ঢাকা : ২০০৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামের মাঠে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট আঙিনায় পা রেখেছিলেন সাকিব আল হাসান। এরপর প্রায় সাড়ে ১৭ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছেন।
এবার কানপুরে ক্যারিয়ারের ৭১তম ম্যাচ খেলছেন এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে সাড়ে চার হাজারের বেশি রান এবং আড়াইশ’র কাছাকাছি উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ৫টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি হাফসেঞ্চুরি এবং দুইবার ১০ উইকেট করে এবং ১৯ বার ৫ উইকেট করে শিকারের রেকর্ড গড়েছেন এই অলরাউন্ডার।
অন্যদিকে ১২৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ক্যারিয়ার সাকিবের। এ ফরম্যাটের ক্রিকেটেও তার অনেক কীর্তি রয়েছে। বর্ণাঢ্য ১৮ বছরের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ডের মালিক হয়েছেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এই ক্রিকেটার।
সাকিবের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য রেকর্ডগুলো নিচে দেওয়া হলো-
কম বয়সী অধিনায়ক: ২০০৯ সালের জুলাইয়ে সেন্ট জর্জসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের কনিষ্ঠ টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে রেকর্ড গড়েন সাকিব। ২২ বছর ১১৫ দিন বয়সে বাংলাদেশ টেস্ট দলের নেতৃত্বের ভার নেন এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার। ক্রিকেট বিশ্বে সব চেয়ে কম বয়সী টেস্ট অধিনায়কের তালিকায় সাকিবের নাম ছয় নম্বরে।
একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট: একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট শিকারের নজির দুই বার দেখান সাকিব। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৪ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি ৮২ রান দিয়ে ৬ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান সাকিব। এরপর ২০১৪ সালের নভেম্বরে খুলনার মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি দুই ইনিংসেই ৫টি করে উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন তিনি।
পঞ্চম উইকেটে জুটির রেকর্ড: টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম উইকেটে মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের জুটি উপহার দেন সাকিব। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই বিশ্ব রেকর্ডটি গড়েন তারা। অবশ্য ওই ম্যাচে জিতেনি বাংলাদেশ। হেরে গিয়েছিল।
সর্বোচ্চ ম্যাচসেরার পুরস্কার: তিন ফরম্যাটের ক্রিকেট মিলিয়ে সাকিবের মতো সর্বোচ্চ সংখ্যক ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেনি বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটার। সর্বোচ্চ ১৭ বার ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন সাকিব। বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসে ম্যাচসেরার পুরস্কার প্রাপ্তির তালিকায় কোহলি (২১) ও শচিনের (২০) পরই সাকিবের অবস্থান।
একক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রান: তিন ফরম্যাটের ক্রিকেট মিলিয়ে একক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সাকিব দুই নম্বরে আছেন। মিরপুরের মাঠে মোট ১৪৪ ম্যাচ খেলে সাকিবের সংগ্রহ ৪ হাজার ৭৮৬ রান। এ তালিকার শীর্ষে আছেন মুশফিক। মিরপুরের মাঠেই মুশফিক সর্বোচ্চ ১৫৪ ম্যাচ খেলে ৪ হাজার ৯৫৬ রান সংগ্রহ করেছেন।
একেক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ উইকেট: তিন ফরম্যাটের ক্রিকেট মিলিয়ে একক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ ২৫২ উইকেট শিকারের বিশ্ব রেকর্ডটি সাকিবের দখলে। মিরপুরের মাঠে খেলেই সাকিব এই রেকর্ডটি গড়েন। কলম্বোর মাঠে মুরালিধরন ১৮৮ উইকেট শিকার করেছেন।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট: তিন ফরম্যাটের ক্রিকেট মিলিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ সাত শতাধিক উইকেট শিকার করেছেন সাকিব আল হাসান। তার পেছনে আছেন মাশরাফি (৩৮৯) ও মোস্তাফিজুর রহমান (৩২৩)।
টেস্টে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট: বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৪২টি উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। তার পেছনে আছেন তাইজুল ইসলাম (১৯৫) ও মিরাজ (১৭৭)।
দেশের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান: বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সাকিবের নাম তিন নম্বরে। সাড়ে চার হাজারের বেশি রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। সাকিবের চেয়ে বেশি রান করেছেন তামিম ও মুশফিক। এই দুজনই পাঁচ হাজারের বেশি রান করেছেন।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার: আইসিসি টেস্ট র্যাংকিংয়েও সাকিব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের তালিকায় অবস্থান করেন। এক যোগে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে এক নম্বরে থাকা নজির দেখান এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
টি-টোয়েন্টিতে দীর্ঘ ক্যারিয়ারের রেকর্ড: আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে লম্বা ক্যারিয়ারের বিশ্ব রেকর্ডটি সাকিবের দখলে। সাড়ে ১৭ বছর ধরে কুড়ি ওভারের ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। এই তালিকায় সাকিবের পেছনে জিম্বাবুয়ের শন উইলিয়ামস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, রোহিত শর্মা, টিম সাউদিরা আছেন।
টি-টোয়েন্টিতে ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেট: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৮ বার ইনিংসে ৪ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েছেন সাকিব। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে সাকিবের চেয়ে মাত্র একবার বেশি ইনিংসে ৪টি করে উইকেট শিকার নজির রয়েছে রশিদ খানের।
টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ বোলিং: আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বোলিংয়ের রেকর্ডটিও সাকিবের দখলে। এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে সাড়ে চারশ’র বেশি ওভার বোলিং করার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন সাকিব।
মিরপুরে বাজিমাত: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ ৪৫ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। মিরপুরের মাঠেই এই বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন এই অলরাউন্ডার।
এক নজরে সাকিবের টেস্ট ক্যারিয়ার
প্লেয়িং রোল: অলরাউন্ডার
প্রথম টেস্ট: মে ২০০৭, প্রতিপক্ষ ভারত
মোট ম্যাচ: ৭১*
মোট রান: ৪,৬০০
সর্বোচ্চ ইনিংস: ২১৭
১০০/৫০: ৫/৩১
মোট উইকেট: ২৪২
সেরা বোলিং: ৭/৩৬
১০ উইকেট: ২ বার
৫ উইকেট: ১৯ বার
৪ উইকেট: ১০ বার
এক নজরে সাকিবের টি-২০ ক্যারিয়ার
প্লেয়িং রোল: অলরাউন্ডার
প্রথম ম্যাচ: নভেম্বর ২০০৬, প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে
মোট ম্যাচ: ১২৯
মোট রান: ২৫৫১
সর্বোচ্চ ইনিংস: ৮৪
১০০/৫০: ০/১৩
মোট উইকেট: ১৪৯
সেরা বোলিং: ৫/২০
৫ উইকেট: ২ বার
৪ উইকেট: ৬ বার
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :