• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পিএসজি ছেড়ে স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে এমবাপ্পে


ক্রীড়া ডেস্ক মে ১১, ২০২৪, ০৪:৫৩ পিএম
পিএসজি ছেড়ে স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে এমবাপ্পে

ঢাকা: স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রায় ৭ বছর ধরে লড়াই করেছেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে এই স্ট্রাইকার। গতকাল রাতে এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, এ মৌসুম শেষেই পিএসজি ছাড়তে যাচ্ছেন। 

রোববার তুলুজের বিপক্ষে ম্যাচটিই হবে তার শেষ ম্যাচ। তার এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবেই শেষ হয়ে গেল এমবাপ্পের পিএসজি-অধ্যায়। আর একই সঙ্গে শুরু হয়ে গেল তার রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার ক্ষণগণনাও।

২০১৭ সালে মোনাকো থেকে ১৮ কোটি ইউরোতে পিএসজিতে আসেন এমবাপ্পে। তখনই এমবাপ্পেকে নিয়ে রিয়ালের আগ্রহের কথা শোনা গিয়েছিল, কিন্তু গুঞ্জন ডালপালা মেলার আগেই এই ফুটবল-প্রতিভাকে নিজেদের দখলে নেয় পিএসজি। প্রথম কয়েক মৌসুম পিএসজি-এমবাপ্পের যৌথ সংসারটা ভালোই ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের জুনে এমবাপ্পের স্বপ্নের ক্লাব তাকে কেনার আগ্রহ দেখানোর পর থেকেই শুরু হয় অমীমাংসিত থ্রিলার সিরিজের। ব্যাপারটা এমন ছিল যে পিএসজি ছাড়বে না আর রিয়াল হটবে না।

এরপর থেকে প্রত্যেকটি দলবদলেই এমবাপ্পেকে নিয়ে পিএসজি-রিয়ালের দ্বৈরথ ছিল বিশেষ কিছু। যখনই মনে হচ্ছিল, এমবাপ্পের পিএসজি ছেড়ে রিয়ালে যাওয়া সময়ের ব্যাপার, তখনই ঘটনায় আসে নতুন মোড়। এমনকি এমবাপ্পের রিয়ালে যাওয়া ঠেকাতে নাক গলাতে হয় খোদ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁকেও। গত দলবদলেও যেমন চুক্তি নবায়ন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল এমবাপ্পে ও পিএসজি। এমবাপ্পেকে প্রাক্‌-মৌসুম সফর থেকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি চুক্তি নবায়ন না করলে বেঞ্চে বসিয়ে রাখার হুমকিও দেয় প্যারিসের ক্লাবটি।

পরিস্থিতি এমন ছিল যে এমবাপ্পের পিএসজিতে থাকাটাই মনে হচ্ছিল অসম্ভব এক ব্যাপার। কিন্তু যথারীতি সেই অসম্ভবই পরে সম্ভব হয়েছে। এ মৌসুমের পুরোটাজুড়ে পিএসজির হয়ে খেলেছেন এমবাপ্পে। এর মধ্যে অবশ্য শীতকালীন দলবদলে আবার আলোচনায় আসে এমবাপ্পের দলবদল প্রসঙ্গ। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, জুনে পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষ করতে যাওয়া এমবাপ্পের সঙ্গে আগাম চুক্তি স্বাক্ষর করে রাখবে রিয়াল। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে সে ঘোষণা আর আসেনি।

এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি এক প্রতিবেদনে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা জানায়, রিয়ালের সঙ্গে আরও দুই সপ্তাহ আগে চুক্তি সম্পন্ন করেছেন এমবাপ্পে। ১ জুলাই থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রিয়ালের খেলোয়াড় হতে যাচ্ছেন। এর আগে পিএসজি সভাপতির সঙ্গে দেখা করেই নাকি চুক্তি নবায়ন না করার কথা জানিয়ে আসেন ২৫ বছর বয়সী এই ফুটবলার। সে সময় রিয়ালের সঙ্গে এমবাপ্পের ৫ মৌসুমের চুক্তির কথাও জানায় মার্কা। শুধু এটুকুই নয়, রিয়ালে এমবাপ্পের বেতন কাঠামো কেমন হতে পারে তা–ও জানিয়ে দেয় স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমটি। সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কা জানায়, রিয়ালে এমবাপ্পের বেতন হবে বার্ষিক ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরো থেকে ২ কোটি ইউরোর মধ্যে, এর সঙ্গে বোনাসও যুক্ত হবে।

মার্কার প্রতিবেদনটি যে স্রেফ গুঞ্জন ছিল না, সেটা প্রমাণ হতেও অবশ্য সময় লাগেনি। এই খবর সামনে আসার পর লিগ ‘আঁ’তে অনিয়মিত হয়ে পড়েন এমবাপ্পে। হয় বেঞ্চে রেখে কিংবা বদলি হিসেবে তাকে খেলানো শুরু করেন কোচ লুইস এনরিকে। এর কারণ জানতে চাইলে পিএসজি কোচ স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেন, এমবাপ্পেকে ছাড়া খেলার অভ্যাস তৈরি করতেই দলের এ সিদ্ধান্ত।

লিগ ম্যাচে ব্রাত্য হয়ে পড়লেও, চ্যাম্পিয়নস লিগে এমবাপ্পেই ছিলেন দলের মূল ভরসা। কিন্তু সেমিফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে দুই লেগেই হেরে বিদায় নিয়েছে দলটি। অথচ এমবাপ্পেকে পিএসজির ধরে রাখার অন্যতম কারণ ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে সাফল্য লাভ। যে লক্ষ্য অর্জনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী এ ফুটবলার। এমবাপ্পের সঙ্গে এর আগে নেইমার ও লিওনেল মেসিকে খেলিয়েও পিএসজি চেয়েছিল ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে। কিন্তু কোনো প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। যে কারণে এমবাপ্পেকে ঘিরে পিএসজির পুরো প্রজেক্টটির গায়েই এখন ব্যর্থতার লেবেল লাগিয়ে দিয়েছেন অনেকে।

আর ইউরোপিয়ান মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর এমবাপ্পেরও আর লুকোচুরির কিছু ছিল না। তাই মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই জানিয়ে দিলেন পিএসজি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা। ইউরোপে না পেলেও ঘরোয়া লিগে পিএসজির হয়ে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন এমবাপ্পে। ছয়টি লিগ শিরোপার সঙ্গে ফ্রেঞ্চ কাপের শিরোপা জিতেছেন তিনটি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত অনেক অর্জনও আছে তার। এসব অর্জনও অবশ্য এমবাপ্পের ইউরোপিয়ান ব্যর্থতাকে আড়াল করতে পারছে না।

যে ইউরোপিয়ান ব্যর্থতা পিএসজিতে বারবার সঙ্গী হয়েছে, সেটির খোঁজেই এখন রিয়ালের পথে পা বাড়াচ্ছেন এমবাপ্পে। রিয়াল যাদিও এমবাপ্পেকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে এমবাপ্পের পিএসজি ছাড়ার ঘোষণার পর এখন সবার চোখ রিয়ালের ওপরই নিবদ্ধ।

এমবাপ্পে নিজে জানিয়ে দিলেও তিনি কিন্তু এখনো পিএসজিরই খেলোয়াড়। তাই এই মুহূর্তে রিয়াল স্বাভাবিকভাবেই আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেবে না। তা ছাড়া অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেও শিক্ষা নিয়েছে রিয়াল। এর আগে একাধিকবার কাছাকাছি গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এবার তাই শেষটা দেখে নিয়েই হয়তো আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পথে হাঁটবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ক্লাবটি।

এআর

Wordbridge School
Link copied!