ঢাকা : লক্ষ্য ছিল চেনা আঙিনা বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অপরাজিত থাকা। স্বপ্ন ছিল ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৮৬ ধাপ এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে পয়েন্ট পাওয়া। মিতুল মারমার দৃঢ়তায় তা পূরণের পথেই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আবারও বিপত্তি! দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে হজম করে বসল গোল; কিংস অ্যারেনায় প্রথম হারের তেতো স্বাদও পেল বাংলাদেশ।
২০২৬ বিশ্বকাপ ও ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মঙ্গলবার ১-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি করেন মিচেল তেরমানিনি।
কিংস অ্যারেনায় পঞ্চম ম্যাচে এসে আপরাজিত থাকার দর্পও চূর্ণ হলো বাংলাদেশের। ২০০৬ সালের ড্রয়ের পর ফিলিস্তিনের বিপক্ষে এ নিয়ে টানা সাত ম্যাচ হারল দল।
বাছাইয়ের ‘আই’ গ্রুপে এ নিয়ে তৃতীয় ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭-০ গোলের হার দিয়ে গ্রুপ পর্বে যাত্রা শুরুর পর কিংস অ্যারেনাতেই লেবাননের বিপক্ষে কাবরেরার দল করেছিল ১-১ ড্র। কুয়েতে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে প্রথম লেগে হেরেছিল ৫-০ ব্যবধানে।
দুটি পরিবর্তন এনে মঙ্গলবার শুরুর একাদশ সাজান কাবরেরা। সোহেল রানা (জুনিয়র) ও ইসা ফয়সালের বদলে নামেন সোহেল রানা (সিনিয়র) ও শাকিল হোসেন।
প্রথম লেগে ৫-০ গোলের হারের ম্যাচেও উজ্জ্বল ছিল মিতুলের পারফরম্যান্স। এদিনও প্রথমার্ধে পোস্টের নিচে বিশ্বস্ত দেয়াল হয়ে থাকলেন এই গোলরক্ষক। দ্বাদশ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করে ফিলিস্তিন। মোহাম্মেদ রাশিদের ফ্রি কিক ড্রপ খেয়ে পড়ার পর কোনোমতে ফেরান মিতুল।
২২তম মিনিটে তপু বর্মনের লং পাস ধরে বক্সে ঢুকেছিলেন ফাহিম। কিন্তু তার ক্রসে সাড়া দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না সেখানে। খানিক পর ৩০ গজ দূর থেকে জামালের ফ্রি কিক পোস্ট ঘেঁষে যায় বাইরে।
বলের নিয়ন্ত্রণ ও আক্রমণে এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিন প্রথমার্ধের শেষ দিকে কয়েকবার হানা দেয় বাংলাদেশের রক্ষণে। তবে মিতুল বরাবরের মতোই আস্থার দেয়াল তুলে রাখেন। ৩৫তম মিনিটে ওদেই দাব্বাঘের কাছের পোস্টে নেওয়া শট আটকানোর চার মিনিট পর মুসাব বাত্তার ফ্রি কিকে শেহাব কুম্বরের হেড ফিরিয়ে দেন তিনি।
এরপর ৪৪তম মিনিটে বাংলাদেশের দুয়ারে কড়া নাড়ে সেরা সুযোগটি। গোলরক্ষক মিতুলের কিকের পর রাকিব হেড পাসে বল বাড়ালেন জামালের উদ্দেশে। দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে অধিনায়কের থ্রু পাস ধরে টোকা দিলেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, কিন্তু বল লাগল পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা গোলরক্ষকের গায়ে। এগিয়ে যাওয়ার সেরা সুযোগটি নষ্ট হলো বাংলাদেশের।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তালগোল পাকিয়ে বিপদ ডেকে আনতে বসেছিল বাংলাদেশ। ব্যক পাসের শুরু বিশ্বনাথ ঘোষ থেকে। বিশ্বনাথের ব্যক পাস ধরে শাকিল হোসেনও ব্যক পাস দেন মিতুলের উদ্দেশে। গোলরক্ষক ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দেন দাব্বাঘের পায়ে। প্রথম লেগে জোড়া গোল করা এই ফরোয়ার্ড মিতুল ও একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত শট নেন ফাঁকা পোস্টে, কিন্তু বল যায় অল্পের জন্য বাইরে।
একটু পর ফিলিস্তিনের রক্ষণে দুই দফা হানা দেয় বাংলাদেশ। ৫২তম মিনিটে রাকিবের ক্রসে ফাহিম নাগাল পাওয়ার আগেই বল গ্লাভসে নেন গোলরক্ষক। একটু পর ছোট বক্সে বাড়ানো রাকিবের ক্রস আটকান এক ডিফেন্ডার।
৫৭তম মিনিটে দাব্বাঘের হেড ফিরিয়ে আবারও বাংলাদেশের ত্রাতা মিতুল। ৬৫তম মিনিটে আলাদ্দিন হাসানের দূরপাল্লার শটও ফিস্ট করে ফেরান ২০ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক। একটু পর দুটি পরিবর্তন আনেন কাবরেরা। জামাল ও ফাহিমকে তুলে সোহেল রানা (জুনিয়র) ও রফিকুল ইসলামকে নামান কোচ।
৭৩তম মিনিটে নিখুঁত স্লাইডে বল ক্রসবারের উপর দিয়ে বের করে দেন বিশ্বনাথ। একটু পর মিতুল ফেরান ওদেই খারৌবের শট। দশ মিনিট পর চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন মিতুল, বদলি নামেন মেহেদী হাসান শ্রাবণ।
৯০তম মিনিটে মাহমুদ ধাধার হেড অল্পের জন্য যায় বাইরে। এরপরই ইসা ফয়সালের পাস ধরে বক্সে গোলরক্ষককে পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি রাকিব। গোলরক্ষকের চার্জে বল হারানোর সঙ্গে পড়ে যান তিনি। এই ফরোয়ার্ডকে জোর করে তুলতে গিয়ে লাল কার্ড দেখেন আহমেদ মাহাজনেহ।
দশ জনের ফিলিস্তিনই ‘ডেডলক’ খোলে দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে। বাত্তার ক্রসে বার্তান ইসলাম হেড পাসে বল দেন বক্সে ফাঁকায় থাকা তেরমানিনিকে। নিখুঁত কোনাকুনি শটে বাংলাদেশের এতক্ষণের প্রতিরোধ, পয়েন্ট পাওয়ার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দেন তিনি।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :