ঢাকা: শিক্ষার্থী-জনতার ওপর নৃশংসতার বিচার ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ চেয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটে মানববন্ধন করেছেন ক্রীড়া সাংবাদিকেরা।
দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের একশর বেশি সাংবাদিক। এ সময় নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়।
মানববন্ধনে কালের কণ্ঠের ক্রীড়া সম্পাদক এ টি এম সাইদুজ্জামান বলেন, ‘গত কিছুদিনে, জুলাই মাসে যা ঘটেছে এবং এখন যা ঘটছে, তাতে শোক জানানোর কোনো ভাষা নেই। শুধু একজন ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে নই, আমি এখানে একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে এসেছি। আমি মর্মাহত, শোকাহত।’
সাইদুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমাদের আরও আগে সোচ্চার হওয়া দরকার ছিল। এ নৃশংসতা যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। যারা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে আছেন, তারা সেটি করেননি। যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, তার রেশ আমাদের আরও কত বছর বহন করতে হবে, আমি নিশ্চিত নই। আমার দাবি প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, কোনো আইওয়াশ নয়।’
এ টি এম সাইদুজ্জামান সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থার দাবিও তোলেন, ‘স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে যে অধিকার, সে অধিকার থেকে যেন আমরা কেউ বঞ্চিত না হই। এই দেশ আমার। এই দেশ কারও একার নয়। আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ পাইনি। কিন্তু এই স্বাধীনতাযুদ্ধ আমাদের প্রত্যেকের গর্বের। এটা কারও সম্পত্তি নয়।
এখন এ উপলব্ধির সময় এসেছে। আমি কোয়ান্টিটি চাই না, কোয়ালিটি লাইফ চাই। যে জীবনটা হবে, আমি বাসা থেকে অফিসে যাব নিরাপদে, আমার সন্তান স্কুলে যাবে। আমার বৃদ্ধ বাবা-মা সুচিকিৎসা পাবে। আমি সেই সমাজব্যবস্থা চাই। আমি ট্যাক্স দিই। আমি একজন ট্যাক্স পেয়ার। আমি কারও কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি না। আমি আমার অধিকার চাই।’
নিউজজিটোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রবীণ ক্রীড়া সাংবাদিক শামীম চৌধুরী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কাভার করতে গিয়ে নিহত সাংবাদিকদের প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এই আন্দোলনে নিহতের সঠিক সংখ্যা আমরা এখনো জানি না। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বিভিন্ন কথা শুনছি। এর মধ্যে কিন্তু পাঁচজন সাংবাদিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। ক্রীড়া সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আমরা তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
পেশাগতভাবে তারা আমাদেরই সহকর্মী, আমরা প্রথমেই দাবি করব, প্রতিটি মৃত্যুর সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য বিচার হোক।’
সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদ তার বক্তব্যে আগামী প্রজন্মের কথা বলেছেন, ‘দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা এখানে এসেছি। ইউনিসেফের একটা হিসাব দেখলাম, ৩২ শিশু মারা গেছে। সেই শিশুটা তো আমার আপনার শিশুও হতে পারত। আমাদের যে কারও শিশু হতে পারত। আমরা তাহলে কাদের জন্যই দেশটা তৈরি করছি? কাদের জন্য এই দেশটা বিনির্মাণ করার চেষ্টা করছি? আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য।’
নোমান মোহাম্মদ আরও বলেছেন, ‘তারাই যদি এই দেশে নিরাপদ না হয়, তাহলে নিরাপদ আর কারা? আমরা তাই এখানে আমরা ক্রীড়া সাংবাদিকেরা এখানে দাঁড়িয়েছি একটা দাবি নিয়ে, শিক্ষার্থী-জনতার ওপর এই যে নৃশংসতা হয়েছে, গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যে নৃশংসতা হয়েছে, এটা বন্ধ হোক। এটা যেন ইমিডিয়েটলি বন্ধ হয়। একটাও আর যেন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু না হয়। আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই।’
এআর