ঢাকা : ম্যাচের শুরুর দিকেই বাজল পেনাল্টির বাঁশি, নিখুত শটে জালে বল পাঠালেন রদ্রি। চাপ ধরে রেখে দ্বিতীয় গোলও আদায় করে নিল স্পেন। এরপরই, উনাই সিমোনের একটি ভুল এবং ব্রাজিলের লড়াইয়ে ফেরা। উজ্জীবিত দলকে মাঠে নেমেই উৎসবের উপলক্ষ এনে দিলেন তরুণ সেনসেশন এন্দ্রিক। তারপরও, হারের পথেই ছিল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। একেবারে শেষ সময়ে লুকাস পাকেতার গোলে স্বস্তি নিয়ে ফিরল ব্রাজিল।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাতের দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের প্রীতি ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হয়েছে।
বলের দখল, গোলের উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা এবং লক্ষ্যে শট নেওয়া-সব হিসেবেই ঘরের মাঠে আধিপত্য করে স্পেন; স্পেনের ১৯ শটের আটটি লক্ষ্যে আর ব্রাজিলের ১২টি ছয়টি থাকে লক্ষ্যে।
রদ্রি ও দানি ওলমোর গোলে ৩৬তম মিনিটের মধ্যে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও নেয় স্প্যানিশরা। তবে সিমোনের ওই ভুলের সুযোগ নিয়ে রদ্রিগো ব্যবধান কমানোর পর সমতা টানেন এন্দ্রিক। রদ্রির দ্বিতীয় পেনাল্টি গোলে অবশ্য জয়ের স্বপ্নই দেখছিল স্পেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা হতে দিলেন না পাকেতা।
ম্যাচের আগে ‘এক ত্বক, একই পরিচয়’ স্লোগানে ছড়িয়ে দেওয়া হলো বর্ণবাদ বিরোধী বার্তা। জাতীয় সঙ্গীতের সময় ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা পরেন প্রতিবাদের কালো রংয়ের জার্সি।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের প্রীতি ম্যাচে খেলা শুরুর একাদশে ১০ পরিবর্তন এনে দল সাজান স্পেন কোচ। অন্যদিকে, ব্রাজিল কোচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা ম্যাচের একাদশকে রাখেন অপরিবর্তিত।
ম্যাচ শুরু হতেই বাজে ফাউলের বাঁশি। ১২ সেকেন্ডের মাথায় ব্রাজিলের সীমানায় তরুণ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড লামিনে ইয়ামালকে ফাউল করেন ডিফেন্ডার জোয়াও গোমেজ।
ওই ফ্রি কিকে উল্লেখযোগ্য কিছু না হলেও, ১০ মিনিট পর আবার ফাউল করে বিপদ ডেকে আনেন গোমেজ। এবার তিনি ডি-বক্সে ফাউল করেন ইয়ামালকে। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। মাঝ বরাবর স্পট কিকে দলকে এগিয়ে নেন রদ্রি।
৩ পেনাল্টি, এন্দ্রিকের গোল, সমতায় শেষ স্পেন-ব্রাজিলের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই
প্রতিপক্ষের টানা আক্রমণের চাপ সামলে ১৭তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে কিছুটা ভীতি ছড়ান ভিনিসিউস। যদিও, গোলরক্ষককে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি তিনি।
৩৫তম মিনিটে গোলরক্ষক বেন্তোর ভুলে আবারও গোল খেতে বসেছিল ব্রাজিল। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তিনি ছুটে আসা প্রতিপক্ষের ‘১০ নম্বর’ ওলমোর পায়ে মেরে বসেন। তবে তার ভাগ্য ভালো, বল গোলের দিকে যায়নি।
পরের মিনিটেই দারুণ নৈপুণ্যে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ওলমো। ইয়ামালের পাস ডি-বক্সে পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় প্রথমে ডিফেন্ডার লুকাস বেরাল্দু এবং পরে ব্রুনো গিমারেসকে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে গোলটি করেন লাইপজিগের মিডফিল্ডার ওলমো।
দুই গোলের ব্যবধান অবশ্য বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৪০তম মিনিটে ভীষণ বাজে একটি ভুল করে বসেন উনাই সিমোন। সতীর্থের ব্যাকপাস পেয়ে আরেক সতীর্থকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টায় রদ্রিগোর পায়ে বল তুলে দেন আথলেতিক বিলবাওয়ের গোলরক্ষক। এমন উপহার পেয়ে কোনো ভুল করেননি রদ্রিগো। অনেকখানি এগিয়ে থাকা গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে পাঠান রেয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড।
