে রেফারি হ্যান্ডবলের বাঁশি বাজান। পরে ভিএআরে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টে গোল দেন তিনি। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তিনটি বড় সিদ্ধান্ত বিপক্ষে যাওয়ায় হতাশায় নুয়ে পড়ে আলমেরিয়া।
একটি অ্যাঙ্গেল থেকে মনে হচ্ছিল বল লেগেছে হাতে, আরেকটি অ্যাঙ্গেল থেকে কাঁধে। ধারাভাষ্যকাররা নিশ্চিত ছিলেন এটি হ্যান্ডবল। গোলের বাঁশি বাজানোয় বিস্মিত হন তারাও।
৭৭তম মিনিটে বল জালে পাঠান বেলিংহ্যাম। অফসাইডের জন্য মেলেনি গোল। চার মিনিট পর ভিনিসিউসের শট ঠেকিয়ে রেয়ালকে এগিয়ে যেতে দেননি আলমেরিয়া গোলরক্ষক লুইস মাক্সিমিয়ানো। ৮৩তম মিনিটে বেলিংহ্যামের দারুণ বাইসাইকেল কিক একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
যোগ করা সময়ে লাল কার্ড দেখেন আলমেরিয়া কোচ গাইসকা গারিতানো। এর কিছুক্ষণ পর বেলিংহ্যামের হেডে বল পেয়ে খুব কাছ থেকে জাল খুঁজে নেন কারভাহাল। এই গোলের পর যে উৎসব করেন রেয়ালের খেলোয়াড়রা, সেটা শিরোপা জয়ের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল!
২০ ম্যাচে ১৬ জয় ও তিন ড্রয়ে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে এলো রেয়াল। সমান ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে জিরোনা।
৪১ পয়েন্ট নিয়ে পরের দুটি স্থানে আছে আথলেতিক বিলবাও ও বার্সেলোনা। বিলবাও খেলেছে ২১ ম্যাচ, বার্সেলোনা দুটি কম।
জয়ের দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত হেরে যাওয়া আলমেরিয়া স্পর্শ করেছে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ড। লা লিগায় টানা সবচেয়ে বেশি ২৪ ম্যাচে জয়শূন্য থেকে দলটি বসেছে স্পোর্তিং গিহনের পাশে। ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে গিহন ২০ হারের পাশাপাশি ড্র করেছিল চার ম্যাচ। আট ড্র ও ১৬ হারের পর এবার আলমেরিয়ার সামনে শঙ্কা রেকর্ডটি একার করে নেওয়ার।
এমটিআই