• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩০

অসদাচরণের কারণেই বরখাস্ত হাথুরুসিংহে


ক্রীড়া প্রতিবেদক অক্টোবর ১৫, ২০২৪, ০৮:০৮ পিএম
অসদাচরণের কারণেই বরখাস্ত হাথুরুসিংহে

ঢাকা : ঘটনাটি যখন ছড়িয়ে পড়েছিল, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ঘোর লেগেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। আসলেই কি কোনো কোচের পক্ষে জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারের গায়ে হাত তোলা সম্ভব? সেটিও আবার বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে! গত প্রায় এক বছরে এটা নিয়ে প্রশ্ন-বিতর্ক হয়েছে অনেক। অবশেষে সেই অবিশ্বাস্য ব্যাপারটিই সত্যি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো চান্দিকা হাথুরুসিংহের বিদায় দিয়ে। তাকে বরখাস্ত করার মূল কারণ যে সেই ঘটনাই!

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, জাতীয় ক্রিকেটারের সঙ্গে অসদাচরণ ও বোর্ডের চাকুরে হিসেবে অসদাচরণের জন্য হাথুরুসিংহেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া ও বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুর দিকেই বিসিবি সভাপতি জানান হাথুরুসিংহেকে নিয়ে বোর্ডের সিদ্ধান্তের কথা।

আমাদের বর্তমান কোচের ব্যাপারে... দু-তিনটি ঘটনা ঘটেছে, যা আসলে খুব পীড়াদায়ক ছিল আমার জন্য, সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে। দলের জন্যও খুব ভালো ব্যাপার ছিল না আর কী। সেদিক বিবেচনা করে তাকে আমরা শোকজ নোটিশ অ্যান্ড সাসপেনশন ফ্রম ডিউটি অ্যাজ হেড কোচ আজকে সার্ভ করেছি।

‘পীড়াদায়ক’ ব্যাপারগুলির বিস্তারিত আস্তে আস্তে জানা যায় বিসিবি সভাপতির কাছ থেকে। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের কিছুদিন পর সংবাদমাধ্যম হয়ে দেশের ক্রিকেট আঙিনায় ছড়িয়ে পড়ে, বিশ্বকাপ চলার সময় বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের গায়ে আঘাত করেন হাথরুসিংহে। দলের সেই সময়ের ট্রেনার নিক লি ও দুই-তিন ক্রিকেটার উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

সেই সময়ের বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ও বোর্ড কর্তারা ঘটনা জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশ্বকাপে দলে শোচনীয় পারফরম্যান্সের কারণ খুঁজে বের করতে পরে একটি তদন্ত কমিটি করা হয় । সেই কমিটির প্রতিবেদনেও ঘটনাটি উঠে এসেছে বলে শোনা গিয়েছিল তখন। কিন্তু এই সংক্রান্ত প্রশ্নে তখনকার বিসিবি সভাপতি ও বোর্ড কর্তারা বরাবরই এড়িয়ে গেছেন বা অস্বীকার করেছেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা নিয়েও নানা কথা শুনিয়ে শেষ পর্যন্ত আর প্রকাশ করা হয়নি।

গত অগাস্টে বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার পর ফারুক আহমেদ সেই তদন্ত প্রতিবেদন দেখার সুযোগ পান। তখন কোচের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি।

যেদিন থেকে এই ব্যাপারটার মধ্যে ঢুকেছি… আগে তো পত্রিকায় পড়েছি, হালকাভাবে জেনেছি… দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিন থেকেই আমার সত্যিই খুব খারাপ লেগেছে। তারপর মনে হয়েছে যে, এই ব্যাপারে কিছু (ব্যবস্থা নেওয়া) হলে ভালো হয়। কারণ, বর্ণবাদ, গালাগাল, এগুলো আইসিসি তো এখন শক্তভাবে সামলায় এবং শারীরিক আক্রমণের (অ্যাসল্ট) মতো কিছু হলে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। এটা ওই ছেলেটির জন্য তো খুব একটা ব্যাপার… জাতীয় একজন ক্রিকেটার…।

আমরা মানুষ… কাউকে ডিফেন্ড করছি না, হিট অব দা মোমেন্ট কিছু হতে পারে। তবে শারীরিক আঘাত কোনো পর্যায়ে কোনোভাবেই আপনি করতে পারবেন না একজন জাতীয় ক্রিকেটারকে। এটার শাস্তি এরকমই, যা হয়েছে। এটাই হওয়া উচিত ছিল। আগেই উচিত ছিল। এখন অন্তত আমরা করতে পেরেছি, সাবেক ক্রিকেটার ও সাবেক অধিনায়ক হিসেবে আমি খুশি।

তদন্ত প্রতিবেদনেই ঘটনাটির উল্লেখ আছে বলে জানালেন ফারুক। তার কথা সত্যি হলে, আগের সভাপতি নাজমুল হাসান বারবারই মিথ্যে কথা বলেছেন এই প্রসঙ্গ নিয়ে, সেটিও এখন পরিষ্কার।

তদন্ত প্রতিবেদন দেখার পর ফারুক নিজেও যাচাই করে দেখেছেন সবকিছু। একদম নিশ্চিত হয়ে তবেই ব্যবস্থা নিয়েছেন হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে।

আপনারা (সংবাদমাধ্যম) খুব জোর দিয়ে বলেছেন, রিপোর্ট বের হয় না কেন। রিপোর্টটি নিয়ে আমি কাজ করেছি। ওই ক্রিকেটারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি, সামনাসামনি দেখা করেছি। রিপোর্ট পড়েছি, সেখানে সবকিছু আছে। সব নিয়মের মধ্যে থেকে চেষ্টা করেছি এটার একটা ব্যবস্থা নিতে। সব প্রক্রিয়া করতে… আপনারা জানেন আমরা পাকিস্তানে খেলতে গেলাম, সেখান থেকে ফিরেই ভারতে গেলাম। এরপরও আর সময় নেই, আরেকটা সিরিজ শুরু হচ্ছে। কাজটা কঠিন ছিল… কোচও খুঁজতে হচ্ছিল আমাকে।

তদন্ত নিজেও করেছি, ভিক্টিমের সঙ্গে কথা বলেছি, প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছি, প্রত্যক্ষদর্শীর কথা রিপোর্টে আছে, সবকিছু পরিষ্কার করে তবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ওই ঘটনা ছাড়াও বড় একটি অভিযোগ আছে হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে। প্রাপ্য ছুটির বাইরেও বোর্ডের চাকুরে হিসেবে নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা তিনি করেননি বলে জানালেন বিসিবি সভাপতি।

সে যে সময়টা কাটিয়েছে (ছুটি), এটা অতিরিক্ত… তিন মাসের বেশি সময় সে কাটিয়েছে। ওটাও কিন্তু মিসকন্ডাক্ট-এর অংশ। আপনি বিচ্ছিন্নভাবে জানিয়েছেন একটি-দুটি মেইলে যে… (ছুটিতে) যেতে হবে বা কী… কিন্তু এসব তো তিন মাসের বেশি হওয়ার কথা নয়। সেটা একট বিরাট ব্যাপার ছিল অসদাচরণের। কারণ, আমাদের সবারই জবাবদিহিতা থাকা উচিত। বোর্ড প্রধান হিসেবে আমিও দায়বদ্ধ। কিছু নিয়মের বাধ্য তো আমাদের হতে হবে। সেটাও ভঙ্গ করা হয়েছে গুরুতরভাবে।

সেক্ষেত্রে বলা যায়, দুটি ব্যাপার হয়েছে এখানে- মিসকন্ডাক্ট উইথ আ প্লেয়ার ও মিসকন্ডাক্ট অ্যাজ আ এমপ্লয়ি। দুটিই আমরা বিবেচনায় নিয়েছি ও তাকে খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

বিসিবি সভাপতি সরাসরি কথা বলেননি হাথুরুসিংহের সঙ্গে। সভাপতির পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাহী বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন বিদায়ী কোচের কাছে।

বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগে হাথুরুসিংহের কঠোর সমালোচকদের একজন ছিলেন ফারুক। তবে বোর্ড প্রধান হিসেবে এই সিদ্ধান্তে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কোনো প্রভাব পড়েনি বলেই দাবি তার।

ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি না, কথাটা ওভাবে আমি বলিনি। আমি বলেছিলাম, কোচ হিসেবে তার খুব বেশি কিছু দেওয়ার নেই। এটা ছিল একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে আমার মূল্যায়ন। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার নয়। কোচ হিসেবে তার যে সামর্থ্য, সেটাতে আমি খুব বেশি সন্তুষ্ট ছিলাম না। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ এখানে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি।

হাথুরুসিংহের জায়গায় ফিল সিমন্সকে নতুন কোচ নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। আপাতত সামনেই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত মেয়াদ এই ক্যারিবিয়ান কোচের।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!