পজেশন রাখার পাশাপাশি আক্রমণেও প্রথমার্ধে পরিষ্কার আধিপত্য ছিল স্পেনের। প্রতিপক্ষের রক্ষণে বারবার হানা দিয়ে তারা গোলের উদ্দেশ্যে শট নেয় ৯টি, যার তিনটি থাকে লক্ষ্যে। আর ব্রাজিল শট নিতে পারে মাত্র দুটি, অবশ্য দুটিই লক্ষ্যে ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে একসঙ্গে চারটি পরিবর্তন আনেন ব্রাজিল কোচ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, রাফিনিয়ার জায়গায় নামেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের নায়ক এন্দ্রিক। তাতে দলটির আক্রমণের ধারও বাড়ে। এই অর্ধের প্রথম ১৫ মিনিটেই গোলের উদ্দেশ্যে আরও ৬টি শট নেয় তারা, মিলে যায় গোলও।
৩ পেনাল্টি, এন্দ্রিকের গোল, সমতায় শেষ স্পেন-ব্রাজিলের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই
মাঠে নামার পাঁচ মিনিটের মধ্যে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান এই বিস্ময় বালক। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল স্পেন ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে বক্সেই পেয়ে যান এন্দ্রিক, জোরাল ভলি মারেন তিনি। বল প্রতিপক্ষের একজনের পায়ে লেগে কিঞ্চিৎ দিক পাল্টে জালে জড়ায়।
জাতীয় দলের হয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জালের দেখা পেলেন এন্দ্রিক। আন্তর্জাতিক ফুটবলে চার ম্যাচে দুই গোল হলো আগামী মৌসুমে রেয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে যাওয়া এই তরুণের।
সমানতালে আক্রমণ করতে থাকে স্পেনও, জমে ওঠে লড়াই। নিশ্চিত সুযোগ যদিও মিলছিল না তেমন।
এই অর্ধের প্রথম দিকে যেভাবে আক্রমণ শুরু করেছিল ব্রাজিল, সেই ধার অবশ্য বেশিক্ষণ থাকেনি তাদের। আবারও আধিপত্য করতে থাকে ২০১০ সালের বিশ্বকাপ জয়ীরা। ৭৪তম মিনিটে ভালো একটি সুযোগও তৈরি করে তারা; তবে ওলমোর নিচু শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন বেন্তো।
৮৫তম মিনিটে ডি-বক্সে বেরাল্দু প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার দানি কারভাহালকে ফাউল করলে আবারও পেনাল্টি হজম করে সেলেসাওরা। এবারও রদ্রি কোনো ভুল করেননি, দারুণ স্পট কিকে আরেকবার দলকে এগিয়ে নেন ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডার।
হার এড়াতে পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়ে প্রবল চাপ দেয় ব্রাজিল। দুটি হাফ-চান্স মিললেও কাজে লাগেনি। ম্যাচ শেষ হতে তখন আরও বাকি কয়েক সেকেন্ড মাত্র। তখনই রদ্রিগোর বদলি নামা উইঙ্গার গালেনোকে বক্সে ফাউল করেন বসেন কারভাহাল।
গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে, জালে বল পাঠিয়ে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান ওয়েস্ট হ্যাম মিডফিল্ডার পাকেতা। এর পরপরই ম্যাচের ইতি টেনে দেন রেফারি। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য তারপরও প্রতিবাদ জানাতে থাকে স্পেনের খেলোয়াড়রা।
ব্রাজিলিয়ানদের বিপক্ষে স্পেনের আরেকটি জয়ের অপেক্ষা বাড়ল আরও। সবশেষ তারা জিতেছিল সেই ১৯৯০ সালে।
এবার নিয়ে মোট ১০ বারের মুখোমুখি লড়াইয়ের ব্রাজিলের জয় পাঁচটি; স্পেনের জয় দুটি, বাকি তিনটি ড্র।
ব্রাজিলের জন্য ২০২৩ সাল কেটেছে ভীষণ বাজে। টানা চার ম্যাচ জয়শূন্য থেকে (এক ড্রয়ের পর তিন হার) ওই বছর শেষ করে তারা। তবে, নতুন কোচ দরিভাল জুনিয়রের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিচ্ছে চোটজর্জর দলটি। তিন দিন আগে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর এবার ঘুরে দাঁড়িয়ে করল ড্র।
সেখানে স্পেনের গল্পটা আবার উল্টো। চার দিন আগে তারা হেরে বসে কলম্বিয়ার বিপক্ষে। এবার দু্ই গোলে এগিয়ে গিয়েও পারল না জিততে। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের আগে দলের এমন পারফরম্যান্স কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের জন্য ভাবনার কারণ।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :