ঢাকা: না ফেরার দেশে আর্জেন্টিনার হয়ে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলা মেনোত্তি। খেলা ছাড়ার পর ৩৭ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে ১১টি ক্লাব ও দুটি দেশের জাতীয় দলের কোচের ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন নিজের দেশ আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্বে। ১৯৯১–১৯৯২ সালে সামলেছেন মেক্সিকো জাতীয় দলকে।
আর্জেন্টিনাকে ঘরের মাঠে ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জিতিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন মেনোত্তি। ছিপছিপে গড়নের জন্য ‘এল ফ্লাকো’ তকমা পাওয়া মেনোত্তি আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানোর পরের বছর অনূর্ধ্ব-২০ দলকেও জিতিয়েছেন যুব বিশ্বকাপ।
জাপানে ১৯৭৯ সাল অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। গোল্ডেন বল জিতে সেই টুর্নামেন্ট দিয়ে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক। ফাইনালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দল। মেনোত্তির হাত ধরে বড়দের বিশ্বকাপের মতো যুব বিশ্বকাপও সেবারই প্রথম জিতেছিল আর্জেন্টিনা।
তবে আর্জেন্টাইন ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে মেনোত্তি আরও একটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মেনোত্তির হাত ধরেই সহিংসতাপূর্ণ খেলার কুখ্যাতি থেকে সরে এসে রোমান্টিক ধাঁচের ফুটবল খেলে সমর্থকদের মন জিতেছে আর্জেন্টিনা।
মেনোত্তির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি লিখেছেন, ‘আর্জেন্টিনার ফুটবলের অন্যতম গ্রেট আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর পরিবার এবং প্রিয়জনদের প্রতি সমবেদনা। শান্তিতে ঘুমান।’
আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ লিওনেল স্কালোনি ইনস্টাগ্রামে শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘ফুটবলের একজন শিক্ষক আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। সেই সব স্নেহ সঞ্চারক কথার জন্য ধন্যবাদ, যার মাধ্যমে আপনি আমাদের মনে ছাপ রেখে গেছেন। চিরকাল হৃদয়ে থাকবেন প্রিয়।’
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন মেনোত্তি। লোকচক্ষুর অন্তরালে্ও ছিলেন দীর্ঘদিন। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে রক্তশূন্যতায় ভুগে প্রায় মাসখানেক হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন।
১৯৭০ সালে আর্জেন্টিনার ক্লাব নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ দিয়ে মেনোত্তির কোচিং ক্যারিয়ার শুরু। পরের বছর দায়িত্ব নেন হুরাকানের। ১৯৭৩ সালে ক্লাবটিকে জেতান তাদের ইতিহাসে ১৯২৮ সালের পর প্রথম লিগ শিরোপা। পরের বছর দায়িত্ব নেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের। ব্যক্তি জীবনে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন মেনোত্তি, কিন্তু ১৯৭৬ সালে আর্জেন্টিনা সামরিক শাসনের অধীনে আসার পরও জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব চালিয়ে যান তিনি। হয়তো বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন, আর সেটাই সত্যি হয় ১৯৭৮ সালে।
এআর