ঢাকা : আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে একেবারে বিদায় নিচ্ছেন না তামিম ইকবাল। আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) তাকে মাঠে দেখা যাবে, এবং যদি সঠিকভাবে তার সাথে আলোচনা করা হয়, তবে তিনি আবারও জাতীয় দলে ফিরতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সে জন্য সতীর্থেরও তাকে 'গ্রহণ করা প্রয়োজন' বলে মনে করেন তামিম।
ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজে টিভি এক্সপার্ট হিসেবে হিসেবে কাজ করতে এই মুহূর্তে ভারতে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক এবং সেখানে ক্রীড়া ভিত্তিকে একটি পোর্টালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তামিম বলেন, 'যেভাবে আমি বিদায় নিয়েছিলাম, সেটা মোটেই সুখকর ছিল না। তাই যদি আমি আবার ফিরে আসি, তাহলে আমার জন্য একটা উদ্দেশ্য থাকা প্রয়োজন। আমি এমন কেউ নই যে শুধু খেলার জন্য ফিরে আসব এবং চার-পাঁচটি ম্যাচ খেলব। এর কি কোনো মানে হবে? সবাই বলে, ‘ফিরে আসো, আমরা তোমাকে চাই’, কিন্তু আমি যদি পাঁচটি ম্যাচ খেলে ফিরে যাই, তাহলে সেটা কি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য কোনো কাজে আসবে? যদি তারা একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আসে এবং আমরা আলোচনা করতে পারি, তাহলে আমি চিন্তা করতে পারি।'
নতুন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ সম্প্রতি তামিমকে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ফারুক বলেন, 'আমি তামিমকে বলেছি, সে এমন এক সময়ে আছে যখন তাকে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে যদি ফিট থাকে, তাহলে কেন নয়!'
তামিমও তার ফেরার দরজা খোলা রেখেছেন। তবে এই ফিরে আসা মানে কেবল কয়েকটি ম্যাচ খেলার পক্ষে নন তিনি, 'এখন আপনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কথা বলছেন, যেখানে আপনি হাতে গোনা চার-পাঁচটি ওয়ানডে ম্যাচ পাবেন, এর প্রস্তুতি আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে তিনটা ওয়ানডে। তাহলে আপনি মূলত ছয়-সাতটি ম্যাচের কথা বলছেন। যখন আমি পেছনে সরে গেছি এবং অন্য কেউ আমার জায়গায় খেলছে, তখন শুধু এই কয়েকটি ম্যাচের জন্য ফিরে আসার কোন মানে হয় না। তবে যদি বিসিবি আমাকে বলে যে তারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিততে চায় বা অন্তত সেমিফাইনালে যেতে চায় তবে সেটিই হবে সঠিক উপায়ে ফিরে আসার প্রস্তাব।'
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিষয়ে তামিম আরও বলেন, 'আমি কি ক্রিকেট বোর্ডের জন্য খেলব, নাকি দলের জন্য খেলব? এই প্রস্তাবটি (ফেরার অনুরোধ) আসা উচিত কোথা থেকে? ক্রিকেট বোর্ড আমাকে দেখে রাখে, কিন্তু খেলোয়াড়দেরও আমাকে গ্রহণ করা প্রয়োজন।'
পেছনের কিছু ঘটনাও তামিম স্মরণ করেন। গত বছরের জুলাইয়ে হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তামিম, তবে পরে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন। আগস্টে তিনি অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন সাকিব আল হাসান। যদিও পিঠের ইনজুরি তার এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ হিসেবে উঠে আসে, তামিম বলেন, 'সত্যি বলতে, এটি ছিল একটি দীর্ঘ যাত্রা। আমি কখনও ভাবিনি যে আমি বাংলাদেশ দলের জন্য খেলব না। তখন আমি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার কথা ভাবছিলাম এবং তারপর আমার ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব, কিন্তু অনেক কিছু ঘটেছে যা পরিকল্পনায় ছিল না। সেটা খুব একটা ভালো ছিল না।'
বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগে তামিম ও সাকিবের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছিল তৎকালীন বিসিবি সভাপতির বাড়িতে। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, তামিমের নাম সেই দলে ছিল না। তামিম বলেন, 'আপনার খারাপ সম্পর্ক থাকতে পারে, বা কারও সাথে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সবাইকে এক হওয়া উচিত, কোনো প্রতিশোধস্পৃহা থাকা উচিত নয়। দুর্ভাগ্যবশত, সেটাই ঘটেছিল। আমি খুবই আবেগপ্রবণ ব্যক্তি এবং তখন যা ঘটেছিল, তা আমি সহজভাবে নিতে পারিনি এবং সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।'
এমটিআই