ঢাকা: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে হারের পর সমালোচনার রোষানলে পড়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। পাকিস্তান ও ভারতের সাবেক ক্রিকেটাররা ধুয়ে দিচ্ছেন বাবর আজমের দলকে। আইসিসির সহযোগী দেশটির কাছে এশিয়ার পরাশক্তিদের পরাজয় হজম হচ্ছে না কারোই।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে সুপার ওভারে গড়ানো ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ১৮ রান করে যুক্তরাষ্ট্র। জবাব দিতে নেমে ১৪ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের জয় ৫ রানের। এর আগে পাকিস্তানের ছুঁড়ে দেওয়া ১৬০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৫৯ রানে থামে যুক্তরাষ্ট্রের ইনিংস। তাতেই ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
এমন হারের পর অধিনায়ক বাবরকে সর্বপ্রথম তোপ দেগেছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার হার্শা ভোগলে। টুইটারে হার্শা লিখেছেন, ‘বাবর আজমের আমি অনেকগুলো ভালো ইনিংসের সাক্ষী আমি। ৪৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটি সেগুলোর মধ্যে পড়ে না। এমন দুর্দান্ত উইকেটেও অদ্ভুতভাবে ওকে ছন্দহীন মনে হয়েছে।’
ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে ধীরগতির এক ইনিংস খেলেছেন বাবর। ৪৩ বলে ১০২.৩৩ স্ট্রাইক রেটে ৪৪ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছক্কার মার। বাবরের এই ইনিংস সমালোচনার খোরাক হয়ে আছে। দলের হারের পেছনেও তার এই ইনিংসকে দায়ী করেছেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ইরফান পাঠান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে বাবরের ইনিংসের সমালোচনায় ইরফান লিখেছেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে খেলতে নেমেও এমন ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ৪০ বলের বেশি খেলে তোমার স্ট্রাইকরেট ১০০। এটা কোনো ভাবেই দলকে সাহায্য করে না।’
সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার কামরান আকমল তার ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, ‘পাকিস্তানের জন্য এমন পারফর্ম্যান্স লজ্জাজনক। তারা যদি ইংল্যান্ডের মতো বড় দলের বিপক্ষে হারতো, তাও মানা যেত। কিন্তু তারা এমন দলের বিপক্ষে হারলো যারা তেমন ম্যাচই খেলেনি।’
সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকর সঞ্জয় মাঞ্জরেকার তো পাকিস্তানের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। টুইটারে তিনি লিখেন, ‘সুপার ওভারই বলে দেয় পাকিস্তানের খেলার মান কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। এটা পাকিস্তানের সবচেয়ে বাজে পরাজয়! আশা করি এই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে পাকিস্তান আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।’
সাবেক পাকিস্তানি পেসার শোয়েব আখতারের ভাষ্য, ‘এই হার খুবই হতাশাজনক। এটা মোটেও ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে… আমরা (লজ্জাজনক) ইতিহাস তৈরি করেছিলাম যেমনটা ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে করেছিলাম। তিতা সত্য হলো, পাকিস্তান কখনোই জয়ের যোগ্য ছিল না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত ভাল খেলেছে।’
এদিকে আমিরের বোলিং ও ফখরের নন-স্ট্রাইকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হাফিজ, ‘আমরা এক দিনে দুটি ম্যাচ হেরেছি। একটি ২০ ওভারে, আরেকটি সুপার ওভারে। বুঝলাম, এটা নার্ভাসনেস থেকে হয়েছে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং-সবকিছুতেই নার্ভাসনেস। (যার ফলে) সঠিক সিদ্ধান্তটি নেওয়া গেল না।’
অনুষ্ঠানে হাফিজের সঙ্গে ছিলেন সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার ও সাবেক অধিনায়ক ইউনিস খান। শোয়েবের দিকে তাকিয়ে হাফিজ জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার হাতে চারজন পেসার আছ। শেষ ওভার বা সুপার ওভারে আপনি কার হাতে বল তুলে দেবেন?’
শোয়েব জবাবে শাহিন শাহ আফ্রিদির নাম বলেন। দ্বিতীয় বোলার কাকে রাখবেন জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে হারিস রউফ। হাফিজ তখন ইউনিসকেও একই প্রশ্ন করলে তিনিও একই উত্তর দেন। এরপর হাফিজ নিজের মত প্রকাশ করে বলতে থাকেন, ‘এই মুহূর্তে আমার প্রথম পছন্দ নাসিম শাহ। দ্বিতীয় পছন্দ শাহিন শাহ। আমির চার বছর ধরে পাকিস্তান দলের বাইরে ছিল। আমি বারবার বলার চেষ্টা করছি, টি–টোয়েন্টি লিগের সঙ্গে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে মেলাতে যাবেন না। কিন্তু দলের প্রধান বোলারের ওপর আস্থা না রেখে আপনি নির্ভর করলেন চার বছর পর দলে আসা একজনের ওপর। এই হিসাবটা আমার বুঝে আসেনি।’
পাকিস্তানের এই হারের পেছনে বাবরের কৌশলগত ভুলই বড় অবদান রেখেছে বলে মনে করেন যুবরাজ। ভারতীয় সাবেক এই ক্রিকেটারের মতে, বাবরের উচিত ছিল সুপার ওভারে ফখর জামানকে স্ট্রাইকে পাঠানো। কারণ বাঁহাতি পেসার নেত্রাভলকারের মোকাবেলা বাঁহাতি ফখরই ভালো করতে পারতেন। কিন্তু পাকিস্তান অধিনায়ক স্ট্রাইকে পাঠিয়েছেন ইফতেখার আহমেদকে।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :