ঢাকা: নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্মরণীয় জয় পেল অস্ট্রেলিয়া। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে তিন উইকেটের জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে নিউ জিল্যান্ডকে ২-০ ব্যবধানে হারাল অস্ট্রেলিয়া।
২৭৯ রান তাড়ায় এক পর্যায়ে ৮০ রানে ৫ উইকেট হারালেও চিরায়ত হার না মানা মানসিকতার প্রতিফলন আরও একবার মেলে ধরলেন অস্ট্রেলিয়ানরা।
ব্যাটিং ফর্মের কারণে দলে যার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, সেই ক্যারির দারুণ ব্যাটিংই অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নেয় জয়ের পথে। কামিন্সের সঙ্গে তার ম্যাচ জেতানো অবিচ্ছিন্ন জুটি ৬৪ বলে ৬১ রানে। চতুর্থ ইনিংসে সফল রান তাড়ায় অষ্টম উইকেটে ৩৪ রানের বেশি জুটি আগে কখনও ছিল না অস্ট্রেলিয়ার।
১৫ চারে ১২৩ বলে ৯৮ রানে অপরাজিত রয়ে যান কেয়ারি। টেস্টে তার একটি সেঞ্চুরি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। তবে ৩২ ম্যাচের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস নিঃসন্দেহে এটিই।
এই ম্যাচে উইকেটের পেছনে ১০টি ক্যাচ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান রেকর্ডও ছুঁয়েছেন কেয়ারি। কিপিং-ব্যাটিংয়ের যুগলবন্দিতে তিনিই ম্যাচের সেরা।
কামিন্স অপরাজিত থেকে যান মহামূল্য ৩২ রানে। গত বছর অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে নবম উইকেটে ন্যাথান লায়নের সঙ্গে ৫৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে অস্ট্রেলিয়াকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে কার্যকর অবদান রাখার নজির অনেকবারই দেখিয়েছেন তিনি। সেখানে যোগ হলো আরও একটি ইনিংস।
আলাদা করে বলতে হবে মিচেল মার্শের কথাও। বিপর্যয়ের মধ্যে পাল্টা আক্রমণে ১০ চার ও ১ ছক্কায় তার ৮০ রানের ইনিংসই অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বাস জুগিয়েছে।
কেয়ারির সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে মার্শের ১৪০ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের মেরুদণ্ড। মিচেল মার্শের পাল্টা আক্রমণেই জয়ের বিশ্বাস পায় অস্ট্রেলিয়া।
নিউ জিল্যান্ডের জন্য এই ম্যাচ আর সিরিজে শেষ পর্যন্ত সঙ্গী হলো পুরোনো হতাশাই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের মাঠে তাদের ৩১ বছরের জয় করা কাটল না এবারও। ১৯৯৩ সালের মার্চে অকল্যান্ডে জয়টির পর থেকে এই টেস্ট পর্যন্ত ৩৩ টেস্টে তাসমান সাগরের ওপর পাড়ের দেশটির বিপক্ষে স্রেফ একটি জিততে পেরেছে কিউইরা, সেটি ২০১১ সালে ব্রিজবেনে।
দলের মতো শেষটা হতাশায় হলো সিরিজ জুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করা ম্যাট হেনরির। এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট শিকারি পেসার দ্বিতীয় ইনিংসেও অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারকে ফেরান তৃতীয় দিনে। কিন্তু চতুর্থ দিনে আর কোনো উইকেট তিনি পাননি। ম্যাচে তার ১০ উইকেট হয়নি, দলও পারেনি জিততে।
অথচ নিউ জিল্যান্ডের জয়টাই একসময় মনে হচ্ছিল অবিশ্ব্যম্ভাবী। আগের দিন ৩৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর ট্রাভিস হেড ও মিচেল মার্শের জুটিও ভেঙে যায় চতুর্থ দিনের শুরুতেই।
