• ঢাকা
  • শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

পাঁচশর বেশি রান করেও ইনিংস ব্যবধানে হেরে লজ্জার রেকর্ড পাকিস্তানের


ক্রীড়া ডেস্ক অক্টোবর ১১, ২০২৪, ০২:৩২ পিএম
পাঁচশর বেশি রান করেও ইনিংস ব্যবধানে হেরে লজ্জার রেকর্ড পাকিস্তানের

ঢাকা: এভাবেও টেস্ট হারা যায়। ইতিহাসে প্রথম দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। প্রথম ইনিংসে পাঁচশর বেশি রান করেও ইনিংস ব্যবধানে হারল পাকিস্তান। 

অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে আবরার আহমেদ। তিনি যে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামছেন না, তা জানাই ছিল। গতকাল চতুর্থ দিনের শেষ সেশন থেকেই জয়ের সুবাস পেতে থাকা ইংল্যান্ডের কাজটা তাই আজ আরেকটু সহজ ছিল।

কাজটা সারতে ইংলিশ বোলারদের লাগল ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। আরও স্পষ্ট করে বললে এই সময় লাগল জ্যাক লিচের। ইংল্যান্ডের প্রয়োজনীয় ৩টি উইকেটই নিলেন এই স্পিনার। তাতে শেষ দিনের আড়াই সেশন বাকি থাকতেই পাকিস্তান ইনিংস ও ৪৭ রানে মুলতান টেস্ট হারল।

টেস্টের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে পাকিস্তান প্রথম দল হিসেবে প্রথম ইনিংসে ৫০০-এর বেশি রান তুলেও ইনিংস ব্যবধানে হারল। শান মাসুদের অধিনায়কত্বে দলটি হারল টানা ৬ টেস্টে। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া সফরে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই হওয়ার পর আগস্ট–সেপ্টেম্বরে নিজেদের মাঠে বাংলাদেশের কাছে হারে ২-০ ব্যবধানে। 

এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রিবতকর ইতিহাসের জন্ম দিয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল। ১৫ অক্টোবর থেকে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টও হবে মুলতানে। রাওয়ালপিন্ডিতে শেষ টেস্ট শুরু ২৪ অক্টোবর।

দেশের মাটিতে এ নিয়ে টানা ১১ টেস্ট জয়হীন পাকিস্তান। দলটি সর্বশেষ নিজেদের মাঠে ক্রিকেটের এই অভিজাত সংস্করণের ম্যাচ জিতেছিল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে।

ঘরের মাঠে পাকিস্তান সর্বশেষ টানা ১১ টেস্টে জয়হীন ছিল ৪৯ বছর আগে, ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দেশে খেলা ১১ টেস্টের মধ্যে ১টিতে হার ও ১০টিতে ড্র করেছিল হানিফ মোহাম্মদ-মজিদ খানদের পাকিস্তান। তবে এবারের অবস্থা আরও ভয়াবহ-জয়হীন ১১ টেস্টের ৭টিতে হেরেছেন বাবর আজম-শাহিন আফ্রিদিরা।

টেস্টের প্রথম ইনিংসে কমপক্ষে ৫০০ রান করেও ম্যাচ হেরে যাওয়া পাকিস্তানের জন্য নতুন কিছু নয়। এত বড় স্কোর করেও ৫ বার ম্যাচ হেরে তারাই শীর্ষে। কিন্তু ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রথম ইনিংসে ৫০০-এর বেশি রান তুলেও ইনিংস ব্যবধানে হারের মূল কারণ ‘মহাসড়ক’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মুলতানের ব্যাটিংবান্ধব পিচ আর সেই পিচে ইংল্যান্ডের বাজবল ক্রিকেটের অসাধারণ প্রদর্শনী।

যেকোনো পরিস্থিতি থেকে টেস্ট জিততে হবে-এই মন্ত্রে বিশ্বাসী ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ইংল্যান্ড তাই প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ৩ সেঞ্চুরিতে ৫৫৬ রান করার পরও ভড়কে যায়নি। সাড়ে ৫ ছুঁই ছুঁই রান রেটে ১৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৮২৩ রানের ‘ইমারত’ গড়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা। 

একবিংশ শতাব্দীতে টেস্টের এক ইনিংসে এটাই কোনো দলের সর্বোচ্চ রান, যার বড় দুই কারিগর হ্যারি ব্রুক ও জো রুট। ব্রুক ক্যারিয়ারে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির দেখা পান, রুট ষষ্ঠবারের মতো করেন ডাবল সেঞ্চুরি। ব্রুকের ৩১৭ রানের মতো রুটের ২৬২ রানের ইনিংসটাও ক্যারিয়ারসেরা।

রুট-ব্রুক মিলে যোগ করেন ৪৫৪ রান, যা যেকোনো উইকেটে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় জুটি তো বটেই, টেস্ট ইতিহাসেও চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ। মূলত এ দুজনের মহাকাব্যিক জুটিতেই প্রথম ইনিংসে ২৬৭ রানের লিড নেয় ইংল্যান্ড। পাকিস্তান আসলে এখানেই পিছিয়ে পড়ে। সেটারই পরিণতি দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয় আর ইনিংস হারের লজ্জা।

কাল দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে ক্রিস ওকস, গাস অ্যাটকিনসন, ব্রায়ডন কার্সদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৮২ রান করতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। এরপর আগা সালমান ও আমের জামাল কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললে দিন শেষ করে ৬ উইকেটে ১৫২ রান তুলে। আবরার অসুস্থতার কারণে ব্যাট করতে পারবেন না জানিয়ে দেওয়ায় জয়ের জন্য আজ ইংল্যান্ডকে ৩টি উইকেট নিতে হতো; ৩টিই নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার লিচ।

ব্যক্তিগত ৬৩ রানে লিচের বলে এলবিডব্লু হন সালমান। এতে ভাঙে জামালের সঙ্গে তার ১০৯ রানের জুটি। এরপর দুই টেলএন্ডার শাহিন আফ্রিদি আর নাসিম শাহকেও আউট করেন লিচ। সঙ্গীহীন জামাল অপরাজিত থাকেন ৫৫ রানে।

সর্বশেষ রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টেও নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল (১৪৬ অলআউট)। শান মাসুদের দল রাওয়ালপিন্ডির জুজুটা যেন মুলতানেও টেস্টে এনেছে।

পাকিস্তানকে বিব্রতকর ইতিহাসের জন্ম দিতে বাধ্য করা ইংল্যান্ড নিজেরা কোনো রেকর্ড গড়বে না, তা কি হয়? বাজবল জামানায় (ম্যাককালাম কোচ হয়ে আসার পর) তৃতীয়বারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো দল এক ইনিংসে ৫০০ ছাড়ানো স্কোর করল। তিনবারই জিতল ইংলিশরা।

এআর

Wordbridge School
Link copied!