ঢাকা: দারুণ ব্যাটিং করে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েছিলেন মিকাইল লুই ও আলিক আথানেজ। কিন্তু সুবাস পেয়েও দুজনই হারিয়ে ফেলেন তা।
৯০ রানে তাইজুল ইসলামের বলে স্লিপে মিরাজকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া লুই শেষ পর্যন্ত আউট হন ২১৮ বল খেলে ৯৭ রানে।
আথানেজ আউট হতে পারতেন ৫ রানে। কিন্তু ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টায় ঠিকমতো বলের নিচে যেতে পারেননি তাসকিন আহমেদ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান আউট হন ১৩০ বল খেলে ৯০ রান করে।
দুজনের জুটিতে আসে ১৪০ রান। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের উইকেট অবশ্য আগের মতো এতটা পেস-বান্ধব মনে হয়নি এবার।
পেসাররা মুভমেন্ট পেয়েছেন বটে, তবে গতি ও বাউন্স বিপজ্জনক রকমের ছিল না। প্রথম দিনেই স্পিনাররা টার্ন ও গ্রিপ পেয়েছেন কিছুটা। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের জন্য খুব ভয়ঙ্কর ছিল না। বরং দুপুর নাগাদ বেশ ব্যাটিং সহায়ক হয়ে ওঠে উইকেট।
প্রথম দুই সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এগিয়েছে শম্বুক গতিতে। প্রথম সেশনে ২৩ ওভারে রান আসে ৫০, পরের সেশনে ৩১ ওভারে ৬৬। তবে শেষ সেশনে বদলে যায় চিত্র। উইকেট অনেকটা সহজ হয় আসে। রানের গতিতেও জোয়ার আসে। আগের দুই সেশন মিলিয়ে ৫৪ ওভারে ১১৬ রান করা দল এই সেশনে ৩০ ওভারেই তোলে ১৩৪ রান।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ নতুন বলে বেশ ভালো বোলিং করেন, তবে উইকেটের দেখা পাননি। প্রথম দিনেই ৩৮ ওভার বোলিং করেন দুই স্পিনার মিরাজ ও তাইজুল মিলে।
সকালে টস হাসার পর ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট বলেন, শুরুর সময়টায় সাবধানী ব্যাটিং করতে হবে তাদের। লুইকে সঙ্গে নিয়ে ঠিক সেই সতর্কতার পথই বেছে নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। নতুন বলে হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলামের সামনে কোনো ধরনের ঝুঁকি তারা নেননি। প্রথম ঘণ্টায় ১২ ওভারে রান আসে ২৩।
প্রথম পরিবর্ত বোলার তাসকিন আহমেদের শুরুটা ছিল একটু অগোছালো। তবে পানি পানের বিরতির পর পরপর দুই ওভারে দলকে সাফল্য এনে দেন তিনিই। ব্র্যাথওয়েট এলবিডব্লিউ হন ৩৮ বলে ৪ রান করে। তিনে নামা কেসি কার্টি রান না করেই আলতো করে ক্যাচ তুলে দেন শর্ট মিড অনে।
লাঞ্চের আগে আর কোনো বিপদ হতে দেননি লুই ও কাভেম হজ। লাঞ্চের পরও অনেকটা সময় কাটিয়ে দেন দুজন। স্পিন আক্রমণে এনে তাদেরকে কিছুটা অস্বস্তি ফেলা গেলেও উইকেট ধরা দিচ্ছিল না। গড়ে ওঠে জমাট জুটি। তাসকিনকে দারুণ শটে বাউন্ডারিতে লুই পঞ্চাশে পা রাখেন ১০৪ বলে।
দ্বিতীয় সেশনের মাঝামাঝি অনেকটা আত্মঘাতী হয়েই উইকেট হারান হজ। অযথা দ্বিতীয় রান নেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হন তিনি ২৫ রানে। সবশেষ পাঁচ ইনিংসে দুবার আউট হলেন তিনি ২৫ রানে, দুবার আউট হয়েছেন ২৯ রানে।
লুই-হজের জুটি থামে ১৩০ বলে ৫৯ রান করে। এরপর লুইয়ের সঙ্গে আথানেজের জুটি। শুরুতে স্পিনের বিপক্ষে স্বভাবজাত আগ্রাসী ব্যাটিং করার চেষ্টায় কিছুটা ঝুঁকি তৈরি করেন আথানেজ।
এই সময়েই বল হাওয়ায় ভাসিয়ে তিনি রক্ষা পান তাসকিন ঠিকমতো বলের নিচে যেতে না পারায়। তবে থিতু হওয়ার পর নিজের শটের পরিধি মেলে ধরেন ২৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
চা-বিরতির পর সুইপ-রিভার্স সুইপ-কাট-ড্রাইভ মিলিয়ে ওয়ানডের গতিতে রান তুলতে থাকেন আথানেজ। লুইয়ের ব্যাটেও দেখা যায় বাড়তি আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। শেষ সেশনের প্রথম ১০ ওভারে ৫৯ রান তুলে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চা-বিরতির আগে আথানেজের রান ছিল ৪৯ বলে ১৩। সেখান থেকে বিরতির পর ৩৬ বলে ৩৭ রান করে ফিফটিতে পৌঁছে যান তিনি।
সেই গতি ধরে রেখেই শতরানের দিকে ছুটতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, লুইয়ের আগে সেঞ্চুরি হয়ে যাবে তারই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো না কারও! নব্বই ছুঁয়ে অনেকটা সময় মন্থর হয়ে এগোচ্ছিলেন লুই। ৯৭ রানে হঠাৎ ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে মিরাজকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় নিজের বিপদ ডেকে আনেন। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় স্লিপে।
এভাবে আউট হয়ে হতাশায় আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন লুই, ব্যাটে ভর দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। পরে মাঠ ছাড়ার সময় তাকে মনে হচ্ছিল বিধ্বস্ত।
একটু পর সঙ্গীর পথ ধরেন আথানেজও। তাইজুলকে প্যাডল-সুইপ করতে গিয়ে সহজতম ক্যাচ দেন তিনি কিপার লিটন কুমার দাসকে।
টেস্টে এটি তার তৃতীয় ফিফটি। গত জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ট্রেন্ট ব্রিজে আউট হয়েছেন ৮২ রানে, অগাস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ত্রিনিদাদে ৯২ রানে, এবার আটকে গেলেন ৯০ রানে।
দিনের বাকি সময়টা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন জাস্টিন গ্রেভস ও জশুয়া দা সিলভা। দ্বিতীয় নতুন বলে চার ওভার বোলিং করে খুব প্রভাব রাখতে পারেনি বোলারা। তবে দ্বিতীয় দিন সকালে এই নতুন বলের দিকে তাকিয়েই নতুন আশায় মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :