ঢাকা: বর্তমানে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। এরই মধ্যে এল সালভাদরের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন এই সফরে। কোস্টারিকার বিপক্ষে পরের ম্যাচ খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ডি মারিয়ার বর্তমান ক্লাব বেনফিকা। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্তুগিজ এই ক্লাবের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তার। আগে থেকেই তিনি ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, ক্যারিয়ারের শেষ বেলাটায় নিজের ছোটবেলার ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে খেলবেন। ধারণা করা হচ্ছিলো, জুনের পরই রোজারিওয় ফিরে যাবেন তিনি।
ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে চলে এসেছেন প্রতিভাবান এই উইঙ্গার। জানিয়েছেন, এবারের কোপা আমেরিকার পরেই জার্সিটা তুলে রাখতে চান তিনি।
কিন্তু পুরো আর্জেন্টিনায় ব্যাপক জনপ্রিয় এই ফুটবলারই কি না এবার নিজের দেশে পেলেন মৃত্যুর হুমকি। রোজারিওতে নিজ বাসায় তার পরিবারের উদ্দেশে হত্যার হুমকি সম্বলিত বার্তা দিয়ে গিয়েছে শহরের দুর্ধর্ষ মাদক চোরাকারবারিরা।
সম্প্রতি নিজের শৈশবের ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রালে এসে ক্যারিয়ার শেষের কথা বলেছিলেন ডি মারিয়া। এরপরেই পেতে হলো মৃত্যুর হুমকি।
দুষ্কৃতিকারীরা হত্যার হুমকিতে যেটা জানিয়েছে, তা হলো রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে খেলতে আসলেই ডি মারিয়া কিংবা তার রিবারের কাউকে হত্যা করা হবে।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়া বিষয় জনপ্রিয় পোর্টাল টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, রোজারিও পুলিশ জানিয়েছে, ফানেস হিলস মিরাফ্লোরেসের বাইরে যে গাড়ি থেকে কালো নাইলনে মোড়ানো বস্তুটি ছুঁড়ে মারা হয়, তখন চারটি গান শটের আওয়াজ শোনা গেছে। তবে গাড়িটি তীব্র গতিতে ছিল বলে, সেই শটগুলো ছিল এলোমেলো এবং কোনো ক্ষতি হয়নি।
সান্তা ফে রাজ্যের বিচারক এবং পুলিশ মিলে ডি মারিয়ার প্রতি ছুঁড়ে দেয়া হত্যার হুমকি নিয়ে ব্যাপক তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। যে বার্তাটি পাঠানো হয়েছে, সেখানে ডি মারিয়ার বাবার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে, ‘আপনার ছেলেকে বলে দেবেন, যেন যে রোজারিওয় পূনরায় ফিরে না আসে। তাহলে কিন্তু আমরা আপনাদের পরিবারের যে কোনো এক সদস্যকে মেরে ফেলবো। এমনকি পুলারো (ম্যাক্সিমিলিয়ানো, যিনি সান্তা ফে’র গভর্ণর) এসেও তোমাকে রক্ষা করতে পারবে না। আমরা শুধু একটি ছোট কাগজ নিক্ষেপ করিনি, আমরা নিক্ষেপ করেছি লিড (বক্সিংয়ের ভাষায় প্রতিপক্ষকে পাঞ্চ দিয়ে আঘাত করা) এবং মৃত মানুষ।’
রোজারিও এমনিতেই সহিংসতার জন্য বিখ্যাত। বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ী এবং এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে বিভিন্ন মাফিয়া গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই এখানে সহিংস ঘটনা ঘটে থাকে। এই শহরে প্রতি এক লাখে গড়ে ২২ জন করে হত্যার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটে। যা আর্জেন্টিনার পুরো চিত্রের (প্রতি লাখে ৪.২ জন) চেয়ে অনেক বেশি।
রোজারিও আবার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বড় কৃষি বন্দর হিসেবেও পরিচিত। যার আড়ালে মাদক চোরাচালানের বিশাল রুট হিসেবেও এই বন্দর ব্যবহৃত হয়। এর ফলেই ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা এখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আর হত্যার হুমকি তো এ শহরে প্রায় প্রতিটি ব্যক্তিই পেয়ে থাকেন।
যে কারণে সান্তা ফে গভর্ণর পুলারো একে অভিহিত করেছেন ‘নারকোটেরোরিজম (মাদক সন্ত্রাস)’-এর এলাকা হিসেবে। এমনকি নিজের পরিবারকে পর্যন্ত এই শহর থেকে সরিয়ে নিয়েছেন এই রাজনীতিবীদ।
মূলত এ কারণেই কিছুদিন আগে পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে নিজের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন ডি মারিয়া। তিনি বলেছিলেন, ‘রোজারিওয় আমার পরিবার রয়েছে। বাবা-মা, বোন সেখানে অবস্থান করে। এ বিষয়টা নিয়ে দুশ্চিন্তা আমাকে সব সময় আচ্ছন্ন করে রাখে। খুব খারাপ লাগে। কিন্তু আমার ইচ্ছা এবং আশা সব সময়ই এই এলাকাকে ঘিরে।’
শুধুমাত্র ডি মারিয়াই এই হত্যার হুমকি পেলেন না। গত বছর ২ মার্চ লিওনেল মেসির এক আত্মীয়ের পরিবারও এমন হুমকি পেয়েছিলেন।
এআর