ঢাকা: অবশেষে বিদায়ের দিনক্ষণ জানালেন ইংল্যান্ডের তারকা পেসার জেমস অ্যান্ডারসন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে নিজের ঘরের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে শেষবার লাল বল আর সাদা জার্সিতে নামবেন কিংবদন্তী এই পেসার।
পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডে নারী দলের মধ্যেকার টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধারাভাষ্য কেন্দ্র থেকে অবসরের ঘোষণা দেবেন অ্যান্ডারসন- এটাই অনুমান করেছিল ব্রিটিশ গণমাধ্যম।
কখন আর কোথায় থামবেন তিনি-জেমস অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক দিন ধরেই চলছিল এমন আলোচনা। অবশেষে থামার ঘোষণাটা দিয়েই দিলেন ৪১ বছর বয়সী ইংলিশ ফাস্ট বোলার।
টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টেস্ট উইকেট নেওয়া পেসার জানিয়েছেন, এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। সেই লর্ডস, যেখানে ২১ বছর আগে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল তার।
অ্যান্ডারসন আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বার্তায় ক্যারিয়ারে যতি আঁকার দিনক্ষণ জানান। পরে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডও (ইসিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করে আনুষ্ঠানিক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে।
এবারের গ্রীষ্মে শেষ টেস্ট খেলবেন অ্যান্ডারসন-এক দিন আগেই এমন খবর দিয়েছিল গার্ডিয়ান। ২০২৫-২৬ অ্যাশেজ সামনে রেখে পেস বিভাগ ঢেলে সাজাতে চাইছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট। সেই চিন্তা থেকেই টেস্ট দলের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম অ্যান্ডারসনের সঙ্গে তার বিদায় নিয়ে কথা বলেছেন বলে জানানো হয় খবরটিতে।
অ্যান্ডারসনের তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় লিখেছেন, ‘লর্ডসে গ্রীষ্মের প্রথম ম্যাচটিই আমার শেষ টেস্ট হতে যাচ্ছে।’ হোক না, বয়স তার ৪১ বছর। এখনো তো দারুণভাবে ফিটনেস ধরে রেখেছেন।
বোলিং করছেন পূর্ণ ছন্দে আর উইকেট পাচ্ছেন। তাহলে এখনই কেন বিদায় বলতে যাওয়া! অ্যান্ডারসন কারণটা জানিয়েছেন এভাবে, ‘যে খেলাটা আমি শৈশব থেকে ভালোবাসতাম, সেটিতে অবিশ্বাস্য ২০টি বছর দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছি। ইংল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামাটা আমি মিস করব। তবে আমি জানি, এখনই সরে যাওয়া এবং আমার মতো অন্যদেরও স্বপ্নপূরণের পথ করে দেওয়ার সঠিক সময়, যে অনুভূতির চেয়ে বড় কিছু হয় না।’
স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মা ছাড়া এত দূর পাড়ি দেওয়া যেত না উল্লেখ করে ক্যারিয়ারে যে সব খেলোয়াড় ও কোচকে পেয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন অ্যান্ডারসন।
২০০৩ সালে লর্ডসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখেন ২১ বছর বয়সী পেসার। এর ছয় মাস আগে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা। অ্যান্ডারসন তার ১৯৪ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বশেষ ম্যাচটি খেলেছেন ২০১৫ বিশ্বকাপে। আর ২০০৯ সালে খেলেছেন ১৯ ম্যাচের টি টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সর্বশেষটি। অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে শুধু টেস্ট সংস্করণই চালিয়ে যাচ্ছেন অ্যান্ডারসন।
বয়স ৪১ হয়ে গেলেও ফিটনেস, নিবেদন ও সাফল্যে হয়ে উঠেছেন পেসারদের অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত। এরই মধ্যে নাম লিখিয়েছেন রেকর্ডের বেশ কয়েকটি পাতায়।
তার খেলা ১৮৭ টেস্ট যে কোনো পেসারের জন্য সর্বোচ্চ, সর্বোচ্চ ৭০০ উইকেটও। টেস্টে ৮০০ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে শ্রীলঙ্কান স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন, অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের উইকেট ৭০৮ টি।
মাত্র ৮ উইকেট পেছনে থাকায় অ্যান্ডারসনের সামনে শেষ টেস্টে ওয়ার্নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। লর্ডসে অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি শুরু হবে ১০ জুলাই।
অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ার সমাপ্তি টানার খবরে ইসিবির চেয়ারম্যান রিচার্ড টম্পসন বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না জিমির মতো কোনো বোলারকে আমরা আর দেখতে পাব।
একজন ইংলিশ সমর্থক হিসেবে তাকে খেলতে দেখা এবং বল হাতে তার দক্ষতা দেখাটা সম্মানের ছিল। ৪১ বছর বয়সেও শীর্ষ পর্যায়ে বোলিং করে যাওয়াটা অসাধারণ ব্যাপার। সতীর্থ ও তরুণ প্রজন্মের জন্য সে সত্যিকারের অনুপ্রেরণা ও আদর্শ।’
এআর