• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

নিজেই সরে দাঁড়িয়ে অন্য কাউকে দলে নিতে বললেন ম্যাক্সওয়েল


ক্রীড়া ডেস্ক এপ্রিল ১৬, ২০২৪, ১২:৫৪ পিএম
নিজেই সরে দাঁড়িয়ে অন্য কাউকে দলে নিতে বললেন ম্যাক্সওয়েল

ঢাকা : বুড়া আঙুলের চোটের কথা শোনা যাচ্ছিল। পারফরম্যান্সের যা অবস্থা, তাতে বাদ পড়াটাও খুবই স্বাভাবিক। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একাদশে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের না থাকাটা তাই খুব বিস্ময় জাগায়নি। তবে কৌতূহল জাগালেন তিনি নিজেই। ম্যাচের পর অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান জানান, তিনি নিজেই দলকে বলেছেন তার বদলে অন্য কাউকে নিতে।

দুর্দান্ত ফর্মে থেকে এবারের আইপিএলে এলেও এই টুর্নামেন্টে একদমই নিষ্প্রভ ম্যাক্সওয়েল। বল হাতে অবশ্য চারটি উইকেট নিতে পেরেছন। তবে মূল কাজ যেটি, সেই ব্যাটিংয়ে ছয় ইনিংস মিলিয়ে করেছেন স্রেফ ৩২ রান। এর মধ্যে এক ম্যাচেই করেছেন ১৯ বলে ২৮ রান। পাঁচ বলের বেশি খেলতে পেরেছেন কেবল ওই ম্যাচেই।

হায়দরাবাদের কাছে বেঙ্গালুরুর হারের পর ম্যাক্সওয়েল জানালেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙা হতে আপাতত টুর্নামেন্ট থেকে বিরতি নিচ্ছেন তিনি।

ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য সিদ্ধান্তটি ছিল বেশ সহজ। গত ম্যাচের পর ফাফ (দু প্লেসি, অধিনায়ক) ও কোচদের কাছে গিয়ে বলেছি যে, আমার বদলে অন্য কাউকে খেলানোর সময় হয়েছে। আগেও আমি এই পরিস্থিতিতে ছিলাম, যেখানে ম্যাচের পর ম্যাচ খেলে গেছি এবং নিজেকে আরও আঁধারে ডুবিয়ে দিয়েছি। আমার মনে হয়েছে, নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে একটু বিরতি দেওয়ার উপযুক্ত সময় এখনই, শরীরটাকে যেন ঠিকঠাক করতে পারি।

টুর্নামেন্টের কোনো একটা পর্যায়ে যদি প্রয়োজন পড়ে আমাকে, আশা করি দারুণ মানসিক ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে ফিরতে পারব, তখনও প্রভাব রাখার মতো কিছু করতে পারব।

দলে তার যে ভূমিকা ও তার কাছে যে প্রত্যাশা, তা পূরণ করতে পারছেন না অনুভব করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানালেন ম্যাক্সওয়েল।

পাওয়ার প্লের ঠিক পরই বড় একটি ঘাটতির জায়গা দেখা দিয়েছে আমাদের দলে। গত দুই মৌসুমে আমার শক্তির জায়গা ছিল এটিই। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, এবার এখানে ব্যাট হাতে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারছি না। দলের যা ফলাফল, পয়েন্ট তালিকায় যে অবস্থান আমাদের, আমার মনে হয়েছে, অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়ার সময় এখনই এবং আশা করি, সে জায়গাটা নিজের করে নিতে পারবে।

এই টুর্নামেন্টের আগে টি-টোয়েন্টিতে অসাধারণ ফর্মে ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। নভেম্বর থেকে এই আসরের আগ পর্যন্ত ১৭ ম্যাচে ৫৫২ রান করেছেন তিনি ৪২.৪৬ গড়ে ও ১৮৫.৮৫ স্ট্রাইক রেটে। কিন্তু আইপিএলে এসে যেন ব্যাট ধরতেই ভুলে গেছেন!

প্রথম ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে প্রথম বলেই আউট হয়ে দুঃস্বপ্নের শুরু। আসরের ছয় ইনিংসে তিনটিতেই আউট হয়েছেন শূন্য রানে, আরেক ইনিংসে করেছেন এক, আরেকটিতে তিন।

হুট করেই বাজে ফর্মে যাওয়ার বাস্তবতা মেনে নিয়ে ম্যাক্সওয়েল বললেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ধরনই এরকম।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কখনও কখনও এরকম হতে পারে- বেশ পরিবর্তনশীল। প্রথম ম্যাচটিতে যদি ফিরে তাকান, আমার ব্যাটের মাঝেবল লাগার পরও কিপারের হাতে ধরা পড়েছি। বলের লেংথ বেশ আগেই ধরে ফেলেছি, রান করার সুযোগ দেখেছি, স্রেফ ব্যাটের মুখ একটু বেশিই উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ভালো সময়ে হয়তো এটি কিপারের পাশ দিয়ে চার হয়ে যেত। এক বলে চার রান তখন, টুর্নামেন্টে শুরুটা দারুণ হতো।

