ঢাকা : ভীষণ প্রয়োজনের সময় আরও একবার জ্বলে উঠলেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। টাইব্রেকারে একুয়েডরের প্রথম দুটি শট ঠেকিয়ে দিলেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক। প্রথম শটে লিওনেল মেসি ক্রসবারে মারলেও মার্তিনেসের বীরেত্বে সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নিল লিওনেল স্কালোনির দল।
হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে মূল ম্যাচ টাই হওয়ার পর পেনাল্টি শ্যুটআউটে একুয়েডরকে ৪-২ ব্যবধানে হারায় আর্জেন্টিনা। এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ১-১ সমতায় থাকে ম্যাচ।
৩৫তম মিনিটে আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের প্রথম গোলে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন লিসান্দ্রো মার্তিনেস। যোগ করা সময়ে গোল করে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে যান কেভিন রদ্রিগেস।
পেনাল্টি শ্যুটআউটে প্রথম শট নেন মেসি। গোলরক্ষককে বোকা বানালেও তার 'পানেনকা' শট শট ক্রসবারে লেগে চলে যায় বাইরে।
আর্জেন্টাইনদের বেশিক্ষণ হতাশ থাকতে দেননি এমিলিয়ানো। বাম দিকে ঝাঁপিয়ে আনহেল মেনার শট ঠেকিয়ে দেন তিনি। পরে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে আলান মিন্দার শটও ঠেকিয়ে দূর করে দেন সব উদ্বেগ।
হুলিয়ান আলভারেস, আলেক্সিস মাক আলিস্তের এবং দ্বিতীয়ার্ধের দুই বদলি গনসালো মন্তিয়েল ও নিকোলাস ওতামেন্দি জাল খুঁজে নিলে একুয়েডর-পরীক্ষায় উতরে যায় কোপা আমেরিকার শিরোপাধারীরা। চমক দেখানোর খুব কাছে গিয়েও কোয়ার্টার-ফাইনালেই বিদায় নেয় একুয়েডর।
কনমেবলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফাইনাল ব্যতীত অন্য নকআউট ম্যাচে ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হওয়ার পর নেই অতিরিক্ত ৩০ মিনিট। তাই মূল ম্যাচ সমতায় শেষ হওয়ার পর সরাসরি খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও অবশ্য পেনাল্টি পেয়েছিল একুয়েডর। এমিলিয়ানো ভুল দিকে ঝাঁপ দিলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি অধিনায়ক এনের ভালেন্সিয়া। পোস্টে লেগে ফিরে আসে বল। সে দফায় বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা।
হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে ম্যাচজুড়েই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে সমানে-সমান লড়াই করে একুয়েডর। বলের নিয়ন্ত্রণে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে তেমন ধাঁর দেখাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ম্যাচে ৮ শটের মাত্র ২টি লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। একুয়েডর করেন ৯টি। ২টি থাকে লক্ষ্যে।
শঙ্কা উড়িয়ে মেসির নেতৃত্বেই খেলতে নামে আর্জেন্টিনা। শুরু থেকে বলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে খেলতে থাকে শিরোপাধারীরা। কিন্তু আক্রমণে ছিল বেশ জড়তা, যেতে পারছিল না একুয়েডরের ডি-বক্সের কাছে।
ষষ্ঠ মিনিটে থ্রো-ইন থেকে বল পেয়ে আর্জেন্টিনার বক্সে ঢুকে যান মোইসেস কেইসেদো। শেষ মুহূর্তে রদ্রিগো দে পলের চ্যালেঞ্জে ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি তিনি।
পঞ্চদশ মিনিটে প্রথম বড় সুযোগ তৈরি করে একুয়েডর। ছয় গজের বক্সের বাম পাশ থেকে হেরেমি সারমিয়েন্তোর শট দারুণ রিফ্লেক্সে বাম পা বাড়িয়ে ঠেকিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। ফিরতি বলে জোরাল শটে লক্ষ্যে রাখতে পারেননি কেন্দ্রি পায়েস।
২১তম মিনিটে নিজেদের প্রথম সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। মেসি ডান পাশ থেকে দূরের পোস্টে খুঁজে নেন নিকোলাস গনসালেসকে। ঠিক মতো শট নিতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড, জটলায় হারিয়ে যায় বল।
৬ মিনিট পর বাই লাইন থেকে বক্সের ভেতরে ক্রস দেন নাহুয়েল মলিনা। ভালো জায়গায় পেলেও হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি এনসো ফের্নান্দেস। তিন মিনিট পর আলেক্সিস মাক আলিস্তেরকে অহেতুক ফাউল করে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন একুয়েডর অধিনায়ক এনের ভালেন্সিয়া।
৩৪ মিনিটে একুয়েডরের আক্রমণ সামলে নিজেদের অর্ধ থেকে থ্রু পাস দেন মেসি। বড় সুযোগ পেয়ে যান এনসো। কিন্তু একমাত্র ডিফেন্ডারের শরীর বরাবর শট নেন চেলসির হয়ে খেলা তরুণ মিডফিল্ডার।
ওই কর্নার থেকেই পরে গোল করে আর্জেন্টিনা। মেসির কর্নার কাছের পোস্ট থেকে ফ্লিক করে দূরের পোস্টে পাঠান মাক আলিস্তের। আলতো করে হেডে ফাঁকা জালে বল পাঠান লিসান্দ্রো মার্তিনেস।
আর্জেন্টিনার হয়ে এটিই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডার লিসান্দ্রোর প্রথম গোল। চলতি কোপা আমেরিকায় এটিই প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার প্রথম গোল।
এগিয়ে যাওয়ার পর উন্নতি ঘটে আর্জেন্টিনার খেলায়। আরও ধারাল হয়ে ওঠে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের আক্রমণ।
বিরতির আগে আরেকটি সুযোগ পান এনসো। দে পলের এগিয়ে দেওয়া বল বাম পায়ের শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি। দূরের পোস্টে কাছাকাছি থাকলেও নাগাল পাননি লাউতারো মার্তিনেস।
দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টিনার রক্ষণে চাপ দিতে থাকে একুয়েডর। অনেকটাই বিবর্ণ ফুটবল খেলতে দেখা যায় আর্জেন্টিনাকে।
এর মাঝেও প্রথম সুযোগটা তারাই পায়। ৫৫তম মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে এমিলিয়ানোর লম্বা ফ্রি কিক ফাঁকায় পেয়ে যান লাউতারো। কিন্তু বুক দিয়ে নামিয়ে বাম পায়ের শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ইন্টার মিলানের ফরোয়ার্ড।
মিনিট পাঁচেক পর কর্নার থেকে আসা বল দে পলের হাতে লাগলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ভালেন্সিয়ার শটে বাম দিকে ঝাঁপ দেন এমিলিয়ানো। তবে বল লাগে ডান পাশের পোস্টে। অক্ষত থাকে আর্জেন্টিনার জাল।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :