ঢাকা: পাকিস্তানের সাবেক টিম ডিরেক্টর ও সাবেক প্রধান কোচ মিকি আর্থার জানিয়েছেন, পাকিস্তান ক্রিকেট বেশ ‘বিপজ্জনক’ অবস্থায় আছে। দেশটির ক্রিকেটের অবস্থান এখন হতাশাজনক ও দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান।
গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের পর এই প্রথম মুখ খুলেছেন আর্থার। তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বিশ্বকাপ পর্যালোচনার এক সভায় ডেকে নিয়ে তাদের আর রাখা হবে না বলে বার্তা দেওয়া হয় পিসিবির পক্ষ থেকে। তার আগেই অস্ট্রেলিয়া সফরের পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছিলেন বলেও জানান আর্থার।
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের পর অধিনায়ক বাবর আজমসহ পুরো টিম ম্যানেজমেন্টকে আর রাখা হবে না বলে জানায় জাকা আশরাফের নেতৃত্বাধীন তখনকার পিসিবি কমিটি। বাবর পদত্যাগের পথ বেছে নেন, তবে প্রধান কোচ গ্রান্ড ব্র্যাডবার্ন ও আর্থাররা সে পথে হাঁটেননি। অবশেষে গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান আর্থার।
ইএসপিএনক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আর্থার বলেছেন, তাদের জাতীয় দলের বাইরে ভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল পিসিবি। তবে চুক্তিবদ্ধ কাউকে অন্য কোনো দায়িত্ব দেওয়া অসম্ভব মন্তব্য করে আর্থার বলেছেন, তাদের বিদায় করে দিতেই অমন ‘প্রহসনের’ পথ বেছে নেয় পিসিবি।
এ দফা পাকিস্তানের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল ডার্বিশায়ারেরও কোচ ছিলেন আর্থার। পাকিস্তান দলের সঙ্গে পুরোটা সময় না থাকলেও অনলাইনে দেখভাল করতেন তিনি। তবে বিশ্বকাপে পুরোটা সময় দলের সঙ্গেই ছিলেন তিনি।
বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে পাকিস্তান বিদায় নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরে টিম ডিরেক্টর ও প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয় মোহাম্মদ হাফিজকে, পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়কের আগে এমন কোনো দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা ছিল না। হাফিজের অধীন অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডে ৪-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে পাকিস্তান।
আর্থার জানিয়েছেন, এখনো পাকিস্তান ক্রিকেটকে অনুসরণ করেন তিনি, ‘সব সময়ই অনুসরণ করে যাব। তবে পাকিস্তান ক্রিকেটকে নিয়ে যে উৎসাহ, তৃষ্ণা আর প্রবল আবেগ ছিল, সেটি কিছুটা কমে এসেছে (এভাবে বিদায়ের পর)।
সত্যি বলতে কি, আমি মনে করি, পাকিস্তান ক্রিকেট খুবই হতাশাজনক একটা জায়গায় আছে এখন। অনেক মেধা আছে সেখানে। শুধু মেধাবী নয়, বিশ্বমানের কিছু খেলোয়াড় আছে। তবে নিজেদের মেলে ধরতে যে কাঠামোগত সহায়তা দরকার, সেটি তাদের দেওয়া হচ্ছে না।’
এরপর আর্থার বলেন, ‘২০১৯ সালে আমাদের একটা ব্যাপার ছিল, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতার পর থেকে শেষ পর্যন্তই ছিল। এমন একটা পরিবেশ, যেখানে খেলোয়াড়দের সামনে এগিয়ে নেওয়া হতো। তাদের কাছ থেকে চাওয়া ছিল অনেক, কিন্তু আমি ছেলেদের শতভাগ সমর্থন দিয়ে গেছি। ফলে তারা নেমে দলের জন্য খেলত, নিজেদের জন্য নয়।’
সেই ব্যাপার এখন নেই বলে মনে করেন আর্থার, ‘দলীয় আবহে যখন নিশ্চয়তা থাকবে, পাকিস্তান তখন বেশ ভালো (অবস্থানে থাকে)। আর যখন অনিশ্চয়তা থাকে, খেলোয়াড়েরা দলের বদলে নিজেদের জন্য খেলা শুরু করে। কারণ, তারা পরের সফর, পরের চুক্তি নিয়ে ভাবছে। এটা একটা বিপজ্জনক অবস্থা এবং পাকিস্তান ক্রিকেট এখন অমন একটা অবস্থায় আছে। এটি আমার জন্য অনেক হতাশার, দুঃখের।’
এআর