ঢাকা : রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে তখনই বেশ গজরাতে দেখা গেছে রোনাল্ড কুমানকে। ম্যাচের পরও ভিএআর নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন নেদারল্যান্ডস কোচ। যে পেনাল্টি থেকে সমতা ফিরিয়েছে ইংল্যান্ড, সেটিকে কোনোভাবেই পেনাল্টি মানতে রাজি নন তিনি। তার মতে, ইংল্যান্ডে খেলা হলে কোনোভাবেই এটি পেনাল্টি দেওয়া হতো না।
ম্যাচের শেষ সময়ে অলি ওয়াটকিন্সের দুর্দান্ত গোল পাল্টে দিয়েছে চিত্র। নইলে এর আগ পর্যন্ত ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ওই পেনাল্টিই। ইউরোর সেমি-ফাইনালে বুধবার শাভি সিমন্সের দারুণ গোলে সপ্তম মিনিটেই এগিয়ে যায় কুমানের দল। একটু পরই ওই পেনাল্টি।
হ্যারি কেইন শট নেওয়ার সময় পা বাড়িয়ে দেন ডাচ ডিফেন্ডার ডেনজেল ডামফ্রিস। তা পা গিয়ে বেশ ভালোভাবেই আঘাত করে কেইনের পায়ে। ভিএআর মনিটরে দেখে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। রিপ্লে দেখার পর ধারাভাষ্যকাররা যদিও সংশয়ে ছিলেন। ইংলিশ ধারাভাষ্যকাররাও বলছিলেন, পেনাল্টির সিদ্ধান্ত হয়তো একটু বেশিই রূঢ়।
সেই পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান কেইন। এরপর ম্যাচে ১-১ সমতা ছিল ৯০ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু যোগ করা সময়ে গোল করে ইংল্যান্ডকে ফাইনালে তোলেন ওয়াটকিন্স।
ম্যাচের পর যথারীতি অনেক আলোচনার খোরাক জোগাল পেনাল্টির ওই সিদ্ধান্ত। নেদারল্যান্ডসের কোচ কুমান নিজেও খেলোয়াড়ী জীবনে ছিলেন দুর্দান্ত এক ডিফেন্ডার। বার্সেলোনার কিংবদন্তি তিনি। সাবেক ডিফেন্ডার হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত মানতেই পারছেন না এই কোচ।
এটা পেনাল্টি নয়। তার (ডামফ্রিস) একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল শটটি ব্লক করা। হ্যারি কেইন সেখানে শট নেয় এবং তাদের দুজনের পায়ে সংঘর্ষ হয়।
একজন ডিফেন্ডারের কাজ কি? সে তো শট আটকানোর চেষ্টাই করবে! এটার জন্য শাস্তি দেওয়া মানে তাকে বলে দেওয়া যে, ‘উপযুক্ত ফুটবল তুমি খেলতে পারবে না।’ আমিও ডিফেন্ডার ছিলাম। ওই অবস্থায় আমি থাকলে আর কী করতে পারতাম! আরও অনেক তুচ্ছ ব্যাপারে রেফারি বাঁশি বাজিয়েছেন। যদিও আমাদের হারের কারণ এটা নয়।
ভিএআর নিয়ে নিজের প্রবল আপত্তির কথাও এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখলেন কুমান।
এই ধরনের ভিএআর সিদ্ধান্তে ফুটবল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডে খেলা হলে কোনোভাবেই এই পেনাল্টি দেওয়া হতো না।
ওই পেনাল্টি বড় ব্যবধান গড়ে দিয়েছ বটে। তবে ম্যাচে তো এরপরও বাকি ছিল অনেক কিছুই। কুমান সেসবও তুলে ধরছেন। বিশেষ করে, শেষ ভাগে ভালো খেলেও ম্যাচ হেরে যাওয়ায় তিনি হতাশ।
শেষের ফলাফল নিয়ে আমি হতাশ, কারণ শুরুটা ভালো করেছিলাম আমরা। তবে ইংল্যান্ড মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, এরপর আমাদের কিছু পরিবর্তন করতেই হতো। আমার মনে হয়, এরপর আমরা শ্রেয়তর দল ছিলাম। শেষ ২০ মিনিটে আমরাই বেশি ভালো খেলেছি। কিন্তু ৯১তম মিনিটে ওরা একটা খুনে গোল করে ফেলল। সেটির জবাব দেওয়ার সময় আর ছিল না। এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
ফাইনালে উঠতে না পারলেও মাথা উঁচু করেই বিদায় নিচ্ছেন কোচ। দলের পারফরম্যান্স নিয়ে খুব একটা আঙুল তোলার জায়গা তিনি দেখছেন না।
সাধারণভাবে, দলকে নিয়ে আমি গর্বিত। প্রতি ম্যাচেই ওরা কিছু না কিছু মেলে ধরেছে, যা ভালো লেগেছে আমার। আজকেও যেভাবে শেষ পর্যন্ত লড়েছে, কোনো সমালোচনাই ওদের প্রাপ্য নয়। সিংহের মতো লড়েছে ওরা।
স্রেফ আরেকটু ভারসাম্য দরকার ছিল আমাদের এবং এখানে ইংল্যান্ড আমাদের চেয়ে ভালো করেছে, তাদেরকে অভিনন্দন। আমার ফুটবলারদের ধন্যবাদ জানাতেই হবে, কারণ ওরা বিশ্বাস হারায়নি। এখন যদিও অনেক দেরি হয়ে গেছে… আর কিছু করার নেই। তবে ভবিষ্যতে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরব।
সেই ভবিষ্যতে তাকিয়েই দারুণ কিছুর হাতছানি দেখতে পাচ্ছেন ৬১ বছর বয়সী কোচ।
দারুণ মানসিকতা… দুর্দান্ত টিম স্পিরিট… ভালো লাগত, যদি ওদেরকে ফাইনালে দেখতে পারতাম। সেটা হয়নি। খারাপ লাগছে। তবে এই দলের অপেক্ষায় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। আমি বিশ্বাস করি, আরও অনেক কিছু অর্জন করতে পারব আমরা। আরও কিছু ফুটবলার এখানে যোগ হবে। চোটের কারণে কয়েকজন খেলতে পারেনি এখানে।
নিজেরা বিদায় নিলেও ফাইনাল ঘিরে আগ্রহ থাকবে কুমানের। দুই যুগের বেশি সময় ধরে কোচিং করিয়ে আসা এই কোচের মতে, ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে ভালোভাবেই।
ইংল্যান্ড আজকে ভালো ফুটবল খেলেছে। স্পেন আরেকটু বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে, রক্ষণেও একটু বেশি ভালো। তবে ইংল্যান্ড যেহেতু ফাইনালে উঠে গেছে, শিরোপাও জিততে পারে। ফিল ফোডেন, জুড বেলিংহ্যামের মতো বিশ্বমানের ফুটবলার ওদের আছে এবং যে কোনো দলকে ওরা বিপদে ফেলতে পারে।
এমটিআই