ঢাকা: পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের তৃতীয় দিনে ৪৩তম টেস্টে চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন লিটন দাস। পাকিস্তানের বিপক্ষেই দুটি। ম্যান ইন গ্রীনদের বিপক্ষে আগের সেঞ্চুরিটি ২০২১ সালে চট্টগ্রামে, সেবার করেছিলেন ১১৪ রান। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে একাধিক টেস্ট সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব শুধুই লিটনের।
লিটনের এই সেঞ্চুরির অন্যরকম মাহাত্ম্য আছে। আজ রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিন সকালটা শুরু হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। ২৬ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে গড়া লিটনের ১৬৫ রানের জুটিটিই উদ্ধার করেছে বাংলাদেশকে।
মিরাজ ৭৮ রানে আউট হলেও লিটন চালিয়ে গেছেন এরপরও। মিরাজ আউট হয়ে যাওয়ায় বোলাররা তাকে সঙ্গ দিতে পারেন কি না, এই প্রশ্ন ছিল। তাসকিন আহমেদ ৫ বলে ১ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার পর প্রশ্নটা আরও বড় হয়ে ওঠে। তবে হাসান মাহমুদ দাঁড়িয়ে যাওয়ায় সেঞ্চুরি পেতে সমস্যা হয়নি লিটনের। নবম উইকেটে ভালো একটা জুটিও হয়েছে।
লিটনের আগের তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরি এসেছিল ২০২১ ও ২০২২ সালে ছয় মাসের মধ্যে। ৮ টেস্টে ৩টি সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছিলেন ৪টি ফিফটি। সেই ৪ ফিফটির দুটি ছিল আবার ৮৬ ও ৮৮ রানের। টেস্ট ক্রিকেটে লিটনের সেরা সময় ওটাই। কালকের সেঞ্চুরিতে ঘুচেছে প্রায় সোয়া দুই বছরের খরা। মাঝখানে ৯ টেস্টে ৫টি ফিফটি করলেও তার একটিকেও সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত যখন তা পারলেন, আগের তিন সেঞ্চুরির দুটির সঙ্গেই এর মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। টেস্টে লিটনের চার সেঞ্চুরির তিনটিই এসেছে দলের বিপর্যয়ে উজ্জ্বল উদ্ধার হয়ে। রেকর্ডও হয়ে গেছে একটা। দলের স্কোর পঞ্চাশের কম থাকা অবস্থায় ব্যাটিং অর্ডারে পাঁচের নিচে নেমে তিনটি সেঞ্চুরি করা বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান লিটন।
২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের ওই ১১৪ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন ৪৯ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নেমে। লিটনের ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ ১৪১ রানের ইনিংসটি ২০২২ সালে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে সেবারও নেমেছিলেন ২৪ রানে পঞ্চম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর।
২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে পাওয়া দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটির সময়ই একটু শান্তিতে ব্যাটিং করতে পেরেছিলেন লিটন। সেবার ব্যাটিং করেছিলেন ৫ নম্বরে, নেমেছিলেন ১০৫ রানে তৃতীয় উইকেট পড়ার পর।
আজ লিটনের সেঞ্চুরিতে মিরাজের প্রচ্ছন্ন ভূমিকাও আছে। দলের বিপদে ক্রিজে এসেই প্রতি আক্রমণের পথ বেছে নেন মিরাজ। বল তখন মাত্র ১২ ওভার পুরোনো। খুররাম শেহজাদ ও মির হামজা সিম মুভমেন্ট পাচ্ছিলেন, সঙ্গে সুইংও। এর মধ্যেই পয়েন্ট ও কাভার দিয়ে একের পর এক বাউন্ডারি খুঁজে নেন মিরাজ। যে কারণে লিটন দেখেশুনে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
ফিফটির জন্য ৮২ বল খেলেছেন লিটন। এরপর দ্রুত রান তুলে ব্যক্তিগত ৮০ রানে পৌঁছেছেন ১২০ বলে। মিরাজ আউট হওয়ার পর আবার একটু সাবধানী হয়ে যান। পরের ২০ রানের জন্য লিটনকে ৫১ বল খেলতে হয়েছে। নামার সময় দলের অবস্থা এমন করুণ ছিল বলেই সেঞ্চুরির আনন্দটাও আরও বেশি হয়েছে। তবে লিটনের টেস্ট সেঞ্চুরি মানেই তো অমন একটা অনুভূতির স্বাদ পাওয়া। তার চার সেঞ্চুরির ৩টিই যে এমন।
এআর