দিনের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই অবশ্য ২৮ রানে রক্ষা পান মার্শ। টিম সাউদির বলে পয়েন্টে ক্যাচ ছাড়েন রাচিন রাভিন্দ্রা। তবে পরের বলে ঠিক পয়েন্টেই ক্যাচ দেন হেড। অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৫ উইকেটে ৮০। জয়ের জন্য তখনও লাগে ১৯৯ রান।
কেয়ারি ব্যাটিংয়ে নামলেন তখন রাজ্যের চাপ নিয়ে। দলের বিপর্যয় তো ছিলই, তার নিজের অবস্থাও ছিল সঙ্গীন। ব্যাটিং ফর্ম ভালো যাচ্ছিল না খুব একটা। তার জায়গা নিতে বাইরে অপেক্ষায় জশ ইংলিসের মতো প্রতিভাবান ও আগ্রাসী এক কিপার-ব্যাটসম্যান। তবে ক্যারিয়ার বাঁচানো ইনিংস খেলেই দুঃসময়কে পাল্টা জবাব দিলেন কেয়ারি। মার্শের সঙ্গে তার জুটি জমে গেল দ্রুতই। রান বাড়তে থাকল। স্কট কুগেলাইনকে চার মেরে মার্শ ফিফটিতে পা রাখলেন ৬৪ বলে।
লাঞ্চের ঠিক আগে গ্লেন ফিলিপসের একটি ফুল টস ঠিকমতো খেলতে পারেননি মার্শ। কিউইদের এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেন কিউই অধিনায়ক। আল্ট্রা এজ-এ একটু স্পাইক দেখা যায়। তবে সেটি ব্যাটে লেগে নাকি মার্শের বুটে, সেটি বুঝত লম্বা সময় নেন আম্পায়ার। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পক্ষে যায় মার্শেরই।
এই জুটি অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নেয় আরও অনেকটা দূর। হেনরি খুব একটা প্রভাব রাখতে পারছিলেন না এ দিন। তবে ১৪৫ কিলোমিটারের আশেপাশে গতিতে নিয়মিত বোলিং করে বেন সিয়ার্স কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলতে পারছিলেন অস্ট্রেলিয়ানদের। অভিষিক্ত এই পেসারই জাগিয়ে তোলেন নিউ জিল্যান্ডের আশা।
ফুল লেংথ বলে মিচেল মার্শকে এলবিডব্লিউ করে দেন তিনি ৮০ রানে। পরের বলে তিনি বিদায় করে দেন নতুন ব্যাটসম্যান মিচেল স্টার্ককেও। অল্পের জন্য হ্যাটট্রিক পাননি তিনি। কামিন্সের ব্যাটের কানায় লেগে বল দ্বিতীয় স্লিপের সামান্য সামনে পড়ে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে।
হ্যাগলি ওভালের গ্যালারি তখন জেগে ওঠে জয়ের গন্ধ পেয়ে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ানরা তো হারার আগে হারে না! কেয়ারি ও কামিন্স আরও একবার দেখালেন তা। দুজন শুধু প্রতিরোধই গড়েননি, দ্রুততায় রান তুলে পৌঁছে যান লক্ষ্যে।
অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য যখন প্রয়োজন ৯ রান, সেঞ্চুরি করতে কেয়ারির লাগে তখন ৭ রান। সিয়ার্সের ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মারেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দেন কামিন্সকে।
পরের তিন বলে রান পাননি কামিন্স। ওভারের শেষ বলে তার ব্যাট থেকে আসে বাউন্ডারি। জিতে যায় দল, কেয়ারি অপরাজিত থেকে যান ৯৮ রানে। ম্যাচের পর কামিন্স জানান, স্কোরবোর্ডের দিকে তিনি খেয়াল করেননি যে, কেয়ারি ৯৮ রানে অপরাজিত।
কেয়ারির অবশ্য কোনো আপত্তি নেই তাতে। চওড়া হাসিতে তিনি বললেন, "আমি খুশিই... আরেকবার স্ট্রাইক পাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার ছিল না।"দুই ম্যাচে ১৭ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ১০১ রান করে সিরিজের সেরা ম্যাট হেনরি। কিন্তু তার সঙ্গী দলের হারের হতাশা।
দুই দলের সামনেই এখন লাল বলের ক্রিকেটে লম্বা বিরতি। নিউ জিল্যান্ড পরের টেস্ট খেলবে আগামী সেপ্টেম্বরে। অস্ট্রেলিয়ার পরের টেস্ট নভেম্বরে, ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :