ঢাকা: বিপিএলের একাদশ আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফট হওয়ার কথা আগামী মাসে। বিসিবি থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ছাড়া বাকি ছয় দল একাদশ আসরে খেলার ব্যাপারে আগ্রহী বলে জানায় বিসিবি।
ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকলেও বিপিএল আয়োজন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ সোহেল ও সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ১২ বছর ধরে বিপিএলের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠা এ দুই পরিচালক দেশে না বিদেশে, জানে না বিসিবি।
ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য পরিচালকদের আহ্বান করা হলে পরিচালকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাড়া দেননি সোহেল-মল্লিক। বৈষম্যবিরোধী ক্রীড়া সংগঠকদের রোষানলে পড়ার ভয়ে তারা বিসিবিতে ফিরবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে ক্রিকেটপাড়ায় বলাবলি হচ্ছে, অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বিপিএল।
শেখ সোহেল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হলেও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মল্লিক। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ফ্র্যাঞ্চাইজি এ লিগকে নিজের মতো করে চালাতে চেষ্টা করে গেছেন বলে অভিযোগ।
বিপিএলের প্রথম আসরের সদস্য সচিব সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীরের মতো মল্লিকের স্বেচ্ছাচারিতায় সম্ভাবনাময় টি২০ টুর্নামেন্টটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাত দিয়ে বিপিএল শুরু হয়। খুব কষ্ট করে ফ্র্যাঞ্চাইজি জোগাড় করতে হয়েছিল। ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকানা দেওয়ার ক্ষেত্রে। অথচ বর্তমান গভর্নিং কাউন্সিল কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেনি। কমিশন বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে রেভিনিউ শেয়ার করতে রাজি হয়নি। অথচ তাদের সময়ে বেক্সিমকো, জেমকন গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপের মতো বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়েছে। তারা বছরের পর বছর বিনিয়োগ করে গেলেও বোর্ড থেকে ন্যূনতম সহযোগিতা পায়নি। রেভিনিউ শেয়ার করতে রাজি হয়নি গভর্নিং কাউন্সিল।
এতে করে বড় কোম্পানিগুলো সরে গেছে। বছর বছর ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়োগ দিয়ে কমিশন বাণিজ্য করেছে। টিভি সম্প্রচার, গ্রাউন্ডস রাউট, টিকিট বিক্রি এবং স্টেডিয়ামে খাবারের স্টল থেকেও কমিশন নিয়েছেন তারা। অন্যদিকে, আমরা প্রথম আসরেই রেভিনিউ শেয়ার করেছি। বিশ্বের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে রেভিনিউ শেয়ার হলে বিসিবি কেন পারে না। কারণ, কমিশন বাণিজ্যে ডুবেছিল তারা। তাদের কারণে ১০ বছর ধরে জুয়াড়িদের হাতে চলে গেছে বিপিএল।’
বিপিএলের আত্মপ্রকাশ ২০১২ সালে। সীমাবদ্ধতার মাঝেও দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে টুর্নামেন্ট সফল করেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপুরা। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে কলঙ্কিত হয়েছিল টুর্নামেন্টটির দ্বিতীয় আসর। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দেরি হয়নি। বিসিবি পরিচালক মাহাবুবুল আনামের পরিকল্পনায় টুর্নামেন্টটি শক্তিশালী ভিত নিতে শুরু করে। অজানা কারণে তাকেই বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। টিভি সম্প্রচার কেড়ে নেওয়া হয় চ্যানেল নাইনের কাছ থেকে। বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকার এক পর্যায়ে বিপিএল থেকে সরে গিয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
গত মৌসুমের খেলা শুরুর আগে কুমিল্লার চেয়ারম্যান নাফিসা ঘোষণা দিয়েছিলেন, রেভিনিউ শেয়ার না হলে বিপিএলে থাকবেন না তারা। রংপুর রাইডার্স, ফরচুন বরিশাল, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স থেকেও রেভিনিউ শেয়ারের দাবি উঠেছিল। কিন্তু মল্লিক কারও কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করেননি। নাফিসার বড় অভিযোগ ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ন্যূনতম সম্মান দেয় না বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। টুর্নামেন্টের আগে মালিক পক্ষের সঙ্গে মিটিং করার প্রয়োজন বোধ করে না বলে মিডিয়াকে বলেছিলেন তিনি। শুধু নাফিসা নন, আলিফ গ্রুপের মালিক অভিযোগ করেছিলেন– মল্লিকের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের কারণে বিপিএল ছেড়ে গিয়েছিলেন। হাজারো অভিযোগ থাকলেও বিসিবি চায় বিপিএল চালিয়ে যেতে। পরিষ্কার ইমেজের কোনো পরিচালককে গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলে বিপিএল আয়োজন করা সম্ভব বলে মনে করে বিসিবি।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :