ঢাকা: ক্রিকেটারদের আপস এন্ড ডাউন একটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কখনো কখনো সেটি হয়ে যায় অস্বাভাবিক ও দুশ্চিন্তার কারণ। যেটি এখন ঘটছে লিটন দাসের বেলায়। তার ভক্তদের মনে তাই এখন একটাই প্রশ্ন কী হল লিটনের ব্যাটে। আদৌ কি ফিরবেন নাকি হারিয়ে যাবেন?
সর্বশেষ দুই ওয়ানডের দু’টোতেই ডাকের শিকার হওয়ার পর ৫০ ওভারের ক্রিকেটের দল থেকে পড়লেন বাদ। নির্বাচকরা এখানে সাধুবাদ পেতেই পারেন। কঠিন সিদ্ধান্ত-এটা নিয়ে আলোচনা হবেই। তবে, প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর কথায় আপত্তি করতে পারেন লিটন দাস।
লিপু বলেছেন, ‘সাদা বলে সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় নিয়েই আমরা এই পরিবর্তন আনছি। আর দলে আরো দুজন সামর্থ্যবান ওপেনার থাকার বিষয়টিও আমাদের মাথায় রয়েছে।’
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে লিটন ওপেনিংয়ে নন, চার নম্বরে খেলেছেন। বিশ্বকাপের পর ওপেনিংয়ে ফিরেছেন এই শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়েই। তবে, সেই ফেরাটাও স্থায়ী হল না। বাদ তিনি পড়তেই পারেন, সর্বশেষ ১০ ওয়ানডেতে তার কোনো হাফ সেঞ্চুরি নেই। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছেন দুই বছরেরও বেশি সময় আগে। ওয়ানডে পর্ব পেরিয়ে চলছে টেস্ট পর্ব।তবে এই পর্বেও যে ফেল লিটন।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার সময় সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো ফল বলে ধরে নিয়েছেন, বৃষ্টির একটু দয়াদাক্ষিণ্য নিয়ে টেস্টটা ড্র করে ফেলা। জয়ের কথা ভাবারই সাহস পাননি। কারণ, সে জন্য সিলেট শহর থেকে দৃশ্যমান মেঘালয়ের যে পাহাড়, উঠতে হবে তার চেয়েও উঁচুতে। করতে হবে ৫১১ রান।
টেস্ট ইতিহাসেই কখনো যা করতে পারেনি কোনো দল। রেকর্ডটা এর চেয়ে ৯৩ রান কম। তাতে কী! রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য-এই আপ্তবাক্য কি কখনো শোনেননি!
মাথার ওপর ৫১০ রানের বোঝা। অসম্ভবের চেয়েও কঠিন এক লড়াই। তার ওপর জবাব দিতে নেমে ৩৭ রানের মধ্যেই সাজঘরে চারজন ব্যাটার। এই অবস্থায় ক্রিজে নেমে প্রথম বলটাতেই লিটন দাস যা করলেন, তা স্রেফ পাগলামি।
বিশ্ব ফার্নান্দোর অফ স্ট্যাম্পের ওপর ফুলার ডেলিভারি। স্কিপ ডাউন করে স্লগ করলেন। লক্ষ্য মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারা। বলটা লিটনের ব্যাট ছুয়ে অনেক ওপরে উঠল বটে, কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। টপ এজ! কভার থেকে দৌঁড়ে এসে ঠাণ্ডা মাথায় অ্যাঞ্জেলো মাথুস যখন ক্যাচটা ধরলেন ক্রিজ থেকে মোটে এক মিটার দূরে দাঁড়িয়ে।
কি ভাবছিলেন লিটন দাস? সাদা বলের ক্রিকেটের পর কি এবার লাল বলের ক্রিকেটেও কি জায়গাটা খোয়াতে চলেছেন তিনি? প্রথম ইনিংসে তাও ২৫ টা রান করতে পেরেছিলেন, এবার ডাক। আত্মবিশ্বাসটা কোন তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে তার, সেটা তিনি নিজেই ভাল জানবেন। আপাতত, এভাবেই চলতে থাকলে হয়তো ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাটেও লিটনের বাদ পড়া আসন্ন!
এদিকে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই যেন ডাক তার নিত্য সঙ্গী। যতক্ষণ ক্রিজে থাকেন, ততক্ষণ মুগ্ধ করলেও তিনি বরাবরই আউট হন দৃষ্টিকটু কায়দায়। আর রানের খাতা খোলার আগেই আউট হওয়ার চেয়ে দৃষ্টিকটু আর হৃদয়বিদারক কিই বা হতে পারে। এদিকে ডাকের রেকর্ডেও বারবার চলে আসছে লিটন দাসের নাম। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ১৪ তম বার ডাকের শিকার হন তিনি। ওপেনার হিসেবে এরই মধ্যে ১৩ তম ডাক হয়েছে লিটনের।
ক্রিকেটের ভূবনে বিস্ময়কর, অবিশ্বাস্য কিংবা ব্যাখ্যাতীত কত কিছুই তো দেখা যায়। কিন্তু, সবশেষ টেস্টে লিটন কুমার দাস যা করলেন, সেরকম কিছু দেখা যায় না সচরাচর।
অবাক করা বিষয় হল ব্যাটের রান খরা-ই নাকি বাদ পড়ার একমাত্র কারণ নয়। অভিযোগ আছে, অনুশীলনে অমনোযোগী লিটন। যে কারণে নির্বাচকরা তাকে বাদ দিলেও কোচ-অধিনায়ক ঢাল হয়ে এগিয়ে আসেননি।
অনুশীলনে লিটন অমনোযোগী কিনা তা প্রমাণের সুযোগ একেবারেই কম। তাছাড়া ‘ম্যাচে লিটন অমনোযোগী’ এমন গুরুতর অভিযোগও ওঠেনি। তবে ম্যাচে লিটনের সাম্প্রতিক আউটের ধরণ, ম্যাচে তার সরব উপস্থিতি কতটুকু এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠেই যাচ্ছে। বড় কথা হল, বাংলাদেশ দলের এমন অনেক ক্রিকেটারই আছেন যারা এসে ঝড় তুলেছেন দলে জায়গা পাকা করেছেন। কিন্তু হঠাৎ অফফর্মের কারণে ছিটকে গেছেন দল থেকে। অনেকে আবার হারিয়েও গেছেন। লিটন দাসও কি সেই পথেই এগোচ্ছেন?
এআর