• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রান উৎসবের মাঠে শিরোপার হাসি কার


ক্রীড়া প্রতিবেদক জুন ২৯, ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
রান উৎসবের মাঠে শিরোপার হাসি কার

ঢাকা : এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা নাকি ব্যাটসম্যানদের কাছে ভুলে যাওয়ার মতো। অপবাদটা মিথ্যা নয়। নিউ ইয়র্কের ড্রপ-ইন উইকেটের দুঃস্বপ্ন থেকে সেন্ট লুসিয়ার ধীরগতির উইকেট, টি-টোয়েন্টির স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে করেছে ব্যাহত।

আইপিএলে যেখানে আড়াইশো রানকেও মনে হচ্ছিল মামুলি, এই বিশ্বকাপে ৫৪ ম্যাচে ১৮০-এর ওপরে দলীয় ইনিংস গেছে মোটে ১৫ বার। তবে আশার কথা হচ্ছে, ফাইনালটা নিউ ইয়র্ক বা সেন্ট ভিনসেন্টে নয়, হচ্ছে বার্বাডোজে; যেখানে ১৮১, ২০১ এমন সব দলীয় ইনিংস দেখা গেছে। ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং আর বোলিংয়ের সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দেখা যাবে কেনসিংটন ওভালে।

ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা, দুটো দল বিশ্বকাপের ফাইনালে এসেছে দুই রকম পথে। দক্ষিণ আফ্রিকার বেশিরভাগ ম্যাচেই গুলি গেছে কানের পাশ দিয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪ রানে, নেপালের বিপক্ষে ১ রানে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ রানে...এ রকম কঠিন সব ম্যাচের শেষে সেমিফাইনালে প্রোটিয়ারা পেয়েছে সহজতম জয়। প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান অলআউট মাত্র ৫৬ রানে। অন্যদিকে ভারত একটামাত্র ম্যাচেই চাপের মুখে পড়েছিল, সেটা সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউ ইয়র্কের ম্যাচটা ভুলেই যাওয়া উচিত। কারণ বৃষ্টি আর উইকেটের প্রকৃতি ১১৯ রানকেও বানিয়ে ফেলেছিল কঠিন এক লক্ষ্য আর পাকিস্তানের উদ্ভট ব্যাটিং তো আছেই। তবে অস্ট্রেলিয়ার ট্র্যাভিস হেড এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা মিলে ২০৫ রানকেও অনিরাপদ বানিয়ে ফেলেছিলেন। মাঝের ওভারে কুলদীপ চাহালের জোড়া শিকার না হলে হয়তো জিতেও যেত অস্ট্রেলিয়া।

আইপিএলের সুবাদে দুই দলের ক্রিকেটাররা মাস দুয়েক একে অন্যের সঙ্গে এতটাই মিশে ছিলেন যে এখন তাদের আলাদা করাই মুশকিল। এইডেন মার্করাম এবং হেনরিখ ক্লাসেন, যতটা না দক্ষিণ আফ্রিকার, ঠিক ততটাই তো সানরাইজারস হায়দরাবাদের! আইপিএলে খেলার সময় তাদের ব্যাট বুমরাহ, কুলদীপ আর্শদীপকে একদমই ছাড় দেয়নি। প্রোটিয়া জার্সিতেও দেবে না। আবার আইনরিখ নরকিয়া, মার্কো ইয়ানসেনরাও আইপিএল খেলে খেলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সম্পর্কে অভিজ্ঞতাটা নিয়ে নিয়েছেন। ফাইনালটা হবে তাই সেয়ানে সেয়ানে।

এই বিশ্বকাপের চ্যালেঞ্জটা আসছে অন্য জায়গা থেকে, সেটা হচ্ছে যাতায়াত। দ্বীপ থেকে দ্বীপে যেতে বিমান ছাড়া গতি নেই। প্রায়ই ফ্লাইট  বিলম্ব হচ্ছে। বার্বাডোজে বিমানবন্দরে একটা বিমান ল্যান্ডিংয়ের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় বিমানবন্দরে ৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল ফ্লাইট ওঠানামা। তাই ত্রিনিদাদে বিমানবন্দরে আটকা পড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলের খেলোয়াড়, তাদের পরিবার, ধারাভাষ্যকার, আইসিসি কর্মকর্তাসহ অনেকেই। বিমান বিভ্রাটে ভুগেছে আফগানিস্তানও, মোটে ১ ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন খেলোয়াড়রা ম্যাচের আগে। ভারত অবশ্য এসব জায়গায় একটু সুবিধা পেয়ে আসছে, গোটা আসরে তাদেরই ভ্রমণ করতে হয়েছে সবচেয়ে কম।

সৌরভ গাঙ্গুলি একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় যখন খেলতে যেতাম, তখন পাল্টা মার দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে যেতাম। জানতাম পন্টিং সেঞ্চুরি করবে, ম্যাকগ্রা ভালো বল করবে, ব্রেট লি বুড়ো আঙুল ভাঙতে চাইবে, আমাদেরও মার খেয়ে পাল্টা মারতে হবে।’ এই বিশ্বকাপের ফাইনালটাও হতে পারে তেমনি। রোহিত মারবেন, সূর্যকুমার মারবেন, রিশাভ পান্ট মারবেন, হার্দিক পান্ডিয়া মারবেন। ওদিকে কুইন্টন ডি কক, এইডেন মার্করাম, হেইনরিখ ক্লাসেন, ডেভিড মিলারদেরও পাল্টা মার লাগাতে হবে। জাসপ্রিত বুমরাহ বাউন্সার দিলে আইনরিখ নরকিয়ার পাল্টা বাউন্সার দিতে হবে। আর্শদীপ ইয়র্কার ছুড়লে কাগিসো রাবাদাকে করতে হবে দুটো। কুলদীপের জবাবে শামসি।

দুটো জায়গায় ভারত এগিয়ে। অক্ষর প্যাটেল আর রবীন্দ্র জাদেজা। এই দুজন ভারতের বোলিং বিকল্প এবং ব্যাটিং গভীরতা দুটোই বাড়িয়েছেন। মার্কো ইয়ানসেন আর হার্দিকের ভেতর তুলনা হলে হার্দিকই ব্যাটিংয়ে এগিয়ে। ফাইনালে শিভাম দুবেকে খুব বড় ভূমিকা নিতে হলে সেটা ভারতের দুর্ভাগ্য।

সেমিফাইনালটা বেশি সহজে জিতে আসা দল বেশিরভাগ সময় ফাইনালে হেরে যায়, এমনটা দেখা গেছে বিশ্বকাপ ফুটবলে বা বড় আসরে। সেমিফাইনালের কড়া টক্করটাই খেলোয়াড়ের দেহ মনকে ধারালো করে তৈরি করে দেয়। সহজে সেমিফাইনাল জিতে প্রথমবার ফাইনালে আসা প্রোটিয়ারা স্নায়ুর চাপ কতটা ধরে রাখবে ফাইনালে, সেটাই নিয়ন্ত্রণ করবে ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স। অন্যদিকে রোহিত চাইবেন আহমেদাবাদের হতাশা ক্যারিবিয়ানের সাগরে ডুবিয়ে দিতে। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা রোহিতের এটাই হয়তো শেষ বিশ্বকাপ। সমাপ্তির রেখাটা জয়ের তুলিতেই তো টানতে চাইবেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে আইপিএলের জন্য ভারতের ক্রিকেটের এত এগিয়ে যাওয়া বা টি-টোয়েন্টিতে শক্তিশালী হয়ে ওঠা, সেই আইপিএল চালুর পর কিন্তু ভারত আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতেনি। ২০১৪ সালে ফাইনাল খেলেছিল, এতটুকুই সাফল্য। আর দক্ষিণ আফ্রিকা তো এবারই প্রথম ফাইনালে। নিজের দেশে টি-টোয়েন্টি লিগের জন্য যারা আনকোরা দল পাঠিয়েছিল নিউজিল্যান্ডে টেস্ট খেলতে।

মন বলছে, শিরোপাটা নিক দক্ষিণ আফ্রিকা, ঘুচে যাক তাদের আক্ষেপ। তবে মাথা বলছে, শিরোপাটা নেবে ভারত; অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তানের মতো প্রতিপক্ষ হারিয়ে ফাইনালে এসে খালি হাতে তো ফেরত যাবে না।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!