ঢাকা : প্রথম ২০ মিনিটে সেভাবে খুঁজেই পাওয়া গেল না বার্সেলোনাকে। পিএসজির আক্রমণের ঝাপটা সামলে এরপর ঘুরে দাঁড়াল শাভি এর্নান্দেসের দল। সেখানে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের নেতৃত্ব দিলেন রাফিনিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে তিন মিনিটের মধ্যে দুই গোলে পিএসজি এগিয়ে যাওয়ার পর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডই দলকে ফেরালেন কক্ষপথে। তার দেখানো পথ ধরে প্যারিসে দারুণ এক জয় পেল বার্সেলোনা।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটের প্রথম লেগে ৩-২ গোলে জিতল শাভির দল। বুধবার রাতে রাফিনিয়ার জোড়া গোলের পর জন্মদিনে ব্যবধান গড়ে দেন আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন। পিএসজির হয়ে গোল দুটি করেন উসমান দেম্বেলে ও ভিতিনিয়া।
২০১৫ সালের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে প্রতিপ্রক্ষের মাঠে এই প্রথম কোনো ম্যাচে তিন গোল করতে পারল বার্সেলোনা। সেবার পিএসজির বিপক্ষেই তারা জিতেছিল ৩-১ গোলে।
ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।
ষষ্ঠ মিনিটে আচমকাই একটি সুযোগ পায় বার্সেলোনা। গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনের উঁচু করে বাড়ানো বল পিএসজির ডিফেন্স লাইনের পেছনে খুঁজে পায় রাফিনিয়াকে। বিপদ দেখে ডি-বক্স ছেড়ে অনেক বাইরে বেরিয়ে আসেন পিএসজি গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুম্মা। মূলত তার চ্যালেঞ্জের মুখেই বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি রাফিনিয়া।
পরের মিনিটে লি ক্যাং-ইনের শট সহজেই গ্লাভসে নেন টের স্টেগেন। লক্ষ্যে এটাই ছিল প্রথম শট। একাদশ মিনিটে প্রায় একই জায়গা থেকে মার্কো আসেন্সিওর শটও ঠেকান বার্সেলোনা গোলরক্ষক।
১৯তম মিনিটে পায়ের কারিকুরিতে দারুণ এক সুযোগ তৈরি করেন নুনো মেন্দেস। লামিনে ইয়ামাল ও জুল কুন্দেকে এড়িয়ে পৌঁছে যান বিপজ্জনক জায়গায়। কিন্তু হাঁটু গেড়ে চমৎকার ব্লকে তার শট ঠেকিয়ে দেন রোনাল্দ আরাউহো।
পরের মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত বার্সেলোনা। কর্নার ঠেকাতে বেরিয়ে এসেছিলেন দোন্নারুম্মা। জটলার মধ্য থেকে রবের্ত লেভানদোভস্কির হেড চলে যাচ্ছিল জালে। ছুটে গিয়ে গোললাইন থেকে ঠেকিয়ে দেন মেন্দেস।
২৪তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে রাফিনিয়ার বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান দোন্নারুম্মা।
৯ মিনিট পর ডি-বক্সে রাফিনিয়ার জোরাল নিচু শট প্রতিহত হওয়ার পর প্রতি-আক্রমণে বিপজ্জনক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন আসেন্সিও। মাঝমাঠে তাকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন সের্হি রবের্তো। তাই ফিরতি লেগে খেলা হবে না বার্সেলোনা অধিনায়কের।
৩৭তম মিনিটে ডি-বক্স থেকে রাফিনিয়ার নিখুঁত শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে জালে জড়ালে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে পায়ের বাইরের অংশ দিয়ে বাঁকানো শটে লেভানদোভস্কিকে খুঁজে নিতে চেয়েছিলেন ইয়ামাল। বেরিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে বল পোলিশ স্ট্রাইকারের নাগালের বাইরে পাঠান দোন্নারুম্মা। সেটা যায় অরক্ষিত রাফিনিয়ার পায়ে। ঠাণ্ডা মাথার শটে ঠিকানা খুঁজে নেন পিএসজির রক্ষণে বারবার ভীতি ছড়ানো ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার।
প্রথমার্ধে ৫৩ শতাংশ সময় বল দখলে রাখা পিএসজি গোলের জন্য নেয় আট শট, এর তিনটি ছিল লক্ষ্যে। সেগুলো একেবারেই ভাবাতে পারেনি টের স্টেগেনকে। এর বিপরীতে বার্সেলোনার ১০ শটের তিনটি ছিল লক্ষ্যে। রাফিনিয়া, ইয়ামাল, লেভানদোভস্কিদের তৎপরতায় পোস্টে ব্যস্ত সময়ই কাটে ইতালিয়ান গোলরক্ষক দোন্নারুম্মার।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই চমৎকার এক গোলে দলকে সমতায় ফেরান দেম্বেলে। ৪৮তম মিনিটে ক্লিয়ার করার চেষ্টায় ঠিকমতো শট নিতে পারেননি আরাউহো। ডি-বক্সে বল পেয়ে যান অরক্ষিত দেম্বেলে। বার্সেলোনার তিন খেলোয়াড় ছুটে গিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। ফরাসি ফরোয়ার্ডের বুলেট গতির শট তাদের ফাঁকি দিয়ে, টের স্টেগেনকে এড়িয়ে জড়ায় জালে।
সফরকারীদের স্তব্ধ করে দিয়ে ৫১তম মিনিটে এগিয়ে যায় পিএসজি। ফাবিয়ান রুইসের কাছ থেকে বল পেয়ে কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ভিতিনিয়া। ঝাঁপিয়েও নাগাল পাননি টের স্টেগেন।
তিন মিনিট পর ব্যবধান বাড়তে পারত আরও। বাহলি বারকোলার জোরাল শট টের স্টেগেনের গ্লাভস ছুঁয়ে লাগে ক্রসবারে।
পিএসজির দারুণ গতির সঙ্গে পেরেই উঠছিল না বার্সেলোনা। কঠিন পরিস্থিতিতে ৬২তম মিনিটে আবারও দলকে অসাধারণ এক ফিনিশিংয়ে পথ দেখান রাফিনিয়া। সবেই মাঠে আসা পেদ্রির বাড়ানো বলে ছুটে গিয়ে দুর্দান্ত এক ভলিতে খুঁজে নেন জাল। জায়গা থেকেই নড়তে পারেননি গোলরক্ষক।
৭৫তম মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় বার্সেলোনা। তাদেরই সাবেক খেলোয়াড় দেম্বেলের শট ব্যর্থ হয় পোস্টে লেগে।
এরপরই রাফিনিয়া ও ফ্রেংকি ডি ইয়ংকে তুলে নেন শাভি এর্নান্দেস। বদলি নামা দুই খেলোয়াড়ের একজন ক্রিস্টেনসেন কর্নার থেকে ৭৭তম মিনিটে চমৎকার হেডে খুঁজে নেন জাল। এগিয়ে যায় বার্সেলোনা।
৮৭তম মিনিটে বাঁকানো শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি দেম্বেলে। দূরের পোস্টে লাফিয়েও হেডের চেষ্টায় বলের নাগাল পাননি কিলিয়ান এমবাপে। বাকি সময়ে গোলের তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা।
আগামী মঙ্গলবার এগিয়ে থাকার স্বস্তি নিয়ে ঘরের মাঠে ফিরতে লেগে লড়াইয়ে নামবে বার্সেলোনা। টিকে থাকতে পিএসজির সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন লড়াই।
এমটিআই