কিন্তু গতিটা আমি পাইনি। প্রথম কয়েক ম্যাচে আমার মনে হয়েছে, সিদ্ধান্ত ভালোই নিচ্ছিলাম। কিন্তু তার পরও কোনো না কোনো ভাবে আউট হওয়ার পথ বের করে ফেলছিলাম। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এরকম হতে পারে এবং দ্রুত যখন এটা হতে থাকে, মরিয়া হয়ে বেশি চেষ্টা করতে গিয়ে মৌলিক ব্যাপারগুলি ভুলে যায় অনেকে।

যে ম্যাচ দিয়েই তার বাইরে থাকার শুরু, সেই ম্যাচেই রানের জোয়ার বয়ে গেছে বেঙ্গালুরুর চিন্নাসোয়ামি স্টেডিয়ামে। হায়দরাবাদ করেছে ২০ ওভারে ২৮৭, বেঙ্গালুরু জবাতে গিয়েছে ২৬২ রান পর্যন্ত। ৫৪৯ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রেকর্ড হয়েছে বেশ কিছু।

এমন ব্যাটিং স্বর্গে ব্যাট করতে না পারার আক্ষেপটা কিছুটা জেগেছে ম্যাক্সওয়েলের। তবে বাইরের থাকার সিদ্ধান্তই যে ঠিক, সেটিও জোর দিয়েই বলেছেন তিনি।

পাওয়ার প্লের সময়ই খেয়াল করেছি, প্রথম কয়ে ম্যাচে যেরকম ছিল, সেরকম মন্থর ও দুই-রকম গতির উইকেট নয় এটি। তখন মনে হলো, এই ম্যাচেই বাইরে থাকাটা বাজে হলো হয়তো। এ দিন ব্যাট করতে পারলে ভালো হতো।

তবে যেটা বললাম, স্রেফ শারীরিক বিরতিই নয়, পেশাদার ক্রিকেট খেলার মতো অবস্থায় ফিরতে মানসিক বিরতিও নিতে চেয়েছি আমি। নিজর পারফরম্যান্সে অনেক গর্ব খুঁজে নেই আমি। প্রতিটি ম্যাচের জন্য নিজেকে সঠিক অবস্থায় রাখতে পর্দার আড়ালে কঠোর পরিশ্রম করে থাকি। এই লড়াইটা বেশ কঠিন, আমার শরীর এখন যেহেতু তিরিশের দ্বিতীয় ভাগে (৩৫-এর বেশি বয়স)। সেই শারীরিক ও মানসিক ধকল হয়তো আমাকে কিছুটা শ্রান্ত করে ফেলেছে।

আইপিএলে এবারের মতো দুঃসহ অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে তার। ২০২০ আসরে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে ১১ ইনিংসে মোট ১০৮ রান করতে পেরেছিলেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১০১.৮৮। অবিশ্বাস্যভাবে, গোটা টুর্নামেন্টে একটি ছক্কাও মারতে পারেননি।

তবে এবারের সঙ্গে সেভারের প্রেক্ষাপট মেলাতে চান না ম্যাক্সওয়েল।

এই বছরের চিত্র ছিল ভিন্ন। ওই সময় আমাকে যা কষ্ট দিচ্ছিল, তা হলো, খুব ভালো বোলিং করছিলাম আমি। মূলত বোলার হিসেবেই খেলছিলাম আমি, যে কি না শেষ দিকে একটু ব্যাটিং করে। আমাদের দলে (লোকশ) রাহুল ও মায়াঙ্ক (আগারওয়াল) ছিল, টুর্নামেন্টের সর্বেচ্চি রান স্কোরার ছিল ওরা। খুব বেশি বল তাই বাকি থাকত না আমাদের জন্য। এজন্য ম্যাচের কোনো ছন্দই খুঁজে নিতে পারছিলাম না।

কিংস ইলেভেনের ম্যানেজমেন্টকে তাই বলেছিলাম, আমার জায়গায় বিদেশি কোনো বোলারকে খেলাতে পারেন আপনারা। কিন্তু সমস্যা হলো, ভালো কোনো অফ স্পিনারও ছিল না দলে। আমি তাই অনেকটা বিদেশি স্পিনার হিসেবেই খেলেছি, যে একটু ব্যাট করতে পারে।

প্রেক্ষাপটে মিল না থাকলেও পারফরম্যান্সের ঘাটতিতে মিলে যাচ্ছে সেই আসর আর এই আসর। তিনি তাই জোর করে নিজেকে টেনে নিতে চান না। তবে ৩৫ বছর বয়সী ক্রিকেটার আবার বললেন, এবারের আসরেই ফিরে আসার আশা তিনি ছাড়ছেন না।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ভালো ফর্মে থাকার পরও প্রত্যাশিত রান এলো না। গত ছয় মাসে যে ধরনের পারফরম্যান্স করে এই টুর্নামেন্টে এসেছি, মনে হয় না এতটা ভালো সময় কখনও ছিল আমার। এভাবে শেষ হওয়াটা তাই হতাশাজনক।

তবে শরীর ও মানকে যদি ঠিক জায়গায় আনতে পারি, আরেকটা সুযোগ পেলে টুর্নামেন্ট ভালোভাবে শেষ করতে না পারার কোনো কারণই দেখছি না।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!