• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মাদ্রিদে আনন্দ-উল্লাসের জোয়ারে চ্যাম্পিয়নদের বরণ


ক্রীড়া ডেস্ক জুলাই ১৬, ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
মাদ্রিদে আনন্দ-উল্লাসের জোয়ারে চ্যাম্পিয়নদের বরণ

ঢাকা : পথে পথে লাখো মানুষ। প্রায় সবারই গায়ে দলের জার্সি কিংবা পতাকার রঙের পোশাক। হাতে হাতে পতাকা, গায়ে জড়ানো পতাকা তো আছেই। পতাকার রঙে ক্যাপ-হ্যাট, বিশালাকৃতির চশমা এবং নানা কিছু। সব মিলিয়ে লাল-সবুজের সমুদ্র যেন। বলা যায় গৌরব আর ভালোবাসার স্রোত। সেই জোয়ার দিয়েই ইউরোতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলকে বরণ করে নিলেন স্প্যানিশরা।

বার্লিনে রোববার ইউরোর ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারায় স্পেন। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরে তাদের চতুর্থ শিরোপা এটি। ১৬ বছর আগেও যে দেশটির ইউরো শিরোপা ছিল স্রেফ একটি, এখন তারাই রেকর্ড সর্বোচ্চ বারের চ্যাম্পিয়ন।

ফাইনাল শেষে রাতেই আনন্দ-উল্লাস হয়েছে স্পেনজুড়ে। পরদিনও চলতে থাকে উদযাপনের পালা। সকাল থেকেই পথে নামতে থাকে মানুষ। চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা জার্মানি থেকে দেশে ফেরেন সোমবার দুপুরে। আগে যদিও জানা গিয়েছিল, তারা ফিরবেন মঙ্গলবার। তবে সোমবার দুপুরেই বিজয়ী দল মাদ্রিদ বিমানবন্দরে পা রাখে।

বিমানবন্দরে তাদেরকে বরণ করে নেওয়া হয় নানা আনুষ্ঠানিকতায়। পরে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে গোটা দল যায় সারসুয়েলা প্যালেসে রাজা ষষ্ঠ ফেলিপের সঙ্গে দেখা করতে। রোববারের ফাইনালে বার্লিনের স্টেডিয়ামেও ছিলেন রাজা ও রানী। রাজপ্রাসাদে ছিল বিশেষ আয়োজন। রানী ও দুই রাজকন্যার গায়ে ছিল জাতীয় দলের জার্সি। দলকে অভিনন্দন জানিয়ে রাজা ফেলিপে বলেন, “যেভাবে আপনারা চেষ্টা করেছেন এবং যে আনন্দ নিয়ে খেলেছেন ও গোটা দেশের জন্য খুশির উপলক্ষ বয়ে এনেছেন, এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের জন্য রেকম আনন্দ দারুণ কিছু।

সেখান থেকে গোটা দলকে নেওয়া হয় স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন মনক্লোয়া প্যালেসে। সেখানেও দলকে সংবর্ধনা দেন প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেস।

এরপর শুরু হয় আসল উদযাপনের পালা। ছাদ খোলা দ্বিতল বাসে শহর প্রদক্ষিণ করেন চ্যাম্পিয়নরা। পথে পথে জনস্রোত তো ছিলই, বাড়ির ছাদ, ব্যালকনি, জানালা দিয়েও হাত নেড়ে, পতাকা উড়িয়ে দলের প্রতি ভালোবাসা জানান স্প্যানিশরা। অনেকের গায়েই পোশাক লেখা ছিল ‘ইউরোপের সেরা’ কিংবা ‘ইউরোপের রাজা।’ চতুর্থ শিরোপার জন্য বিশাল করে ‘৪’ লেখা ছিল অনেকের পোশাকে। ফুটবলাররাও নেচে-গেয়ে নানাভাবে উদযাপন করেন ও মানুষের শুভেচ্ছার জবাব দেন।

সেই বিজয়যাত্রা শেষ হয় সিবেলেস প্যালেসে, যেখানে ছিল উদযাপনের মূল আয়োজন। সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতেই দিনের আলো মিলিয়ে যায়, তবে রাতের আঁধার কেটে আনন্দ-আলোর বন্যায়। ততক্ষণে সিবেলেস প্যালেসের চারপাশ লোকে লোকারণ্য। তিল ধারণের ঠাঁই নেই যেন কোথাও। ‘চ্যাম্পিয়ন… চ্যাম্পিয়ন’ গর্জনে প্রকম্পিত হয় চারপাশ।

ফুটবলের এই সাফল্যে সব ভেদাভেদ ভুলে অন্তত কদিনের জন্য হলেও গোটা দেশ এককাট্টা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন উপস্থিত মানুষদের অনেকেই। তাদেরই একজন তরুণ ফুটবল সমর্থক বোরিয়া স্পেনের জাতীয় টেলিভিশনে বলন, “আমরা দারুণ এক দেশ… এরকম দিনে সবার মনে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ, এই পতাকা আমাদের সবারই প্রতিনিধিত্ব করে।

লামিনে ইয়ামালের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করেন ওই সমর্থক। এবারের ইউরোতে চমকপ্রদ পারফরম্যান্স দেখানো ১৭ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান ফুটবলারের বাবার দেশ মরক্কো, মায়ের দেশ ইকুয়েটোরিয়াল গিনি। এখন তারা সবাই স্প্যানিশ। ইয়ামালের জন্ম স্পেনেই। তাকেই এখন গোটা দেশের ঐক্যের প্রতীক মনে করছেন বোরিয়া, বর্ণবাদ নিয়ে কত সমস্যা আমরা দেখছি এখন দেশে… লামিনে ইয়ামালের মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা হবে, কারণ স্পেন সব বর্ণের সব ধরনের মানুষের দেশ।

স্পেনর সরকারী ঘোষণায় জানানো হয়, ৫ লাখের মতো লোক ছিল এই উদযাপনে।

কদিন আগে যিনি কণ্ঠে অভিমান আর ক্ষোভ নিয়ে বলেছিলেন, ‘স্পেনে আমাকে কেউ সম্মান করে না’, সেই অধিনায়ক আলভারো মোরাতা এবার আপ্লুত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে।

আমরা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ও আমি এই দলের গর্বিত অধিনায়ক। কখনও কখনও গোল করতে পারি, কখনও পারি না। তবে এটুকু কথা দিতে পারি, চেষ্টার কমতি থাকে না। এবারের ইউরো জয়ের জন্য সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে। আশা করি, আমাদের মতো করেই উপভোগ করেছেন আপনারা। এই অনুভূতি জাদুকরি।

কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের কণ্ঠে আশাবাদ, দলের এমন সাফল্যের ধারা সামনেও অব্যাহত থাকবে।

এরকম একটি দলের কোচ হতে পেরে আমি গর্বিত। স্পেনে এরকম একটি প্রজন্ম পেয়েও আমরা গর্বিত। দেশের প্রতি তাদের যে ভালোবাসা ও মূল্যবোধ, তারা গোটা দেশের আদর্শ। আশা করি এই সাফল্যের ধারা চলতে থাকবে।

লাখো মানুষের কণ্ঠেও ছিল এই গর্জন, এই দলের সাফল্য কেবলই শুরু…।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!