ঢাকা : কলকাতা ও হায়দরাবাদ, দুই ঐতিহাসিক শহরের মাঝের দূরত্ব প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার। আচার-সংস্কৃতিতেও ফারাক ততখানি। এর পরও এ দুই শহর একটি সুতোয় গাঁথা বিরিয়ানি দিয়ে। ইতিহাসবিদদের মতে কলকাতায় বিরিয়ানি নিয়ে আসেন আওধের শেষ নবাব ওয়াজেদ আলী। তবে স্বাদে-ঢঙে সেটা হায়দরাবাদের চেয়ে ভিন্ন ধাঁচের। দুই শহরের বিরিয়ানির মধ্যে মূল ভেদের বস্তু আলু।
কলকাতা তথা বাঙালি ঘরানার বিরিয়ানিতে আলু চাই-ই চাই; অন্য হাতে হায়দরাবাদে খেতে বসলে পাতে দেখা মেলে না আলুর। নানা ধরনের মসলার মিশেল পাওয়া যায় কলকাতায়, হায়দরাবাদের বিরিয়ানি সে তুলনায় বেশ সরল। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে আজ এ দুই শহর আলোচনার বিষয়বস্তু।
আর সেটা ২০২৪ আইপিএল ফাইনাল। শহরের হিসেবে দুটোরই তৃতীয়বার তৃপ্তির ঢেকুর তোলার মহা উপলক্ষ আজ চেন্নাইয়ে।
কাপ্তান গৌতম গম্ভিরের নেতৃত্বে কলকাতার আইপিএল শিরোপা উঁচিয়ে ধরার সেই মুহূর্তের পর বছর দশেক পেরিয়ে গেছে। এতদিন বাদে এসে আরও একবার গুরু গৌতম গম্ভিরের অধীনেই শিরোপা খরা কাটানো থেকে মাত্র এক ম্যাচ দূরে দাঁড়িয়ে শ্রেয়াস-রাসেলরা। তাদের আনন্দ ভঙ্গ করতে প্রস্তুত প্যাট কামিন্সের হায়দরাবাদ। যারা এবারের আসরে দুবারের দেখায় মোটেও পাত্তা পায়নি কলকাতার সামনে। তবে আসরের পর্দা টানার শেষ মঞ্চে দাঁড়িয়ে ওসব খতিয়ান অপ্রাসঙ্গিক।
যেকোনো বড় প্রতিযোগিতায় কোনো দলের ভালো করা না করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে দলটির নেতৃত্বগুণ। আর এ কারণেই এবারের ফাইনালটি হতে যাচ্ছে গৌতম গম্ভির ও প্যাট কামিন্সের মধ্যকার মগজাস্ত্রের লড়াই। গম্ভির কলকাতার বিরিয়ানির মতোই অনেকটা মসলাদার, যার ঝাঁজ টের পাওয়া যায় ক্ষণে ক্ষণে। অন্যদিকে কামিন্স যেন ঠিক হায়দরাবাদী বিরিয়ানি, সরল অথচ দৃঢ়চেতা।
বছর তের আগে কেউ কি ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিলেন এই কামিন্স অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হয়ে ৬ মাসের ব্যবধানে জিতে নেবেন অ্যাশেজ, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ শিরোপা। তাই ঢঙে আলাদা হলেও স্বাদে (অর্থাৎ ফলাফলে) দুজনই অনবদ্য। আর এ দুজনের মধ্যে পড়ে অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় ফাইনাল খেলতে নামা শ্রেয়াস আইয়ার বেশ ম্রিয়মাণ। কিন্তু তাকে ফেলে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রথম কোয়ালিফায়ারে এই হায়দরাবাদের বিপক্ষেই শ্রেয়াস দেখিয়েছেন তিনি কোন ধাতে গড়া।
মগজ ছেড়ে মাঠে আসা যাক। এ দুদলের নিজেদের মধ্যে ২৭ বারের মোকাবিলায় কলকাতার জয় ১৮, হায়দরাবাদের ৯। সবশেষ ১১ দেখায় মাত্র দুবার হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে হায়দরাবাদ। ফাইনালের মঞ্চ চিপকের চিদাম্বরম স্টেডিয়াম। কলকাতার প্রথম শিরোপাটি এই মাঠেই ২০১২ আসরে চেন্নাইকে হারিয়ে। কৌশল হওয়া উচিত কি তার আদ্যোপান্ত জানা গম্ভিরের। চিপকের স্পিনবান্ধব ও ধিমেতালে পিচে শাহবাজ-অভিষেকের স্পিন দিয়ে কামিন্স বধ করেন রাজস্থানকে।
আলাপ স্পিন নিয়ে হলে ২০ ও ১৬ শিকার ধরা বরুন চক্রবর্তী ও সুনিল নারিন ঢের এগিয়ে প্রতিপক্ষের তুলনায়। ইমপ্যাক্ট বদলির পোশাকে সুয়েশ শর্মাকেও রণে নামাতে দ্বিধা করবেন না চন্দ্রকান্ত পন্ডিত। ১৮০-২০০ রানের সংগ্রহ জমজমাট করে তুলবে শিরোপা লড়াই। তাতে হেড-ক্লাসেন কিংবা রাসেল-রিঙ্কুদের উইলোবাজি উপভোগ করার সুযোগ পাবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। অদ্ভুতুড়ে হলেও ভারতের টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ফাইনালে দেখা মিলবে না টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো ক্রিকেটারকে।
এমটিআই