ঢাকা : মাস্ক খুলে ফেললেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। গতিময় ফুটবলে আক্রমণভাগের নেতৃত্বও দিলেন; কিন্তু গোল পেলেন না। বরং ১৬ বছর বয়সেই পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসা লামিনে ইয়ামাল সব আলো কেড়ে নিলেন। চমৎকার এক গোলে দলকে পথ দেখালেন তিনি। পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে, ফ্রান্সকে হারিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠল স্পেন।
মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাতে প্রথম সেমি-ফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে লুইস দে লা ফুয়েন্তের দল। গতি আর নান্দনিক ফুটবলে আসরে ছয় ম্যাচ খেলে সবগুলোই জিতল স্পেন।
রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে তিনটি গোলই হয়েছে ২৫ মিনিটের মধ্যে। রান্দাল কোলো মুয়ানির গোলে পিছিয়ে পড়া স্পেন সমতায় ফেরে ইয়ামালের গোলে। তাদের জয়সূচক গোলটি করেন দানি ওলমো।
আগের ম্যাচের একাদশ থেকে দলে দুটি পরিবর্তন আনেন দিদিয়ে দেশম; ছন্দ খুঁজে ফেরা অঁতোয়ান গ্রিজমান ও এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার জায়গায় উসমান দেম্বেলে ও আদ্রিওঁ রাবিওকে নামান ফ্রান্স কোচ।
আর দারুণ ফর্মে এগিয়ে চলা দলে বাধ্য হয়ে তিনটি পরিবর্তন আনেন স্পেন কোচ। কার্ডের নিষেধাজ্ঞায় পড়া সেন্টার ব্যাক হবাঁন লু নহমাঁ ও নির্ভরযোগ্য ফুলব্যাক দানি কারভাহাল এবং চোট পেয়ে ছিটকে পড়া পেদ্রির জায়গায় নাচো ফের্নান্দেস, হেসুস নাভাস ও দানি ওলমোকে একাদশে রাখেন লুইস দে লা ফুয়েন্তে।
পাঁচে-পাঁচ জয়ের তুঙ্গস্পর্শী আত্মবিশ্বাসে মাঠে নামা স্পেন শুরু থেকেই আক্রমণে জোর দেয়। দারুণ ছন্দে থাকা ইয়ামাল পঞ্চম মিনিটে দারুণ এক সুযোগও তৈরি করেন; কিন্তু তার ক্রস ছয় গজ বক্সে পেয়েও হেডে উড়িয়ে মারেন ফাবিয়ান রুইস।
এরপরই দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে স্প্যানিশদের বুকে আঘাত হানে ফরাসিরা। অষ্টম মিনিটে সতীর্থের পাস পেয়ে বক্সে থেকে শট নিতে পারতেন এমবাপে। কিন্তু কোনো উচ্চাভিলাষী প্রচেষ্টায় না গিয়ে দূরের পোস্টে দারুণ এক ক্রস বাড়ান তিনি, আর নিখুঁত হেডে দলকে এগিয়ে নেন কোলো মুয়ানি।
আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেই ইউরোয় সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে খেলার ইতিহাস গড়া ইয়ামালের অসাধারণ নৈপুণ্যে ২১তম মিনিটে সমতায় ফেরে স্পেন। মোরাতার পাস পেয়ে বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে, সামনে প্রতিপক্ষের একাধিক খেলোয়াড়ের ওপর দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে শট নেন ইয়ামাল। বল সামান্য বাঁক খেয়ে পোস্টে লেগে ঠিকানা খুঁজে পায়।
দলকে সমতায় ফেরানোর স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি আরেকটি রেকর্ড গড়েন ইয়ামাল। এই প্রথম ১৬ বছর বয়সী কোনো খেলোয়াড় ইউরোয় গোল করার কীর্তি গড়লেন, সেটাও সেমি-ফাইনালের মঞ্চে!
চার মিনিট পর আবারও ফ্রান্সের জালে বল। এবারের গোলদাতা পেদ্রির অনুপস্থিতিতে শুরুর একাদশে সুযোগ পাওয়া ওলমো। ডান দিক থেকে হেসুস নাভাসের শট রক্ষণে প্রতিহত হওয়ার পর বক্সেই পেয়ে যান ওলমো; ঠাণ্ডা মাথায় জোরাল কোনাকুনি শট নেন লাইপজিগ ফরোয়ার্ড, বল জুল কুন্দের পা ছুঁয়ে জালে জড়ায়।
জার্মানির বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে পেদ্রি চোট পাওয়ার পর তার বদলি নেমে দলকে এগিয়ে নেওয়া গোলটি করেছিলেন ২৬ বছর বয়সী ওলমো।
ফাইনালে ওঠার হাতছানিতে জেগে ওঠা ফরাসিরাও সমানতালে উঠতে থাকে পাল্টা আক্রমণে। কিন্তু বিরতির আগে সমতা টানার মতো উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি তারা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই অনেক বড় বিপদে পড়তে পারতো ফ্রান্স। উড়ে আসা বলের পেছনে একা ছুটে যান নিকো উইলিয়ামস, ওই সময় পোস্ট ছেড়ে অনেকটা বেরিয়ে এসেছিলেন মাইক মিয়াঁ। দ্রুত ছুটে গিয়ে স্লাইড করে প্রতিপক্ষ থেকে বল কেড়ে নেন ফ্রান্স গোলরক্ষক।
৫৬তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে বাঁ দিক থেকে বক্সে ঢুকে পড়েন এমবাপে। কিন্তু দুরূহ কোণ থেকে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে দিয়ে গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন তিনি। চার মিনিট পর অন্যপাশ দিয়ে আক্রমণে ওঠে তারা; এবার দেম্বেলের জোরাল শট এক হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দেন উনাই সিমন।
সময় গড়ানোর সঙ্গে এমবাপে-দেম্বেলেরা মরিয়া হয়ে উঠতে থাকেন, আর স্প্যানিয়ার্ডদের ধার ক্রমেই কমতে থাকে। ৭৫তম মিনিটে ডি-বক্সে দুই দফায় সুযোগ পেয়েও বিপদমুক্ত করতে পারেনি তারা, উল্টো ফাঁকায় বল পেয়ে যান থিও এরনঁদেজ। কিন্তু উড়িয়ে মেরে দলকে হতাশায় ডোবান এসি মিলান ডিফেন্ডার।
দ্বিতীয়ার্ধে পুরো স্পেন দলের মতো ইয়ামালকেও ভুগতে দেখা যায়। ৮২তম মিনিটে তিনি অবশ্য সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তার দূর থেকে নেওয়া শট বাইরে দিয়ে যায়। তবে দিনশেষে তিনিই দলের নায়ক; সেমি-ফাইনালের ম্যাচসেরা।
ইয়ামালের ওই মিসের একটু পরই ফল বদলে দেওয়ার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপে। কিন্তু তার দূর থেকে নেওয়া শট উড়ে যায় আকাশে, শেষ হয়ে গেল ফ্রান্সের পথচলাও।
আগামী রোববার বার্লিনের ফাইনালে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন মুখোমুখি হবে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে বিজয়ীর।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :